April 28, 2024, 2:51 am

বড়লোকের পেটে লাথি মাইরেন না” 🔸ওদের গরিবের রক্ত চুষে খেতে দিন

মীর আব্দুল আলীম :বড়লোকের পেটে লাথি মাইরেন না। করতে দেন ভাই, করতে দেন! এটা হলো ভাগ্যরে
ভাই!বড়লোকদের ব্যবসা বলে কথা। গরিবের রক্ত চুষে খেতে দেন; ওদের
গাড়ি-বাড়ি, কোটি কোটি টাকার মালিক হতে দেন”। সিন্ডিকেটওয়ালাদের কথা বলতে
গিয়ে রাজধানীর শান্তিনগর বাজারে আসা এক বয়স্ক ক্রেতা এভাবেই তাঁর মনের
খেদ ঝাড়েন। বিষয়টি হয়তো এমনই। সিন্ডিকেট বন্ধ হলে বড়লোকের পেটেই লাথি
পড়বে। গরিব বেঁচে যাবে। একটু শান্তিতে থাকবে। গরিবের এ শান্তি চায় কে?
প্রশ্ন হলো, সিন্ডিকেটতো হচ্ছে অনেক দিন ধরে, বন্ধ হচ্ছে না কেন? ব্যর্থ
মন্ত্রনালয়, ব্যর্থ সরকার। ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী
পদত্যাগ করেনি কিন্তু। উপরন্তু কম খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। যা ছিল জনগণের
কাটা ঘায়ে নুনের ছিটার মত।
বাজারে এখন চালের কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে সরকারের আমলারা চাল আমদানির
সুপারিশ করেন। একই সঙ্গে তাঁরা বিনা শুল্কে এই আমদানির প্রস্তাব করেন
বলে। এতে লাভ কার। আমদানী কিন্তু বড় বড় সিন্ডিকেট ওয়ালারাই করে।
সিন্ডিকেটওয়ালাদের আয়ের আরেকটি উৎসব বটে! শুল্ক কমলে মজা আমদানীওয়ালাদের।
আমদানিতো ওরাই করবেন। করপোরেট হাউসরাতো টাকা নিয়ে বসে আছে। তাদের হাত
অনেক বড়। ঘুরে ফিরে বল ওদের কোটেই। বড়লোক আরো বড় হওয়ার ফন্দি। ডিম সংকট
করো আমদানী, চাল সংকট করো আমদানী, আলু পিয়াজ সংকট করো আমদানী। ইত্যাদি
ইত্যাদি। ঘুরে ফিরে ঐ সিন্ডেকেট ওয়ালারাই সব। শুল্ক কমালে ওদেরই লাভ।
জনগনের লাভ শুণ্য।
একদিকে কৃষিপণ্য উৎপাদন করে কৃষকরা হচ্ছে বঞ্চিত। মধ্যশত্যভোগীরা টাকার
পাহাড় গড়ছে। শেষে যারা কৃষিপণ্য কিনেন তার হচ্ছেন মহা বঞ্চিত। ১০/১২
টাকার আলু ৭০/৮০ টাকা। কৃষক পেয়েছেন ঐ ১০/১২ টাকা। সিন্ডিকেট ওয়ালারা
পেয়েছেন ৬০/৭০ টাকা। এক কেজি আলুতে শেষ ভোক্তা মানে ক্রেতা ঠকেছেন কম করে
৫০/৬০ টাকা। হিসাবটা একটু সিলিয়ে নিন। পেঁয়াজ নয় ধানসহ প্রতিটি কৃষি
পণ্যের ক্ষেত্রে একদিকে কৃষকদের বঞ্চিত করা হচ্ছে অন্যদিকে জনগণের উপর
বর্ধিত দামের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। মধ্যস্বত্বভোগীদের সহায়তায়
কোটিপতিদের সিন্ডিকেট হাজার কোটি টাকা জনগণের পকেট থেকে ইতোমধ্যে হাতিয়ে
নিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন এবারের পেঁয়াজ সঙ্কট থেকে এই অশুভ শক্তি ৩
হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এভাবে ডিম, তেল, মরিচ, পিয়াজসহ সব পণ্যের
বাজার অস্বাভাবিক করে সিন্ডিকেট ওয়ালারা শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
এদিবে বাড়তি দামে পণ্য কিতে গিয়ে গরিব দিনদিন গরিব হচ্ছে।
এবার আসা যাক সিন্ডিকেট কারা করে? ব্যাবসায়ীরা। সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী কারা?
