April 26, 2024, 12:59 am

তদন্তে দোষী প্রমানিত করোনার টাকা আত্মসাৎ করেও বহাল তবিয়তে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা!

স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহ-
করোনাকালীন সময়ে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীদের বরাদ্দের টাকা ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে আত্মসাৎ করেও বহাল তবিয়তে আছেন কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শামীমা শিরিন (লুবনা)। তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটির তদন্তে টাকা আত্মসাতের ঘটনা প্রমানিত হলেও ৭ মাসের মধ্যে স্বাস্থ্য বিভাগ তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেনি বলে অভিযোগ উঠেছে। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, করোনাকালীন সময়ে আবাসিক হোটেলে থাকা দেখিয়ে ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে ৫৭ হাজার ৬০০ টাকা ও হোটেলে খাওয়া বাবদ ৯৬ হাজার টাকা তুলে নেন ডা. শামীমা শিরিন (লুবনা)। এই নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হলে স্বাস্থ্য বিভাগে হৈচৈ পড়ে যায়। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শামীম কবিরকে প্রধান করে গঠিত হয় তদন্ত কমিটি। ২০২০ সালের ২৭ ডিসেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডাঃ সেলিনা বেগমের দপ্তরে পাঠানো হয়। ২০২১ সালের ৫ জানুয়ারী ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সিভিল সার্জন অফিস প্রতিবেদনটি স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের পরিচালক (প্রশাসন) ডাঃ হাসান ইমামের কাছে পাঠিয়ে দেন। কিছু সংশোধন ও সংযুক্তির জন্য পরিচালকের (প্রশাসন) দপ্তর থেকে তদন্ত প্রতিবেদনটি ফেরৎ পাঠিয়ে দ্বিতীয় দফা তদন্ত প্রতিবেদনটি পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। সে মোতাবেক গত ৪ এপ্রিল ২৫৩ নং স্মারকে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শামীমা শিরিন লুবনার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দফায় প্রমানাদিসহ তদন্ত প্রতিবেদনটি পাঠানো হয়েছে। দুই মাসের বেশি সময় ধরে তদন্ত প্রতিবেদনটি স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের পরিচালক (প্রশাসন) দপ্তরে পড়ে আছে। তদন্ত কমিটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সদস্য জানান, আমরা সাধ্যমতো তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করেছি। আবাসিক হোটেল ও খাবার হোটেলের মালিক ও ম্যানেজারদের সঙ্গে কথা বলে টাকা আত্মসাতের সত্যতা পেয়েছি। করোনাকালীন সময়ে রহমানিয়া হোটেলের ভাড়া করা কক্ষগুলো বন্ধ ছিল। সেখানে কোন ডাক্তার নার্স থাকেনি ঠিকই কিন্তু ভাড়া দেওয়া হয়েছে। তবে খাবার হোটেলে কেও খাবার খাননি। রহমানিয়া হোটেলে রান্না বা খাবার বিক্রি করা হয় না বলে তদন্তে প্রমানিত হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রধান ঝিনাইদহ সদর উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শামীম কবির জানান, আমরা তদন্তে যা পেয়েছি তাই প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছি। একই কথা জানান কমিটির আরেক সদস্য ডাঃ মিথিলা ইসলাম। বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডাঃ সেলিনা বেগম জানান, প্রথমে আরা যে প্রতিবেদন পাঠিয়েছিলাম তা ফেরৎ দিয়ে কিছুটা সংযুক্তি জুড়ে দিয়েছিল পরিচালকের দপ্তর। দ্বিতীয় দফায় আমরা আবার প্রতিবদেন পাঠিয়েছি। এখন ব্যবস্থা গ্রহনের দায়িত্ব স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের পরিচালক (প্রশাসন) দপ্তরের। এ বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শামীমা শিরিন লুবনা আগেই জানিয়েছিলেন, হোটেলে থাকা নিয়ে রহমানিয়া হোটেলের ম্যানেজার সঠিক তথ্য দেন নি। ডাক্তাররা রোস্টার ডিউটি করেছেন। ওই সময় তারা হোটেলটিতে ছিলেন। কোন টাকা আত্মসাৎ হয়নি। তবে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক মাঝহারুল ইসলাম জানান, শুরু থেকেই তিনি কোভিড-১৯ এ দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি কখনো হোটেলে থাকেননি। আরেক চিকিৎসক আর্জুবান নেছা বলেন, তিনি বিভিন্ন সময় হোটেলে থেকেছেন। কিন্তু তারিখ বা কোন মাসে থেকেছেন সেটা তিনি জানাতে পারেননি। তবে তিনি প্রণোদনার টাকা পাননি। এছাড়া হাসপাতালে নমুনা সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত স্টাফরাও কোন প্রকার সরকারী প্রণোদনার টাকা পাননি বলে জানিয়েছিলেন।
উল্লেখ্য ২০২০ সালের ৫ জুলাই কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শামীমা শিরিন স্বাক্ষরিত পরিচালক (অর্থ), স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো স্বারক নং- উঃজেঃস্বঃকমঃ/কালীঃ/ঝিনাইঃ/২০২০/৪৭৯ চিঠিতে উল্লেখ করেন, একই বছরের জুন মাসের ৬ তারিখ থেকে ৬ জন চিকিৎসক, নার্স ৬ জন ও অন্যান্য ১২ জন স্টাফ ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের রহমানিয়া আবাসিক হোটেলে থাকা বাবদ ৫৭ হাজার ৬০০ এবং খাওয়া বাবদ ৯৬ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। এছাড়া এপ্রিল মাসের ১ তারিখ থেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বাবদ ৬৬ হাজার টাকা খরচের কথা বলা হয়। একই তারিখে পাঠানো স্বারক নং- উঃজেঃস্বঃকমঃ/কালীঃ/ঝিনাইঃ/২০২০/৪৭৮ চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, কোভিড-১৯ পরিচালনার জন্য ৩ লাখ পেয়েছে বরাদ্দ কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।

এই বিভাগের আরও খবর


ফেসবুকে আমরা