February 5, 2025, 7:47 am

বঙ্গোপসাগরে জেলেদের নৌকায় ডাকাতি, লুন্ঠন ও অপহরণের ঘটনায় জড়িত দস্যুদলের মুক্তিপণের অর্থ সংগ্রহের মূলহোতা ইলিয়াস হোসেন কে নারায়ণগঞ্জের রুপগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেফতার

প্রেস বিজ্ঞপ্তি: পাথরঘাটা, বরগুনা ও পটুয়াখালী সংলগ্ন উপক‚লীয় এলাকার ৩০ থেকে ৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে দূরবর্তী বঙ্গোপসাগরের অভ্যন্তরে বেশ কয়েকটি দস্যুতার ঘটনা ঘটে। যেখানে দস্যুরা মাছ ধরার ট্রলারে হামলা করে জেলেদের অপহরণ, লুণ্ঠন ও মুক্তিপন দাবী করেছে বলে জানা যায়। এছাড়া সুন্দরবনে পার্শ্ববর্তী দেশের সাথে সীমান্তবর্তী এলাকায় গুলিতে একজনের নিহতের ঘটনা ঘটে।

গত নভেম্বরের মাঝামাঝিতে পিরোজপুর, পটুয়াখালী ও বরগুনা হতে ভিকটিমরা তাদের সহকর্মীসহ মাছ ধরার উদ্দেশ্যে গভীর সমুদ্রে গমণ করে। গত ২০ নভেম্বর ২০২১ তারিখ সকাল ০৭০০ ঘটিকা হতে রাত ২২০০ ঘটিকার মধ্যে পাথরঘাটা, বরগুনা ও পটুয়াখালী (বলেশ্বর ও পায়রা মোহনা) বঙ্গোপসাগরের তৎসংলগ্ন ৩০-৫০ কিঃ মিঃ অভ্যন্তরে অপহরণের স্বীকার হয়। ভিকটিমরা স্ব স্ব নৌকা দিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে অবস্থান করছিল। জলদস্যুরা ক্রমান্বয়ে একটির পর একটি নৌকায় ডাকাতি করে। অতঃপর জলদস্যুরা ভিকটিমদের সহকর্মীদের মুক্তিপনের অর্থ জানিয়ে দিয়ে ভিকটিমদের নৌকাযোগে ফেরত পাঠায়। কিন্তু দস্যুরা ভিকটিমদের একটি নৌকা রেখে দেয়, যা ডাকাতির কাজে জলদস্যুরা ব্যবহার করে। এছাড়া ভিকটিমদের নিকট হতে লুন্ঠনকৃত মাছ, জাল এবং তৈল ডাকাতদের নৌকার মাধ্যমে নিয়ে যাওয়া হয়। মোবাইলসহ মূল মাঝি ও কয়েকজন সদস্যকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। অতঃপর ভিকটিদের মোবাইল নম্বর হতে তাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করে ভয়ভীতি দেখিয়ে মুক্তিপণ দিতে চাপ প্রয়োগ করে জলদস্যুরা।

৩। বর্ণিত ঘটনাগুলোর গুরুত্ব অনুধাবন পূর্বক র‌্যাব চতুর্মুখী উদ্যোগ নেয়। র‌্যাব আভিযানিক ও গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে। র‌্যাব-৮ এর আভিযানিক দল বঙ্গোপসাগরের অভ্যন্তরে ও সমুদ্রের নিকটবর্তী চরাঞ্চল যেমন; ডালচর, সোনার চর, চর মন্তাজসহ বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশী অভিযান পরিচালনা করে। এছাড়াও হেলিকপ্টারযোগে টহল পরিচালনা করে র‌্যাব। একপর্যায়ে র‌্যাবের গতিবিধি ও তৎপরতা আঁচ করতে পেরে দস্যুরা গত ২৩ নভেম্বর ২০২১ তারিখ অপহৃতদের নৌকায় রেখে ডাকাতরা চলে যায়। অতঃপর কিছুক্ষন পরে ভিকটিমদেরকে ডাকাত সন্দেহে ঘিরে ফেলে হামলা চালানো হয় মূলত উক্ত ডাকাতরা অন্যান্যদের নৌকাকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে নিয়ে এসে এ হামলা চালিয়ে কৌশলে স্থান ত্যাগ করে বলে ভুক্তভোগীরা জানায়।
৪। এতদসংক্রান্ত বিষয়ে ইতোমধ্যে পাথরঘাটা থানায় ০২টি মামলা রুজ্জু হয়। মামলা নং ১৬ এবং ১৭ তারিখ ২৭ নভেম্বর ২০২১। ধারা ৩৯৫/৩৯৭/৩৬৫/৩৮৫/৩৮৬ পেনাল কোড।