অবশ্যই ওনারা রাস্তার ব্যবসায়ী নন; নন ফুটপাতের ব্যবসায়ী, কিংবা কোন ছোট
দোকানী। পাইকারী বিক্রেতাও সিন্ডিকেট করে না কিংবা করতে পারে না।
সিন্ডিকেট করতে কত হাজার হাজার কোটি টাকা লাগে। ডিলার-ডিস্ট্রিবিউটরদের ঐ
পরিমান টাকা থাকে না। আবার বাজার নিয়ন্ত্রনের কৈমলও তাদের থাতে থাকে না।
এসব ব্যবসায়ীর পক্ষে সিন্ডিকেট করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নায়। ওরা
সিন্ডিকেট করার সাহসও পায় না। ওদের বড় জেক থাকে না। তাহলে বুঝা গেল
সিন্ডিকেট করতে সাহস লাগে, টাকা লাগে, উপরওয়ালা লাগে। এর সবটাই আছে
কর্পোরেট কোম্পানীগুলোতে। এরাই এদেশের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। তবে সবাই
নন। যারা করেন তাদের সবাই চিনে, জানে। কিন্তু তাঁদের ব্যপারে আমলা,
মন্ত্রীরাও মুখ খোলে না। যত দোষ নন্দ ঘোষের।
সিন্ডিকেটেরসাথে প্রত্যক্ষ পরক্ষভাবে রাজনৈতিক ব্যক্তিরা এতে যুক্ত থাকেন
আবার প্রয়োজেনে সিন্ডিকেটওয়ালারা তাঁদের যুক্ত করে নেন। এতে তদের পথঘাট
একদম পরিস্কার হয়ে যায়। সিন্ডিকেটের মধ্যে শ্রেণিভেদ রয়েছে। বড় বড়, এমনকি
দেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী, ক্ষমতাধর, বিত্তশালী নানা ধরনের সিন্ডিকেটের
কথা এখন প্রকাশ্যেই উচ্চারিত হচ্ছে। এদের এখন আমরা অনেকেই চিনি। চিসলে কি
হবে চিনির দামতো কমেনা। এইতে সেদিনের ৩০ টাকার চিনি এখন ১৬০/১৭০ টাকা।
ভাবা কি যায়। যে দেশে আখ থেকে চিনি হয় সেদেশে চিনির দাম াাকাঁশ ছোঁয়া।
এখন দেশের এমন কোনো ব্যবসা নেই, যেখানে একচেটিয়া কারবার করতে ব্যবসায়ীরা
সিন্ডিকেটের ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছেন না। যদি বলি সুই, সুতা, পাটা-পুতা
থেকে কোনটা না?
