শামীম আখতার, বিভাগীয় প্রধান (খুলনা) যশোর জেলার ডিবি পুলিশ অভিযান চালিয়ে ঝিকরগাছায় খুনসহ ডাকাতি এবং যশোর শহরের ৩টি দোকানে চুরির ঘটনায় ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে। এছাড়াও লুন্ঠিত ও চোরাইকৃত ১২’লক্ষ টাকার মালামাল উদ্ধার করাসহ ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত ট্রাকটি জব্দ করেছে। ২৩ আগস্ট দিনব্যাপী অভিযান পরিচালনা করে কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী, বরিশাল, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে ডাকাত দলকে গ্রেফতার করে।
গত ১৩ আগষ্ট দিবাগত রাতে ঝিকরগাছা বাজারের ৪ জন নৈশ প্রহরীকে মুখে স্কচটেপ পেঁচিয়ে ও হাত বেঁধে কৃষ্ণনগর রাজাপট্টি “ঝিকরগাছা অটো ইলেক্ট্রনিক্যাল ওয়ার্কসপ” নামক দোকানের তালা কেটে দোকান থেকে প্রায় ২’লক্ষ ৫০ হাজার টাকার ব্যাটারী লুন্ঠন করে নিয়ে যায়। অনুমান ৩০ থেকে ৪০ মিনিট ডাকাতি সংঘটনের পর ডাকাতরা চলে গেলে মুখে স্কচটেপ পেঁচানো নৈশ প্রহরীদের মধ্যে ঝিকরগাছা থানার বেড়েলা গ্রামের মৃত তুরফান মোড়লের ছেলে আব্দুস সামাদ (৭৫) অচেতন হয়ে পরলে তার মুখের স্কচটেপ খুলে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষনা করে। ঝিকরগাছার খুনসহ ডাকাতি সংঘটনের আগে ও পরে যশোর শহরের উপশহরের যুব উন্নয়ন গেট সংলগ্ন জনৈক টিটো সিকদারের “সিকদার মটরস” নামক পার্টসের দোকান থেকে ৩৭’লক্ষ ২০ হাজার টাকার মালামাল এবং বকচর এলাকায় মেসার্স কর্নফুলী ট্রেডার্স”নামক টায়ারের দোকান থেকে ১৬’লক্ষ ৭২ হাজার ৫০০ টাকার মালামাল তালা কেঁটে চুরি করে নিয়ে যায়। এছাড়াও ৩ আগস্ট দিবাগত রাতে মুড়লী মোড়ে”খাদিজা এন্টারপ্রাইজ” নামক একটি লুব্রিকেনের দোকানের তালা কেঁটে ৭’লক্ষ ৯০ হাজার ২০০ টাকার মালামাল চুরি করে নিয়ে পালিয়ে যায়।
খুনসহ ডাকাতি ও চুরি সংঘটনের ঘটনায় ১৪ আগস্ট ঝিকরগাছা থানায় একটি মামলা হয় যার মামলা নং-১২ এবং যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় ২২ আগস্ট পৃথক ঘটনায় দুটি মামলা হয়। যার মামলা নং-৫৪, ৫৫ এবং ২৩ আগস্ট আরও একটি মামলা হয়। যার মামলা নং- ৫৯।
খুনসহ ডাকাতি একই দিনে ৩ টি দোকানে ডাকাতি ও চুরির ঘটনা সমুহ স্পর্শকাতর ও লোমহর্ষক হওয়ায় জেলার পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার, বিপিএম (বার), পিপিএম নির্দেশে মামলাগুলোর তদন্তভার জেলা গোয়েন্দা শাখার উপর ন্যাস্ত করেন।
যশোর জেলার পুলিশ সুপারের দিক-নির্দেশনায় ওসি ডিবি রুপন কুমার সরকার, পিপিএম এর নেতৃত্বে ডিবি’র এলআইসি টিমের এসআই মফিজুল ইসলাম, পিপিএম, এসআই শফি আহম্মেদ রিয়েল, এসআই শামীম হোসেনদের সমন্বয়ে একটি টিম তদন্তের মাধ্যমে তথ্য প্রযুক্তি ও গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ডাকাত দলকে সনাক্তপূর্বক গোপন তথ্যের ভিত্তিতে কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী, বরিশাল, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ জেলায় অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানের অবশেষে ২৩ আগস্ট বিকালে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ইতোপূর্বে খুনসহ ডাকাতির লুন্ঠিত মালামাল ও চুরির মালামালের ভাগ-বাঁটোয়ারা করার জন্যে একত্রিত হলে বরিশাল মেট্রোপলিটনের কোতয়ালী মডেল থানাধীন বরিশাল-ঝালকাঠি মহাসড়কের পাশে একটি পেট্রোল পাম্প থেকে ডাকাতি সংঘটনের কাজে ব্যবহৃত ট্রাক-ঢাকা মেট্রো-ড-১৪-৩৩১৪ ট্রাকসহ ট্রাকে থাকা ৮ জন ডাকাতকে হাতে নাতে গ্রেফতার করা হয়।
