April 27, 2024, 12:32 am

এটিএম বুথ মেশিন জালিয়াত চক্রের মূলহোতাসহ ০৮ জন গ্রেফতার

প্রেস বিজ্ঞপ্তিঃ একটি স্বনামধন্য আন্তর্জাতিক ব্যাংক ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশে প্রথম এটিএম বুথের ব্যবহার শুরু করে। পরবর্তীতে প্রায় সকল ব্যাংকে এর প্রচলন ঘটে। কিন্তু এটিএম বুথ ব্যবহার শুরু হওয়ার পর হতে বেশ কিছু অভিযোগ আলোচনায় আসে। বিগত সময়ে র‌্যাব এটিএম বুথে ডাকাতি, হত্যা ও অবৈধভাবে কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ উত্তোলনের ঘটনায় দেশি বিদেশি বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে। বাংলাদেশে বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম বুথের ব্যবস্থাপনা থার্ড পার্টি বা আউট সোর্র্সিং এর মাধ্যমে সম্পন্ন করে থাকে। থার্ড পার্টি টাকা স্থাপন, নিরাপত্তা, কারিগরী ত্রুটি ইত্যাদি বিষয়টি পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে একটি বেসরকারি ব্যাংকের অডিটে এটিএম বুথের টাকার বেশকিছু গড়মিল পরিলক্ষিত হয়। ফলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ থার্ড পার্টি পরিবর্তন করে। তথাপিও অনিয়ম ও গড়মিল পরিলক্ষিত হতে থাকে। বিষয়টির প্রেক্ষিতে আস্থার স্থল হিসেবে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ও থার্ড পার্টি বিষয়টি নিয়ে র‌্যাবের শরণাপন্ন হন। ফলশ্রুতিতে র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি ও ছায়া তদন্ত শুরু করে। ছায়া তদন্তের এক পর্যায়ে র‌্যাব উদঘাটন করে যে, থার্ড পার্টি পরিবর্তিত হলেও টাকা লোডার ও অন্যান্য কারিগরী দলের কোন পরিবর্তন হয়নি। ফলশ্রুতিতে র‌্যাব তদন্ত অব্যাহত রাখে।

২। এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র‌্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল রাজধানীর মিরপুর, হাজারীবাগ, যাত্রাবাড়ী ও বাড্ডা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে (১) আব্দুর রহমান বিশ্বাস (৩২), পিতাঃ সিকিম আলী, সদর, মানিকগঞ্জ, (২) মোঃ তারেক আজিজ (২৫), পিতাঃ রজমান আলী, কোতয়ালী, যশোর, (৩) তাহমিদ উদ্দিন পাঠান @ সোহান (২৮), পিতাঃ আহসান উদ্দিন পাঠান, শ্রীপুর, গাজীপুর, (৪) মোঃ রবিউল হাসান (২৭), পিতাঃ মোঃ আলাউদ্দিন হাওলাদার, এয়ারপোর্ট, বরিশাল, (৫), হাবিবুর রহমান @ ইলিয়াস (৩৬), পিতাঃ তাজ উদ্দিন শেখ, কাপাসিয়া, গাজীপুর, (৬) মোঃ কামরুল হাসান (৪৩), পিতাঃ মৃত চাঁদ আলী মন্ডল, মহেশপুর, ঝিনাইদহ, (৭) মোঃ সুজন মিয়া (৩১), পিতাঃ মৃত শুক্কুর আলী, বাজিতপুর, কিশোরগঞ্জ এবং (৮) মোঃ আব্দুল কাদের (৪৩), পিতাঃ মৃত শামছুল হক, দেবহাটা, সাতক্ষীরা’দেরকে গ্রেফতার করা হয়। উক্ত অভিযানে উদ্ধার করা হয় ০২টি চেকবই, ০১টি এটিএম কার্ড, ০৪টি আইডিকার্ড, ০১টি স্বর্ণের নেকলেস, ০১ জোড়া বালা, ০১ জোড়া কানের দোল, ০১টি আংটি এবং নগদ ৯ লক্ষ ৪১ হাজার ৫৫৫ টাকা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা পরস্পর যোগসাজশে বেশ কয়েকটি এটিএম বুথ হতে টাকা আত্মসাৎের সাথে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।