সিন্ডিকেটওয়ালাদের কারসাজিতে হঠাৎ করে অস্বাভাবিকভাবে সব জিনিসের দাম
বেড়েছে। কিন্তু মানুষের আয় বাড়েনি, কমেছে। আইএলও বলছে, ১০ বছরে এশিয়া ও
প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি হারে প্রকৃত নিম্নতম মজুরি কমেছে
বাংলাদেশে। চারজনের পরিবারের খাদ্য খরচ দ্বিগুণ হয়েছে। শ্রমিক-মেহনতি
মানুষ-নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্তের সংসার চলছে না। মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত।
খাদ্য নিরাপত্তা জন্য, গণবণ্টন ব্যবস্থা, রেশনিং ব্যবস্থা, ন্যায্য
মূল্যের দোকান, উৎপাদন ও ক্রেতা সমবায় গড়ে তোলা জরুরী হয়ে পরেছে। গণমুখী
চিকিৎসা, সবার জন্য স্বাস্থ্যের নিরাপত্তা, সার্বজনীন শিক্ষা ও গণপরিবহন
ব্যবস্থাসহ জ্বালানি, বিদ্যুৎ, পানির সহজলভ্যতাও জরুরী।
চালবাজি করতে করতে চালবাজরাতো এখন বেশ পরঙ্গম। অন্যসব পণ্যের দাম এতো
বেড়েছে যে চালের দাম নিয়ে কথা এখন কম হয়। চালবাজরা হঠাৎ করেই চালের সংকট
তৈরি করে। দাম একেবারেই অবিশ্বাস্য। সঠিকভাবে চালের গুদামগুলো
পর্যবেক্ষণ, চালের বড় ব্যবসায়ীদের জিজ্ঞাসাবাদ করলেই থলের বিড়াল বের হয়ে
যাবে। বাস্তবেই চালের বাজারে সীমাহীন অস্থিরতা চলছে। কোনোভাবেই যেন
নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। কয়েক দফা শুল্ক কমিয়ে সরকারি ও বেসরকারি
পর্যায়ে কয়েক লাখ টন চাল আমদানি করা হলেও বাজারে তার বিন্দুমাত্র প্রভাব
নেই। এতে প্রভাবশালী চাল ব্যবসায়ীরাই লাভবান হয়েছেন।
বিশ্ববাজারে কিন্তু চালের দাম বাড়েনি। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে,
চালের পর্যাপ্ত মজুদ আছে। বিপুল পরিমাণ চাল সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে
আমদানি করা হয়েছে। আরো আমদানি করা হচ্ছে। দেশে চালের কোনো রকম সংকট নেই।
তাহলে চালের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি কোনোভাবেই রোধ করা যাচ্ছে না কেন? অনেকটা
রহস্যজনকভাবে চালের দাম বেড়েছে। ২৫ টাকার চাল লাফাতে লাফাতে কোথায় উঠেছে?
চালের দাম কমানোর জন্য সরকার মরিয়া। এর অংশ হিসেবে চালের আমদানি শুল্ক ১৮
শতাংশ কমানোও হয়। ফলে প্রতিকেজি চালের আমদানি খরচ ছয় টাকা কমেছে। কিন্তু
তাতেও চালের দাম না কমে উল্টো অনেক বেড়েছে।
বর্তমানে বিশ্বে সবচেয়ে সস্তায় চাল বিক্রি করছে ভিয়েতনাম। প্রশ্ন হচ্ছে,
চালের দাম এভাবে বাড়ছে কেন? এই দাম বাড়া কি স্বাভাবিক না অস্বাভাবিক?
সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে, হাওরে বোরো ধানের আবাদ
নষ্ট হয়েছে। এ কারণে চালের দাম বেড়েছে। সরকারের তরফ থেকে চালের দাম বাড়ার
খবরকে অস্বীকার করা হয়নি। তবে আমরা মনে করি, যথেষ্ট পরিমাণ চাল মজুদ
থাকলে হাওরের দুর্যোগের প্রভাব মোকাবিলা করা সরকারের পক্ষে কঠিন হতো না।
চালের পর্যাপ্ত মজুদ না থাকার জন্য বিশেষজ্ঞরা দায়ী করছেন খাদ্য
মন্ত্রণালয়কে। অনেকে মনে করছেন, খাদ্যমন্ত্রী তার দায়িত্ব পালনে যে
ব্যর্থতা দেখিয়েছেন তাতে তার পদত্যাগ করা উচিত। দেশে ভোক্তাস্বার্থ বলে
কিছু নেই। যদি থাকত তাহলে চালের বাজারে এমন অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হতো না।
মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের এমনিতেই কোনো ছলের অভাব হয় না। চালের ক্ষেত্রেও
নানা কারণ তারা সামনে এনেছে। এবার চালের দাম অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে
গেছে। বাজারে মোটা চালই এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজিতে। সরু চালের কেজি
৭০/৮০ টাকা ছাড়িয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে মোটা
চালের দাম রেকর্ড ভাঙায় নিম্ন আয়ের মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে।
এ দেশে চালের দাম বাড়ে, ডালের দাম বাড়ে, বেগুন, তেল, লবণ, চিনির দাম
বাড়ে। কারণে বাড়ে, অকারণে বাড়ে। এখন চালের দাম বেড়ে তো আকাশ ছুঁয়েছে।
টিসিবির তথ্যমতে, গত এক বছরে দেশের বাজারে মোটা চালের দাম বেড়েছে ৪২.১৯
শতাংশ। মোটা চালের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সরু চালের দামও। চালের বাজার
বলতে গেলে বেসামাল হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে মোটা চালের দাম বেশি বেড়েছে। সরু
চালের দাম বাড়লে উচ্চবিত্তের তেমন সমস্যা হয় না, যত আপদ বিত্তহীনদের ওপর।
এভাবে কেন বাড়ল চালের দাম? এর অনেক ব্যাখ্যা আছে। যে যার মতো করে
ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। চাহিদা অনুপাতে চালের জোগান যে কম সে কথা বলা যাচ্ছে
না। বাজারে চাল আছে। কেউ কেউ মনে করছেন, চালের স্বাভাবিক দাম বাড়ার পেছনে
কারসাজি রয়েছে। চাল সিন্ডেকেট চক্রের হাতেই চালের মজুদ রয়েছে। এরাই
অব্যাহতভাবে চালের দাম বাড়িয়ে চলেছে। এদিকে দেশে চালের দাম অব্যাহত
বৃদ্ধির কারণ স্পষ্ট করতে পারেননি খাদ্যমন্ত্রী। তবে চাল মিল মালিক
সমিতির দায়িত্বশীলরা জানিয়েছেন, মিলারদের চালের মজুদ শেষ হয়ে যাওয়ায় দফায়
দফায় বাড়ছে চালের মূল্য।
আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের
(ইফপ্রি) ২০১৫ সালের এক জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশের মানুষের গড়ে
খাদ্যশক্তির (ক্যালরি) ৬৫ শতাংশ আসে চাল বা ভাত থেকে। আর প্রতিদিন তারা
খাবারের পেছনে যে অর্থ ব্যয় করে, তার ২৭ শতাংশ যায় চাল কিনতে। সংস্থাটির
পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, দাম বাড়লে গরিব মানুষ ভাত খাওয়া কমিয়ে দিতে হয়।
পত্রিকার খবরে জানা যায়, আমাদের দেশেই নাকি চালের দাম সবচেয়ে বেশি। চালের
মূল্য বেশি থাকা দেশগুলোর মধ্যে আমাদের পরের স্থানই নাকি দখল করে আছে
পাকিস্তান, যা বাংলাদেশের চেয়ে ১০ টাকা কম। বর্তমানে বিশ্বে সবচেয়ে
সস্তায় চাল বিক্রি করছে ভিয়েতনাম। সেখানে চালের দাম গড়ে প্রতি কেজি ৩৩
টাকা ৬২ পয়সা। প্রতিবেশী দেশ ভারতে প্রতি কেজি চালের দাম ৩৪ টাকা ৪৩
পয়সা, থাইল্যান্ডে ৩৭ টাকা ৮১ পয়সা ও পাকিস্তানে ৩৮ টাকা ৫৪ পয়সা। সরকারি
হিসাবেই দেশে প্রতি কেজি চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৮ টাকায়।
আমরা মনে করি, বিত্তহীনদের ব্যাপারে সরকারকে আরো মনোযোগী হতে হবে। বাজারে
কীভাবে চালের দাম কমিয়ে আনা যায় সেদিকেই সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের
নজর দিতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন অতি মুনাফাখোর লোভী ব্যবসায়ী ও মিল
মালিকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। মনে রাখতে হবে, এ
দেশের মানুষের প্রধান খাদ্য ভাত। ভাতনির্ভর দেশের মানুষ যদি চাহিদা মতো
চাল কিনতে না পারে, তবে এর চেয়ে দুঃখজনক ঘটনা আর কী হতে পারে?
