শামীম আখতার, ব্যুরো প্রধান (খুলনা): যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাতবাড়িয়া বাজারের সংলগ্ন পশুহাট সন্ত্রাসীদের দখল নেওয়ার চেষ্টা রুখে দিলেন কেশবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ জসীম উদ্দীন। শনিবার (১৭ এপ্রিল) দুপুরে জনৈক লিটন গাজীর নেতৃত্বে একদল বহিরাগত সন্ত্রাসী ওই পশুহাট দখল নিতে যায়। ওই সময় গ্রামবাসী ও বহিরাগত সন্ত্রাসীদের মুখোমুখি অবস্থান করে। খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে দ্রæত উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসেন ও পশুহাট দখলের চেষ্টা প্রতিহত করেন। এসময় কেশবপুর পৌরসভার রামচন্দ্রপুর গ্রামের লিটন গাজী (৩৫), সাতবাড়িয়া গ্রামের সাবেক মেম্বর মোহাম্মদ আলী ও যুবলীগ নেতা মাসুম বিল্লাহকে আটক এবং বহিরাগত সন্ত্রাসীদের ১১ টি মটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে।
জানা গেছে, স্থানীয় গরু-ছাগল পালনকারীদের সুবিধার্থে ২০১৮ সালে সাতবাড়িয়া বাজারের পূর্ব প্রান্তে একটি পশুহাট প্রতিষ্ঠা করা হয়। হাট বসানোর সরকারি শর্ত মেনে স্থানীয় বাসিন্দারা সরকারের নামে ২১ শতক জমি দান করেন। পরবর্তীতে আরও দেড় বিঘা জমি বর্গা নিয়ে হাটটি পরিচালিত হয়ে আসছে। সপ্তাহের প্রতি শনি ও মঙ্গলবার হাট বসে। পশু হাটে আশপাশের ২৫-৩০ গ্রামের মানুষেরা গরু-ছাগল বেচা-কেনা করেন। প্রতিহাটে শতাধিক গরু ও ৬০ থেকে ৭০টি ছাগল বিক্রি হয়। হাটটি এখনো সরকারি ইজারাভুক্ত না হওয়ায় জমিদাতা-স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় গণ্যমান্যদের নিয়ে গঠিত হাট কমিটি পশুহাটটি পরিচালনা করে আসছিলেন। এরই মধ্যে ২০১৯ সালে হাটটি সরকারি ইজারাভুক্ত ডাকে আসার জন্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের কাছে কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়। তবে এখনো পর্যন্ত সরকারি কোন ইজারা দেওয়া হয়নি, বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। এরই মধ্যে গত ৮ এপ্রিল কেশবপুর পৌরসভার রামচন্দ্রপুর এলাকার লিটন গাজী ২৮ হাজার ৭০০ টাকায় সাতবাড়িয়া বাজারের পশ্চিম প্রান্তের হাটচান্নির (কাঁচা তরকারি ও মাছ বাজার) ইজারা পায়। সাতবাড়িয়া কাঁচা বাজারের সাথে পশু হাটের কোন সম্পর্ক না থাকার পরও গত ১৪ এপ্রিল সকাল ১০টায় লিটন গাজী স্থানীয় একটি কুচক্রি মহলকে ম্যানেজ করে ৩০-৩৫ জন বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে আধা কিলোমিটার দূরের গরুহাট দখলের চেষ্টা করে। সেই থেকে বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছিলো।
তারই জের ধরে শনিবার (১৭ মার্চ) এলাকাবাসী এ ঘটনার পরিত্রাণ পেতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মানববন্ধনের কর্মসূচির আয়োজন করে। এ খবর পেয়ে সকাল থেকে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা জড়ো হতে শুরু করে সাতবাড়িয়া পশুহাট এলাকায়। এতে এলাকাবাসী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী একত্রিত হয়ে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশাংকা তৈরি হয়। এসময় কেশবপুর থানার ওসি জসীম উদ্দীনের নেতৃত্বে থানা পুলিশ দ্রæত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং ঘটনাস্থল থেকে উভয় পক্ষের ৩ জনকে আটক করে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। তাদের রেখে যাওয়া ১১টি মোটরসাইকেল জব্দ করেছে পুলিশ।
সাতবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অন্যতম নেতা ও সাবেক উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মশিয়ার রহমান দফাদার বলেন, স্থানীয় জাহানপুর গ্রামের বিএনপি সমর্থিত সাবেক মেম্বার আশরাফ আলীর ছেলে সাবেক যুবদলের ক্যাডার আমজাদ হোসেন ব্যবসায়ীক সূত্রে আওয়ামী লীগের অনুপ্রবেশ করেছে। ওই অনুপ্রবেশকারীর পরিকল্পনায় স্থানীয় কয়েকজন মিলে বহিরাগত সন্ত্রাসী জড়ো করে হাট দখলের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তবে, স্থানীয় জনগণ প্রতিরোধ করেছে, আগামীতেও প্রতিরোধ করবে। এই সকল অনুপ্রবেশকারীরা অর্থের লোভে এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ঠ করছে, আমরা এ ঘটনার বিচার দাবি করছি।
সাতবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামছুদ্দীন দফাদার বলেন, ‘বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়নে আমি জনগণের ভোটে নির্বাচিত চেয়ারম্যান, আমি ওই পশুহাটের সভাপতি তারপরও আমাদের উপস্থিতিতে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা অবৈধভাবে দখলবাজি করতে এসেছে এটা হতাশাজনক, এটা মেনে নেওয়া যাইনা। এ ব্যাপারে আমরা প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করছি।
কেশবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জসিম উদ্দিন বলেন, বহিরাগত সন্ত্রাসীরা ও এলাকাবাসীর মধ্যে পশুহাট দখলকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের আশাংকা দেখা দেয়। বিষয়টি জানতে পেরে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে উভয় পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনা হয়েছে। পরে ঘটনাস্থল থেকে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের রেখে যাওয়া ১১টি রেজিস্ট্রেশন বিহীন মোটরসাইকেল জব্দ ও ঘটনার সাথে জড়িত উভয়পক্ষের তিনজনকে আটক করা হয়েছে। এবিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।