May 19, 2024, 10:27 am

প্রতিবন্ধী শিশু মুরাদের পাশে দাঁড়ালেন মানবিক উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম এম আরাফাত হোসেন

শামীম আখতার, বিভাগীয় প্রধান (খুলনা) কেশবপুরে হতদরিদ্র পরিবারের ৯ বছর বয়সের প্রতিবন্ধী শিশু মুরাদ হোসেন বাবুর পাশে দাড়িয়ে একটি হুইলচেয়ার প্রদান করে মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম এম আরাফাত হোসেন।
২৪ জানুয়ারী (সোমবার) দুপুরে উপজেলা পরিষদ কার্যালয় চত্তরে ওই প্রতিবন্ধীকে ১টি হুইলচেয়ার প্রদান করা হয়।

জানা গেছে, উপজেলার ১১নং হাসানপুর ইউনিয়নের বুড়িহাটি গ্রামের দিনমজুর জাকির হোসেনের ছেলে মুরাদ হোসেন বাবু (৯) জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। জন্মের পর থেকেই প্রতিবন্ধী শিশুকে নিয়ে বিপাকে পড়েছেন পিতামাতা। শিশু মুরাদের হাত-পা চিকন ও বাঁকা হওয়ায় হামাগুড়ি দিয়ে চলাফেরা করতে পারেনা। একেতো শারীরিক প্রতিবন্ধী তারপরও কথা বলতে পারেনা সে। দারিদ্র পিতা পরের ক্ষেতে কামলা খেটে জীবিকা নির্বাহ করে। অল্প উপার্জনের মধ্যে দিয়ে সংসার চলে অভাব-অনাটনে। দ্রারিদ্রতার কষাঘাতে দিনমজুর পিতার পক্ষে প্রতিবন্ধী পুত্রের জন্য একটি হুইল চেয়ার কিনে দেওয়া সম্ভব ছিলোনা। জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেনী-পেশার মানুষের কাছে প্রতিবন্ধী ছেলের জন্য অসহায় পিতামাতা একটি হুইল চেয়ারের সহযোগিতা চেয়েও সেটি পাইনি, পেয়েছে শুধুই আশ্বাস। শুধুমাত্র একটি হুইল চেয়ার হলেই প্রতিবন্ধী মুরাদের জীবনের অনেকটা কষ্ট কমে যাবে। ছেলের চলাফেরা করার জন্য একটি হুইল চেয়ারের আকুতি জানান প্রতিবন্ধীর পরিবার।

এমন একটি নির্মম কাহিনী ন্যাশনাল প্রেস সোসাইটি, গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সংস্থা কেশবপুর উপজেলা শাখার সভাপতির শামীম আখতার মুকুল এর কাছে জানান। শিশু প্রতিবন্ধীর বিষয়টি নিয়ে রবিবার বিকালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম এম আরাফাত হোসেনের কাছে বিনয়ের সহিত একটি হুইলচেয়ারের জন্য জানান এবং লিখিত আবেদন করেন। বিষয়টি হৃদয় বিদারক হওয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে এমন একজন অসহায় প্রতিবন্ধীর একটি হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করতে ইচ্ছা পোষণ করেন। এবং অসহায় হতদরিদ্র্য পরিবারকে তার কার্যালয়ে নিয়ে আসতে বলেন। তারই প্রেক্ষিতে ২৪ জানুয়ারী (সোমবার) সকালে উপজেলার নির্বাহী অফিসার এম এম আরাফাত হোসেন প্রতিবন্ধীর মায়ের উপস্থিতিতে ওই হতদরিদ্র পরিবারের হাতে একটি হুইলচেয়ার তুলে দেন এবং প্রতিবন্ধীর সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেনও তিনি।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহামদ রিজিবুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাচন অফিসার মোঃ বজলুর রশিদ, ন্যাশনাল প্রেস সোসাইটি, গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সংস্থা কেশবপুর উপজেলার শাখার সভাপতি সাংবাদিক শামীম আখতার মুকুল, বেসরকারী সংস্থা ওয়ার্ডের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ আকমাল হোসেন প্রমূখ।

হুইলচেয়ার পেয়ে প্রতিবন্ধী শিশু মুরাদ এর মাতা মুসলিমা বেগম হাস্যোজ্জল মুখে বলেন, জন্ম থেকেই আমার ছেলে শারীরিক প্রতিবন্ধী। এমনকি কথা বলতে পারে না। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আমার ছেলে প্রতিবন্ধী হওয়ায় স্বামী-স্ত্রী মিলে তার কখনো অযত্ন অবহেলা করেনি। ছেলে বড় হওয়ায় এখন অনেক কষ্ট হয় তাকে নিয়ে চলাফেরা করতে। সংসারে অভাব অনাটনের কারণে তাকে হুইলচেয়ার কিনে দেওয়ার মতো সামর্থ্য আমাদের ছিলো না।
হুইলচেয়ারটি পেয়ে এখন থেকে ছেলে ও আমাদের অনেকটা কষ্ট কম হবে। আমার ছেলেকে হুইলচেয়ার দিয়ে সহায়তা করায় সারাটি জীবন ইউএনও স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞ প্রকাশ করেন। তারই পাশাপাশি স্যার সহ গণমাধ্যম ও মানবাধিকার কর্মীদের জন্য সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।

এ ব্যাপারে কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম এম আরাফাত হোসেন বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধী শিশু মুরাদ এর বিষয়টি গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সংস্থার সভাপতির মাধ্যমে আমার দপ্তরে লিখিত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবন্ধী মুরাদকে ১টি হুইলচেয়ার প্রদান করা হয়েছে। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে শিশু প্রতিবন্ধীকে হুইল চেয়ার দিতে পেরে নিজেকে ধন্য বলে মনে করছি। আমি তার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি। আত্মমানবতার সেবায় প্রতিবন্ধী ও অসহায় মানুষের জন্য আগামীতেও উপজেলা প্রশাসনের এমন ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।

এই বিভাগের আরও খবর


ফেসবুকে আমরা