আমরা জানি, এসব পরিস্থিতি থেকে ভোক্তাকে রক্ষা করতে সরকারের একাধিক বাজার
তদারকি সংস্থা কাজ করছে। এর মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তদারকি সেল,
মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, কৃষি
মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, বিএসটিআই, খাদ্য
মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশন, জেলা
প্রশাসন, র‌্যাবসহ সরকারের অন্যসব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। এছাড়া এসব
সংস্থা নিজস্ব আইনে বাজার তদারকি করছে। তারপরও বাজারে কোনো ধরনের শৃঙ্খলা
আনা সম্ভব হয়নি। তাহলে কি গোড়ায় গলদ? এদেশের সিন্ডিকেটওয়ালারা বড়ই
প্রভাবশালী। সরকারের লোকজনেরসাথে তাঁদের সখ্যতা অনেক। তাই হয়তো তাঁদের
রোধ করা যায় না কিংব রোধ করা হয় না। এদেশের অসাধু ব্যবসায়ীরা চাইলে
ভোগ্যপণ্যের বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করতে পারে বা পণ্যের সরবরাহ কমাতে
পারে। কৌশল করে তারা দাম কমাতে পারে, আবার বাড়াতেও পারে। এখানে সরকারের
কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।
দেশের একটি দৈনিকের দেখলাম, কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব)
সভাপতি বলেছেন, এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীর কারসাজিতে বছরের পর বছর
ভোক্তারা ঠকছেন। সংস্থাগুলো জানে কে বা কারা পণ্যের দাম নিয়ে কারসাজি
করছে। একাধিক বার তারা সেটা চিহ্নিত করেছে। কিন্তু অসাধুদের বিরুদ্ধে
দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে পারছে না। পণ্যের গুণগত মান নিয়ন্ত্রণসহ
বাজারে সঠিক পণ্যটি সঠিক দামে বিক্রি হচ্ছে কি না তা দেখতে নিয়মিত অভিযান
পরিচালনা করতে হবে। ভেজাল খাদ্য রোধে মনিটরিং করতে হবে। বিএসটিআই
অনুমোদিত পণ্য বিক্রি হচ্ছে কিনা তা দেখতে হবে। অনিয়ম পেলে আইনের আওতায়
আনতে হবে। পণ্যমূল্য সহনীয় রাখতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পণ্যের সঠিক
চাহিদা জানতে হবে। সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক করতে হবে। তা না হলে মুক্তবাজার
অর্থনীতিতে পণ্যের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকলে দাম বাড়বে। ব্যবসায়ীরা
লাভ করবে, তবে ডাকাতি করতে পারবে না। আমাদের দেশে সুযোগ পেলেই ডাকাতি করে
ভোক্তাকে নাজেহাল করে।
বাজারে নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বমুখী দামের প্রভাব পড়েছে দেশের মূল্যস্ফীতির
হিসাবে। বেড়েছে খাদ্য মূল্যস্ফীতি। জুন মাসে এই হার দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৭৩
শতাংশে, যা প্রায় দুই অঙ্ক ছুঁই ছুঁই। এর আগে গত বছরের আগস্টে এ হার