৩। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃতরা একটি সংঘবদ্ধ চক্র। তারা বিগত ২/৩ বছর একসাথে চাকুরী করার সুবাদে পারস্পরিকভাবে পরিচিত হয়। এক পর্যায়ে তারা সমমনাদের নিয়ে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে। গ্রেফতারকৃত আব্দুর রহমান বর্ণিত সিন্ডিকেটের মূলহোতা। সে তার এক পূর্ববর্তী সহকর্মী হতে বিষয়টি রপ্ত করে বলে জানায়। গ্রেফতারকৃত অন্যান্যরা তাদের সহযোগী; যারা কন্ট্রোল রুম, লোডিং, কলিং এবং মেনটেইনেন্স এর দায়িত্ব পালন করে থাকে। গ্রেফতারকৃতরা ব্যাংকের এটিএম বুথে টাকা স্থাপন ও মনিটরিং কাজে নিযুক্ত ছিল। তারা ঢাকা শহরের ২৩১টি এটিএম বুথ মেশিনে টাকা লোড করে থাকে। এই ২৩১টি এটিএম বুথ মেশিনে টাকা স্থাপনের জন্য ১৯ জন লোডার নিযুক্ত রয়েছে; যারা প্রয়োজনে বিভিন্ন স্থানে অর্থ পৌঁছে থাকে। এছাড়া টেকনিক্যাল এক্সপার্ট, কারিগরী সংক্রান্ত বিষয়ে বেশ কয়েকজন নিয়োজিত থাকত। গ্রেফতারকৃতরা লোডিং ট্রে তে টাকা স্থাপনের সময় ১৯টি ১০০০ টাকার নোটের পরপর অথবা অন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ইচ্ছাকৃতভাবে জ্যাম করে রাখত। কোন ক্লাইন্ট এটিএম বুথে টাকা উত্তোলনের জন্য এটিএম কার্ড প্রবেশ করিয়ে গোপন পিন নম্বর দিয়ে কমান্ড করলে ঐ পরিমাণ টাকা ডেলিভারী না হয়ে পার্সবীনে জমা হত। পরবর্তীতে সেই টাকা তারা সরিয়ে নিত। এক্ষেত্রে মেশিনের একটি কৌশল অবলম্বন করে তারা টাকাগুলো আত্মসাৎ করত।

৪। গ্রেফতারকৃত আব্দুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে এই চক্রের মূলহোতা। সে বিগত ৩/৪ বছর পূর্বে একটি সিকিউরিটিজ কোম্পানীতে চাকুরী নেয়। তার দায়িত্বপূর্ণ এলাকা মিরপুর, কালশী, বেনারশি, সেনপাড়া, ইব্রাহিমপুর ও কচুক্ষেত এলাকা। সে প্রতিদিন বিভিন্ন এটিএম বুথে কৃত্রিম জ্যাম সৃষ্টির মাধ্যমে বিপুল পরিমান টাকা আত্মসাৎ করে আসছে। এ দলের সদস্যরা শিক্ষিত।

৫। জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, গ্রেফতারকৃত আব্দুর রহমান, সোহাগ পাঠান, হাবিব ও কামরুল এটিএম বুথে লোডিং, কলিং ও মেনটেইনেন্স এর কাজ করে। গ্রেফতারকৃত কাদের, সুজন, রবিউল ও তারেক আজিজ এটিএম বুথে শুধু লোডিং এর কাজ করে।

৬। গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

এই বিভাগের আরও খবর


ফেসবুকে আমরা