October 4, 2024, 2:56 pm

যশোর পিবিআই কর্তৃক মৃত পরিচয়ে দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকা নারী পাচারকারী গ্রেফতার: নারী উদ্ধার

শামীম আখতার, বিভাগীয় প্রধান (খুলনা) যশোর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কর্তৃক মৃত পরিচয়ে দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকা মজনু বিশ্বাস (৪৪) নামের নারী পাচারকারীকে গ্রেফতার এবং পাচার হওয়া এক নারীকে ভারত থেকে উদ্ধার করেছে। গত ৯ এপ্রিল রাতে ঝিনাইদহ সদর থানার জোড়াপুকুর পাগলাখানা রোডে জনৈক খলিলের বাসা থেকে নারী পাচারকারী মজনু বিশ্বাস ও তার স্ত্রী মাজেদা খাতুন (২৫) কে গ্রেফতার করে পুলিশ।

পিবিআই সুত্রে জানা গেছে, যশোর কোতোয়ালি থানার শেখহাটি জামরুলতলা গ্রামের জনৈক আসাদের টিনসেড বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে একই গ্রামের সাইফুল ইসলাম ও তার স্ত্রী আফসানা মিমি (২২) প্রায় ৩ বছর যাবৎ বসবাস করে আসছিলেন। ওই বাড়িতে ঝিনাইদহ সদর থানার সুরাট পূর্বপাড়া গ্রামের মজনু বিশ্বাস (৪৪) ও স্ত্রী মাজেদা খাতুন ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করতো। একই বাড়িতে বসবাসের সুবাদে মজনু বিশ্বাস ও মাজেদা খাতুন আফসানা মিমির সহিত সখ্যতা গড়ে তোলে। একপর্যায়ে মজনু বিশ্বাস ও মাজেদা খাতুন আফসানা মিমিকে ভারতে পাচার করে পতিতাবৃত্তি করানোর জন্য পরিকল্পনা করতে থাকে। পরিকল্পনানুযায়ী মজনু বিশ্বাস ও মাজেদা খাতুন আফসানা মিমিকে ভারতে নিয়ে ভাল বেতনের চাকুরির প্রলোভন দেখিয়ে গত ২০২২ সালের ১৭মে বিকেলে ভাড়াটিয়া বাসা থেকে বের করে আফসানা মিমিকে অবৈধভাবে চৌগাছা সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচার করে সুরাটে নিয়ে যায়। সেখানে পূর্ব হতে অবস্থানকৃত মজনু বিশ্বাসের চাচাতো শ্যালক সোহাগ সরদারের নিকট আফসানা মিমির অজান্তেই পতিতাবৃত্তির উদ্দেশ্যে বিক্রয় করে দেয়। পরবর্তীতে আফসানা মিমি ধীরে ধীরে তাদের অসৎ উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে সেখান থেকে চলে আসার চেষ্টা করেন। কিন্তু সোহাগ সরদার ও তার স্ত্রী মিম বেগম হরফে জয়া হরফে রিয়া তাকে খুন করার হুমকি দিয়ে আটকে রেখে বিভিন্ন লোকের নিকট অর্থের বিনিময়ে আফসানা মিমির ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর পূর্বক অনৈতিক কর্মকান্ডে লিপ্ত করায়। এ ঘটনা সংক্রান্তে বাদীর পিতা বিজ্ঞ আদালতে পিটিশন মামলা নং-৮১/২০২২ দায়ের করেন। যা পিবিআই যশোর জেলায় তদন্তাধীন। পিবিআই যশোর জেলা Justice And Care, Jashore এর সহায়তায় চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি আফসানা মিমিকে ভারত থেকে উদ্ধার করেন।

উক্ত মামলাটি তদন্তকালে জানা যায়, আসামী মজনু বিশ্বাস ও মাজেদা খাতুন সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী। তাদের বাড়ি নড়াইলে। তদন্তকালে আসামীদের সংক্রান্তে তথ্য সংগ্রহকালে মজনু বিশ্বাস মৃত বলে জানা যায়। এমনকি মজনু বিশ্বাস মৃত মর্মে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানও প্রত্যয়ন প্রদান করেছেন। কিন্তু পিবিআই যশোর জেলা বিষয়টি নিয়ে গভীর তদন্ত শুরু করে মজনু বিশ্বাস জীবিত রয়েছে মর্মে নিশ্চিত হন। মজনু বিশ্বাস ও তার স্ত্রী মাজেদা খাতুন পেশাদার মানব পাচারকারী চক্রের সদস্য। তারা আফসানা মিমিকে পাচারের পর প্রতিনিয়ত অবস্থান পরিবর্তন করতে থাকলেও পিবিআই যশোর জেলা তাদের অবস্থান সনাক্ত করতে সক্ষম হন। পরবর্তীতে পাচার হওয়া আফসানা মিমির পিতা ইব্রাহিম যশোর পিবিআই এর আবেদনের প্রেক্ষিতে পিবিআই প্রধান বাংলাদেশ পুলিশের অ্যাডিশনাল আইজি বনজ কুমার মজুমদার বিপিএম (বার), পিপিএম এর সঠিক তত্ত্বাবধানে ও দিক-নির্দেশনায়, পিবিআই যশোর জেলা ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন, পিপিএম-সেবা এর নেতৃত্ত্বে এসআই স্নেহাশিস দাশ, মিজানুর রহমান, ডিএম নুর জামাল হোসেনসহ পিবিআই যশোর জেলা চৌকস দল কর্তৃক গত ৯ এপ্রিল রাতে ঝিনাইদহ সদর থানার জোড়াপুকুর পাগলাখানা রোডে জনৈক খলিলের বাসা থেকে মজনু বিশ্বাস ও তার স্ত্রী মাজেদা খাতুনকে গ্রেফতার করেন। পরবর্তীতে আফসানা মিমির পিতা বাদী হয়ে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে আসামীদের বিরুদ্ধে কোতয়ালী মডেল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। কোতয়ালী মডেল থানার মামলা নং-৪৬।

উক্ত মামলাটি যশোর জেলা পিবিআই স্ব-উদ্যোগে গ্রহণ করে মামলার তদন্তভার এসআই মিজানুর রহমান এর উপর অর্পণ করেন। মামলার তদন্তভার গ্রহণের পর এসআই মিজানুর রহমান আসামী মজনু বিশ্বাস ও মাজেদা খাতুনকে অত্র মামলা সংক্রান্তে গ্রেফতার পূর্বক হেফাজতে গ্রহণ করেন। আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সাথে জড়িত মর্মে স্বীকারোক্তি প্রদান করেন।

এ ব্যাপারে পিবিআই যশোর জেলার ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন বলেন, ভারতে নারী পাচারকারী মজনু বিশ্বাস ও তার স্ত্রী মাজেদা খাতুনকে ১০ই এপ্রিল বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। স্বামী-স্ত্রী দুজনই পেশাদার মানব পাচারকারী চক্রের সদস্য। পাচারের ঘটনায় জড়িত অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টাসহ মামলার তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর


ফেসবুকে আমরা