দাঁড়িয়েছিল ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে। এরপর কমতে থাকে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার।
এখন আবার বাড়তে শুরু করেছে। এর আগে মে মাসে মূল্যস্ফীতির এ হার ছিল ৯
দশমিক ২৪ শতাংশ এবং এপ্রিলে ছিল ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ। তারও আগে ২০২২ সালের
জুন মাসে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ। জাতীয় পর্যায়ে যেমন
খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে গ্রাম ও শহর সর্বত্রই।
পুরোপুরি সিন্ডিকেটের কব্জায় চলে গেছে দেশের ভোজ্যতেল, চাল, পিয়াজসহ
নিত্য পণ্যের বাজার। ব্যবসায়ীরা একে অপরের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে কৃত্রিম সঙ্কট
তৈরি করে বাজার থেকে অতিরিক্ত মুনাফা তুলে নিচ্ছেন। চেষ্টা করলেও কিছুতেই
তা সরকার নিয়ন্ত্রনে আনতে পারছে না। সরকার সংশ্লিষ্টদের হম্বিতম্বি কোনই
কাজে আসছে না। শুধু চাল তেল নয় মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, পিয়াজ সব কিছুর দাম
এখন উর্দ্ধে। তাতে উচ্চবিত্তদের কোন সমস্যা নেই। মধ্যবিত্ত আর গরিবের
হয়েছে যত জ¦ালা।
গত ৫ বছরে জাতীয় পর্যায়ে পারিবারিক আয় বেড়েছে ৫৯ শতাংশ, আর খরচ বেড়েছে
৮৪.৫ শতাংশ। পারিবারিক ভোগ-ব্যয়ের অর্ধেকেরও বেশি প্রায় ৫৫ শতাংশ জুড়ে
রয়েছে খাদ্য। সবচেয়ে কম আয়ের পরিবারে খাদ্যের পেছনে খরচ হয় ৭২ শতাংশ,
সবচেয়ে বেশি আয়ের পরিবারে খাদ্যবহির্ভূত খাতে খরচ ৫৯ শতাংশ। যেসব
পরিবারের আয় মাঝামাঝি পর্যায়ে, খাদ্যের পেছনে মোট সংসার খরচের ৬১ থেকে ৬৫
শতাংশ ব্যয় হয় তাদের। সবচেয়ে বেশি দরিদ্র পরিবারের সঙ্গে সমাজের উঁচু
স্তররের মানুষের আয়ের বৈষম্য বেড়েছে। তবে পাঁচ বছরে দরিদ্র্র পরিবারের আয়
খানিকটা বাড়লেও ধনীদের আয় কমেছে বলে এক জরিপে উল্লেখ করা হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা নানা ফন্দি ফিকিরসহ ডলারের দাম বাড়ার অজুহাতে পণ্যমূল্য
বাড়িয়ে তাঁর মুনাফা ঠিক রাখতে পারেন। রিকশাওয়ালারা চালের দাম বাড়ার
অজুহাত দেখিয়ে ভাড়া বাড়িয়ে নিতে পারেন। কিন্তু চাকরিজীবী আইজউদ্দিনরা
তাঁদের বেতন চাইলেই বাড়াতে পারেন না। একটি পদের পেছনে যেখানে হাজার হাজার
আবেদনপত্র পড়ে, সেখানে এক চাকরি ছেড়ে অন্য চাকরিতে ঢোকার সুযোগও নেই। ফলে
একটু ভালো করে বাঁচার আশাটি আর তাঁদের পূরণ হচ্ছে না। ঢাকা মহানগরীতে
সীমিত আয়ের মানুষের বসবাসের অর্থ দাঁড়িয়েছে ‘শুধু বেঁচে থাকার জন্য বেঁচে
থাকা।’
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) হিসাবে জীবনযাত্রার ব্যয়
বেড়েছে ১১ দশমিক ৯৬ শতাংশ। বাড়তি ব্যায় সামাল দিতে পাছেনা সাধারন আয়ের
