May 17, 2024, 2:58 am

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও বন্দর এলাকা হতে মহাসড়কে পণ্যবাহী গাড়ি ডাকাতিকালে ডাকাতি কার্যে ব্যবহৃত বাস ও দেশীয় ধারালো অস্ত্রসহ ডাকাত চক্রের ০৬ সদস্যকে গ্রেফতার

প্রেস বিজ্ঞপ্তি :সাম্প্রতিক সময়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও, রুপগঞ্জ ও আড়াইহাজার এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম, ভূলতা, ঢাকা-সিলেট ও আড়াইহাজার-নরসিংদী মহাসড়কে বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর ডাকাতির ঘটনা ঘটে। যার ফলে মহাসড়কে চলাচলকারী সাধারণ যাত্রী এবং পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে এ সকল ডাকাত দলের প্রধান টার্গেট পণ্যবাহী যানবাহন হওয়ায় পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত চালকদের মধ্যে এক ধরণের ভীতিকর অবস্থা তৈরি করে। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে মহাসড়কে ডাকাতির বিষয়ে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় গুরুত্বের সাথে বিভিন্ন তথ্যবহুল সংবাদ প্রকাশিত হয়। ফলশ্রুতিতে র‌্যাব মহাসড়কে ডাকাতির সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।

৩। এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১১ এর একটি আভিযানিক দল নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ ও বন্দর থানা এলাকার মহাসড়ক হতে ডাকাতির সময় সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রের সরদার (১) মূসা আলী (৪০), পিতা- আম্বর আলী, থানা- সোনারগাঁ, জেলা- নারায়ণগঞ্জ ও তার সহযোগী যথাক্রমে; (২) নাঈম মিয়া (২৪), পিতা-মোঃ ফারুক, থানা- রুপগঞ্জ, জেলা- নারায়ণগঞ্জ, (৩) শামিম (৩৫), পিতা- চাঁন মিয়া, থানা- শিবপুর, জেলা- নরসিংদী, (৪) রনি (২৬), পিতা- মৃত সৈকত, থানা+জেলা- নরসিংদী, (৫) আবু সুফিয়ান (২০), পিতা- মৃত সবুজ আলী, থানা- রুপগঞ্জ, জেলা- নারায়ণগঞ্জ, (৬) মামুন (২৪), পিতা- বিল্লাল, থানা- রুপগঞ্জ, জেলা- নারায়ণগঞ্জদের গ্রেফতার করা হয়। জব্দ করা হয় ০২টি চাপাতি, ০১টি চাইনিজ কুড়াল, ০১টি ছোরা ও ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত ০১টি বাস। উদ্ধার করা হয় ডাকাতির শিকার ০২জন ভিকটিমসহ পণ্যবাহী পিকআপ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা ডাকাতির সাথে তাদের নিজেদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।

৪। গত রাতে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের ভূলতা গোলাকান্দাইল এশিয়ান হাইওয়েতে র‌্যাব-১১ এর টহল চলাকালীন সময়ে, একটি ডিম বোঝাই পিকআপ এর সন্দেহজনক গতিবিধি পরিলক্ষিত হলে উক্ত টহল দল পিকআপটি গতিরোধ করে। র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে উক্ত পিকআপ থেকে ০২ জন ব্যক্তি পালানোর চেষ্টা করলে তাদেরকে আটক করা হয়। আটককৃত ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কথা বার্তায় অসংলগ্ন আচরণ প্রকাশ পাওয়ায় তাদেরকে তল্লাশী করলে তাদের নিকট হতে ০১টি চাপাতি ও ০১টি চাইনিজ কুড়াল উদ্ধার করা হয়।

গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয় জিজ্ঞাসাবাদে জানায় যে, তারা সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। তারা ডাকাতির উদ্দেশ্যে যুব কল্যান এক্সপ্রেস লিঃ এর একটি বাসের মাধ্যেমেভূলতা থেকে রূপসী যাওয়ার পথে এশিয়ান হাইওয়েতে ডিমের পিকআপটি তাদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য পিকআপের পিছু নেয়। একপর্যায়ে ভূলতা-রূপসী সড়কে পিকআপটির সামনে বাস দ্বারা রাস্তা আটক করে পিকআপের গতিরোধ করে। এরপর পিকআপের ড্রাইভার ও তার সহকারীকে ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক পিকআপটি তাদের নিয়ন্ত্রণে নেয় এবং ড্রাইভার ও তার সহকারীকে হাত-পা ও চোখ-মুখ বেঁধে মারপিট করে ও তাদের সাথে থাকা বাসে উঠিয়ে নেয়। অতঃপর উক্ত ডাকাত দলের সরদার মূসা ও তার প্রধান সহকারী নাঈম পিকআপটি নিয়ে গাউছিয়া-মদনপুরমুখী রাস্তায় নিয়ে যায় এবং ডাকাত দলের বাকি সদস্যরা পিকআপ এর চালক ও হেলপারকে তাদের সাথে থাকা বাসে করেমদনপুরের দিকে নিয়ে যায়।

৬। অতঃপর গ্রেফতারকৃত ডাকাতদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী পিকআপের ড্রাইভার ও হেলপারকে উদ্ধারের উদ্দেশ্যে আভিযানিক দলটি মদনপুর পৌঁছায়। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত আসামিদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানার মদনপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কহতেযুব কল্যান এক্সপ্রেস লিঃ এর বাসটি আটক করতে সক্ষম হয়।এ সময় র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে সংঘবদ্ধ ডাকাতদলের সদস্যরা দৌড়ে পালানোর চেষ্টাকালে র‌্যাব সদস্যরা ০৪ জন ডাকাতকে আটক করতে সক্ষম হয় এবং অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জন ডাকাত বাস থেকে লাফিয়ে পালিয়ে যায়। উক্ত বাসের ভিতর হতে হাত-পা ও চোখ-মুখ বাধা অবস্থায় পিকআপ এর ড্রাইভার ও তার সহকারীকে উদ্ধার করা হয়।

৭। গ্রেফতারকৃতদেরজিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে,১০/১২ জনের সংঘবদ্ধএই ডাকাত চক্রটি বেশ কয়েক বছর ধরে নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও, রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজারএলাকায় বিভিন্ন মহাসড়কে নিয়মিত ভাবে ডাকাতি করে আসছে। তারা পেশায় কেউ গার্মেন্টসকর্মী, ড্রাইভার, হেলপার আবার কেউ রাজমিস্ত্রী ও কাপড়ের দোকানের কাটিং মাস্টার। দিনে নিজ নিজ পেশায় নিয়োজিত থাকলেও বিভিন্ন সময় তারা সংঘবদ্ধভাবে দুর্ধর্ষ ডাকাতিতে অংশগ্রহণ করে থাকে।জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায় যে, এই চক্রটি মূলত ০৩টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ডাকাতি সংঘটন করে এবং ডাকাতির কাজে একটি বাস ব্যবহার করে। গ্রেফতারকৃত মূসার নির্দেশেপ্রথম গ্রুপটি ডাকাতির জন্য বিভিন্ন গার্মেন্টস এর পণ্যবাহী ট্রাক ও মহাসড়কে চলাচলকারী পণ্যবাহী যানবাহন সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে এবং ডাকাতির জন্য সম্ভ্যাব্য স্থান নির্ধারণ করে। এই দলের সদস্যরা পেশায় গার্মেন্টস কর্মী, ড্রাইভার, হেলপার আবার কেউ রাজমিস্ত্রী ও কাপড়ের দোকানের কাটিং মাস্টার। দ্বিতীয় দলটি বাস নিয়ে মহাসড়কে সুবিধাজনক স্থানে অবস্থান নিয়ে ডাকাতিতে অংশগ্রহণ করে।তারামহাসড়কে অবস্থান নিয়ে ডাকাতির জন্য টার্গেটকৃতপণ্যবাহী যানবাহনটির পিছু নেয়। পরবর্তীতে সুবিধাজনক স্থানে টার্গেট করা পণ্যবাহী গাড়ীটিকে বাস দ্বারাগতিরোধ করে এবং দ্রুত পণ্যবাহী গাড়ীর চালক ও হেলপারকে এলোপাথারি মারপিট করে হাত-পা ও চোখ-মুখ বেঁধে বাসে তুলে নেয়।পরবর্তীতে পণ্যবাহী গাড়ীর চালক ও হেলপারকে জিম্মি করে বাসে নিয়ে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যায় ও তাদের মারপিট করে মুক্তিপণ দাবী করে এবং ডাকাতি শেষে পরবর্তীতে তাদের হাত-পা ও চোখ-মুখ বাধাঁ অবস্থায় মহাসড়কের নির্জন স্থানে ফেলে দেয়। তৃতীয় দলটির নেতৃত্বে থাকা ডাকাত দলের প্রধান মূসাডাকাতিকৃত পণ্যবাহী গাড়ীটি চালিয়ে ডাকাতিকৃত পণ্য বিক্রি করার জন্য পূর্ব নির্ধারিত স্থানে নিয়ে যায় এবং মালামাল আনলোড করে।এছাড়াও, ডাকাত দলটি পণ্যবাহী গাড়িটি সুবিধাজনক স্থানে বিক্রি করে দেয়ার চেষ্টা করে অথবা ব্যর্থ হলে পরিত্যাক্ত অবস্থায় কোন নির্জন স্থানে ফেলে যায়। বিগত ০১ বছর ধরে যুব কল্যাণ এক্সপ্রেস লিঃ এর বাসটি দিয়ে তারা বেশ কয়েকটি ডাকাতিতে অংশগ্রহণ করে। পূর্বে তারা অন্যান্য বাস অথবা পিকআপ দিয়ে ডাকাতিতে অংশগ্রহণ করত।

৮। গ্রেফতারকৃত মূসাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, সেউক্ত ডাকাত চক্রের মূল হোতা।সে বিগত১০/১২ বছর যাবৎ বিভিন্ন মহাসড়কে ডাকাতি করে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়াঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা- সিলেট মহাসড়কে বেশ কয়েকটি ডাকাতির ঘটনা তার নেতৃত্বে সংঘঠিত হয়েছে এবং প্রত্যেকটি ডাকাতিতে সে নিজে স্বশরীরে অংশগ্রহণ করে। তার নামে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। ইতোপূর্বে ডাকাতির মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাভোগ করেছে।

৯। গ্রেফতারকৃত শামিম ডাকাত সর্দার মূসার প্রধান সহযোগী এবং ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত বাসটির চালক। বিগত ২০০৬ সালে স্ত্রীর হত্যার দায়ে সে ০৭ বছর কারাভোগ করে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ডাকাতিসহ একাধিক মামলা রয়েছে। গ্রেফতারকৃত মূসার নেতৃত্বে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে বেশ কয়েকটি ডাকাতিতে অংশগ্রহণ করে বলে জানায়। গ্রেফতারকৃত রনি ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত বাসটির গাড়ী চালকের হেলপার। গ্রেফতারকৃত নাঈম পেশায় একজন গাড়ী চালক।গ্রেফতারকৃত মামুন স্থানীয় একটি সেলাই কারখানায় কার্টিং মাস্টার এর কাজ করে। সম্প্রতি তারা মূসার নির্দেশে বেশকয়েকটি ডাকাতিতে অংশগ্রহণ করে। তাদের নামে বিভিন্ন থানায় একাধিক ডাকাতির মামলা রয়েছে।

১০। গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

——

এই বিভাগের আরও খবর


ফেসবুকে আমরা