পরবর্তীতে তাদের স্বীকারোক্তি মতে বরিশাল ও ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে লুন্ঠিত ও চোরাই মালামালের মধ্যে ১২’লক্ষ ২০হাজার টাকা মূল্যের মালামাল উদ্ধার, ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত ট্রাক, স্কচটেপ, মোবাইল ফোন জব্দ করেন।
গ্রেফতারকৃত সংঘবদ্ধ ডাকাতরা হলেন, বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ থানার উত্তমপুর গ্রামের ইউনুস এর ছেলে শাওন ইসলাম হরফে সোহাগ (২২), পটুয়াখালী জেলার সদর থানার শেখহাটি গ্রামের লোকমান মৃধার ছেলে মাহাতাব মৃধা (২০), একই গ্রামের সিরাজ খাঁর ছেলে রিয়াজ খাঁ (৪২), বরিশাল বাকেরগঞ্জ থানার বিহারীপুর গ্রামের মৃত কাঞ্চন তালুকদার এর ছেলে শামীম তালুকদার (৩৭), নন্দপাড়া গ্রামের কবির মোল্লার ছেলে মাসুম মোল্লা (২৭), বীরাদ্দন গ্রামের ফজলু হাওলাদারের ছেলে সবুজ হাওলাদার (২০), বিহারীপুর গ্রামের ইব্রাহীম খান এর ছেলে শহিদুল খান (৪২), পটুয়াখালী সদর থানার বদরপুর গ্রামের শাহজাহান এর ছেলে সোহাগ সিকদার (২৮), ডাকাতি ও চোরাই পন্য ক্রয়-বিক্রয়কারী ডুমুরিয়া উপজেলার শরাফপুর গ্রামের ইমদাদুল শেখের ছেলে রাশেদুল ইসলাম রাসেল (২৭), বাগেরহাট জেলার মোড়লগঞ্জ থানার জিবদাড়া গ্রামের মৃত সোবহান খান এর ছেলে এনামুল খান (২৮), বরিশালের বাকেরগঞ্জ থানার শ্যামপুর গ্রামের মোক্তার সিকদারের ছেলে শিপন সিকদার (২৮) ও বানারিপাড়া থানার চাউলকাঠি গ্রামের আশরাফ আলীর ছেলে এমাদুল ইসলাম (৩৪)। বর্তমানে ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ থানার পূর্ববন্ধ ডাকপাড়ার বাসিন্দা।
উল্লেখ্য যে, আসামী (১) রিয়াজের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জেলায় ৫টা ডাকাতি, চুরি মামলা, সোহাগের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জেলায় ৪টা ডাকাতি ও চুরি মামলা, মাহাতাবের বিরুদ্ধে ২টা ডাকাতি মামলা এবং রাসেলের বিরুদ্ধে ২টা চুরি মামলা রয়েছে।
ঝিকরগাছা ডাকাতির লুণ্ঠিত মালামালের মধ্যে ২ লক্ষ ২০ হাজার টাকা মূল্যের ১০টি ব্যাটারী উদ্ধার। যশোর কোতয়ালী থানার উপশহরের ঘটনার ৩’লক্ষ ৪ হাজার ৭২০ টাকার লুব্রিকেন সরঞ্জাম উদ্ধার, বকচরে ঘটনার ৫ লক্ষ ৪৬ হাজার টাকা মূল্যের
২১টি টায়ার এবং মুড়লীর ঘটনার ১’লক্ষ ৮৪ হাজার ২৫০ টাকার লুব্রিকেন উদ্ধার এবং ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত ১টি ট্রাক জব্দ, ডাকাতি ও হত্যা কাজে ব্যবহৃত-স্কচটেপ। এছাড়াও ডাকাতদের ব্যবহৃত ১২টি মোবাইল ফোন জব্দ করেছেন।
যশোরের পুলিশ সুপার ২৪ আগস্ট (বুধবার) সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।