মানুষ। বাজার করতে গেলে বাড়ি ভাড়া থাকে না, সন্তানের শিক্ষার ব্যায়
মিটাতে পারেনা। অনেকে বাধ্য হয়ে উচ্চ সুতে ঋণ নিয়ে তা শোধ করতে পারছেন
না। দরিদ্র মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি সম্প্রসারিত হয়েছে,
কম দামের সরকারি চাল ও আটা কিনতে পারছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। সরকারি
চাকরিজীবীদের অনেকে রেশন পাচ্ছেন। কিন্তু কোনো রকম সুবিধাহীন ঢাকার মধ্য
আয়ের মানুষের কষ্ট শুধুই বেড়েছে। গ্রামে ফিরে যাওয়ার কোনো উপায় না থাকায়
যানজট, পানিহীনতা, জলাবদ্ধতা, গ্যাস সংকট, লোডশেডিং, ভেজাল খাবারসহ নানা
কষ্টের মধ্যেও ঢাকায় পড়ে আছেন তাঁরা। প্রথম শ্রেণীর সরকারি গেজেটেড
কর্মকর্তার চাকরি যে বেকারদের কাছে ব্যাপক আকর্ষণীয় তা পরীক্ষায়
অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা দেখলেই বোঝা যায়। কিন্তু বেতনটা মোটেও আকর্ষণীয়
নয়। কারণ, বর্তমান আক্রার বাজারে মাসশেষে বেতনের ১৬ হাজার টাকায় অন্তত
ঢাকায় সংসার চালানো সম্ভব নয়। তার ওপর বছরশেষে যেখানে বার্ষিক বেতন
বৃদ্ধি হয় মাত্র সাড়ে সাত শ টাকার মতো। শতকরা হিসাব করলে দেখা যায়,
বছরশেষে প্রথম শ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন পাঁচ শতাংশেরও কম বাড়ে।
কিন্তু কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) হিসাবে জীবনযাত্রার
ব্যয় বেড়েছে ১১ দশমিক ৯৬ শতাংশ। বাড়তি ব্যায় সামাল দিতে পাছেনা সাধারন
আয়ের মানুষ। বাজার করতে গেলে বাড়ি ভাড়া থাকে না, সন্তানের শিক্ষার ব্যায়
মিটাতে পারেনা। অনেকে বাধ্য হয়ে উচ্চ সুতে ঋণ নিয়ে তা শোধ করতে পারছেন
না।
নিম্ন আয়ের মানুষ ভালো নেই। আয় কমলেও উচ্চ আয়ের মানুষদের সমস্যা হচ্ছে
কম। বেশী বিপদে রয়েছেন শুধু সনাতনি মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ, যাদের
জীবনবোধ ভিন্ন। তাদের মাসিক আয়ের ৬০ ভাগ চলে যায় বাড়িভাড়া, আর ২০ ভাগ
খাবারে। দুই বাচ্চার পড়াশোনা আর স্কুলে যাতায়াতে খরচ হয় আয়ের ১০-১৫ ভাগ।
তারপর রয়েছে চিকিৎসা। মানুষের একদিকে বাসস্থান সমস্যা প্রকট, অন্য দিকে
পারিবারিক ব্যয় বহুগুণে বেড়ে যাওয়ায় মহা সংকটে পরেছে। জনগনের কথা মাথায়
রেখে যে কোন মূল্যে পণ্য মূল্যসহ অন্যান্য ব্যয় যাতে কমে সেদিকে সরকারের
নজরদারীর বিকল্প নেই। সরকারের কার্যকর পদক্ষেপই পারে এ ক্ষেত্রে সফলতা
এনে দিতে। বাজার তদারকিসহ সকল ক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ গুলো
সদাই সজাগ থাকতে হবে।
৥ লেখক- মীর আব্দুল আলীম, সমাজ গবেষক, সাধারন সম্পাদক-কলামিস্ট ফোরাম অফ বাংলাদেশ।

এই বিভাগের আরও খবর


ফেসবুকে আমরা