৫। অপহৃতদের ছেড়ে দেওয়ার পরেও র‌্যাব জলদস্যুদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রেখে চলেছে। র‌্যাব মোবাইল ব্যাংকিং ট্রান্সফারের মাধ্যমে মুক্তিপণের অর্থ প্রবাহের উপর গোয়েন্দা নজরদারী অব্যাহত রাখে। র‌্যাব গোয়েন্দারা নারায়ণগঞ্জসহ আরো কয়েকটি স্থানে এ সংক্রান্ত ফুটপ্রিন্ট সনাক্ত করে।

৬। এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৮ এর অভিযানে গত রাতে নারায়ণগঞ্জের রুপগঞ্জ এলাকা হতে বঙ্গোপসাগরের সমুদ্রসীমায় জেলেদের নৌকায় ডাকাতির মূল মুক্তিপণ সংগ্রাহক মোঃ ইলিয়াস হোসেন মৃধা (২৮), পিতাঃ মোঃ দেলোয়ার হোসেন, গলাচিপা, পটুয়াখালী’কে মুক্তিপণের অর্থসহ গ্রেফতার করে। উদ্ধার করা হয় মুক্তিপণের পাঁচ লক্ষাধিক টাকা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত ইলিয়াস বর্ণিত ডাকাতির সাথে জড়িত থাকার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে।

৭। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত ইলিয়াস হোসেন জানায় যে, সে সংঘবদ্ধ জলদস্যু দলের সদস্য। উক্ত দলে ১৫-১৭ জন সদস্য রয়েছে। দলের সদস্যরা কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে কাজ করে। তন্মধ্যে মুক্তিপণ সংগ্রহে ২/৩ জন কাজ করে থাকে। গ্রেফতারকৃত এই মুক্তিপণ সংগ্রাহক দলের মূলহোতা। তার দায়িত্ব হল অপহরণকৃতদের মুক্তিপণের অর্থ সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনা করা। তার অধীনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থানরত বেশ কয়েকজন ছদ্মবেশী অর্থ সংগ্রাহক রয়েছে, যারা ভিকটিম হতে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থ গ্রেফতারকৃতের কাছে বিভিন্ন পন্থায় প্রেরণ করে থাকে।

৮। গ্রেফতারকৃত ইলিয়াস হোসেন অর্থ সংগ্রহের প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানায় যে, প্রাথমিকভাবে জেলেদের মূল মাঝিসহ কয়েকজনকে অপহরণ করে অবশিষ্ট সহকর্মী/সহযোগীদের মুক্তিপণের অর্থ জানিয়ে ছেড়ে দেয় দস্যুরা। একই সাথে ভিকটিমদের মোবাইল হাতিয়ে নিয়ে ভিকটিম পরিবারের সদস্যদের ফোন করে ভয়ভীতি দেখিয়ে মুক্তিপণ দিতে চাপ দেয় দস্যু দল। এ সময় জলদস্যুরা গ্রেফতারকৃতের প্রদত্ত বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টদের ও অর্থসংগ্রাহক সহযোগীদের কাছে বিদ্যমান ভ‚য়া মোবাইল নম্বর প্রদান করে। গ্রেফতারকৃত ইলিয়াস হোসেন বিভিন্ন এজেন্টদের মোবাইল নম্বর ব্যবহারের ক্ষেত্রে আর্থিক প্রলোভন দেখানোসহ নানাবিধ কৌশল অবলম্বন করে থাকে। প্রতিটি ডাকাতি সংগঠনের বেশ কয়েকদিন পূর্বে গ্রেফতারকৃত ইলিয়াস ও তার সহযোগীরা ছদ্মবেশে বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করে ঐ এলাকার মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টদের সাথে সখ্যতার তৈরী করে। অতঃপর কাজ শেষে সে স্থান ত্যাগ করে বা ঐ এজেন্টের সাথে যোগাযোগ বা যাতায়াত বন্ধ করে দেয়। এছাড়া গ্রেফতারকৃত অর্থ সংগ্রাহক অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন ব্যক্তির দ্বারা ভ‚য়া একাউন্ট তৈরি করে থাকে। ক্ষেত্র বিশেষে বিভিন্ন এজেন্টেদের নিকট হতে ভ‚য়া একাউন্ট সমৃদ্ধ সীমকার্ডও ক্রয় করে থাকে।

এই বিভাগের আরও খবর


ফেসবুকে আমরা