ক্রাইম চিফ : ঢাকার আমিন বাজারের তিতাস গ্যাস ট্রন্সমিশন কোম্পানি লি: এর অফিসের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী টেকনিশিয়ানের আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটেছে।
রাজধানীর ডেমরার সারুলিয়া এলাকায় গড়েছেন বিলাসবহুল ৬ তলা বাড়ী চরেন ব্যাক্তিগত গাড়িতে, রয়েছে স্ত্রী সন্তানের নামে-বেনামে সম্পত্তি।
দুর্নীতিবাজ এই কর্মচারি রাষ্টিয় সম্পদ গ্যাস বাসাবাড়ি, কল কারখান, মিল ফেক্টরিতে অবৈধ সংযোগ দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা, বনে গেছেন কোটি কোটি টাকার অগাধ বিত্ত বৈভবের মালিক। প্রায় ৩৭ বছর আগে তিনি ১,৭০০ টাকা বেতনে চাকুরীতে যোগ দেন, আয়ের সঙ্গে সঙ্গতি বিহীন সম্পদ অর্জনকারী ব্যক্তির নাম মোস্তাফিজুর রহমান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,মোস্তাফিজুর রহমান একসময় নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁও (যাত্রামূরা) তিতাস অফিসে (চতুর্থ শ্রেণীর টেকনিশিয়ান) পদে চাকুরী করতেন। গত দু বছর আগে অভিযোগগের কারনে ঢাকার আমিন বাজার তিতাস অফিসে বদলি হন।
সেখানে গিয়ে ও সাবেক কর্মস্থল সোনারগাঁও তিতাসের আওতাধীন মেঘনা ঘাট এলাকার প্রতাবের চর, আসারিয়ারচর, যাউচর, ইস্ট টাউন, চুন কারখানা, কয়েল কারখানা সহ আসপাশের বিভিন্ন মিল কারখানা থেকে মাসিক চাঁদা আদায় করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কারখানা মালিক জানান, সময় মত টাকা না দিলে অভিযানে সংযোগ বিচ্ছিন্য করে দিলেও টাকার বিনিময়ে পুনরায় সংযোগ ফিরে পাই।
শুধু তাই নয় তার বর্তমান কর্স্থল আমিন বাজার তিতাসগ্যাসের অফিসে থেকেই সোনারগাঁও এলাকায় বিভিন্য ভাবে বাসাবাড়ি কল কারখানা মিল ফেক্টরি থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ টাকা।
এ ব্যাপারে জানতে মোস্তাফিজুর রহমানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে, তিনি প্রতিবেদকে বলেন আমি নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ২৯ কাঠা, গাজীপুরের বোর্ডবাজারে ৫ শতাংশ, ডেমরায় চার শতাংশ জমি বিক্রি করে এবং ব্যাংক থেকে ত্রিশ লাখ, অফিস থেকে ৬ বার লোন নিয়ে ও আলীকোর চার টি বিমা চালাতাম সেগুলো থেকে টাকা নিয়ে সারুলিয়ায় জায়গা কিনে বাড়ি করেছি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ডেমরার বড় ভাঙ্গা এলাকায় তার ১টি ফ্লাট রয়েছে। সিদ্ধিরগঞ্জের জায়গাটি কবে কিনেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন ১৯৮৯ সালে জায়গাটি কিনেছি। চাকরিতে যোগ দান করার সময় ১৯৮৫ সাল থেকে ২০২২ সাল এ পর্যন্ত তিনি যায়গা কিনেছেন চারটি।
১৯৮৫ সালে স্কেল তার বেতন ছিলো ১৬-১৭ শত টাকা, আর তিনি জানান বেতন পেতেন ওভারটাইম মিলিয়ে ২৫-৩০ হাজার টাকা। চাকরির শুরুটা ১৯৮৫ সাল ২০২২ পর্যন্ত চাকরির সময় কাল ৩৮ বছর। সরকারি স্কেল অনুযায়ী তিতাস গ্যাসের বাৎসরিক লাভের অংশ ৫% জুতার টাকা, কাপড়ের টাকা, শীতকালীন পোশাকের টাকা, রমজান মাসে ইফতারের বিল সহ সব মিলিয়ে তার বেতন আসার কথা ৩০-৩২ হাজার টাকা। তিনি জানান সব মিলিয়ে তার মাসিক বেতন পান এক লক্ষ টাকা।
ডেমরার বড় ভাঙ্গা এলাকার ফ্লাট সম্পর্কে তিনি বেলেন, আমি ফ্লাট মেয়ে কে উপহার দেইনি এটা আমার মেয়ের ফ্ল্যাট। মোস্তাফিজুর রহমানের দুই মেয়ে দুই ছেলে, ১ মেয়ে বিদেশে লেখাপড়া করছে, ছোট ছেলে দেশের শুনামধন্য প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পরেন।
এ বিষয়ে সারুলিয়া আইডিয়াল রোড এলাকার স্থায়ি বাসিন্দাদের কয়েক জন নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, মোস্তাফিজুর রহমান তিতাস অফিসের একজন টেকনিশিয়ান তার বেতন কত কতইবা হতে পারে? ১৯৮৫ সালে সে বেতন পেতেন ১৬-১৭ শত টাকা। সেটা ২০২২ সালে এসে দারিয়েছে ৩০,০০০ ত্রিশ,৩২ হাজার টাকায় এই টাকায়। এই বেতনে বিলাসবহুল বাড়ী, ব্যাক্তিগত গাড়ি বিভিন্ন এলাকায় যায়গা, প্লাট, সন্তানদের বিদেশে লেখাপড়া করানো ব্যাংক ব্যালেন্স কি করে সম্ভব? অবৈধ টাকা ছাড়া এত সম্পদ অর্জন অসমম্ভব যার বেন ৮৫ সালে ১২-১৪ শত টাকা সে কি করে সিদ্ধিরগঞ্জের মত জায়গায় চার বছর চাকরি করে ২৯ কাঠা জমি কিনে?।
এলাকার বাসিন্দাদের প্রশ্ন তার গ্রামের বাড়ি বরিশালে সিদ্ধিরগঞ্জ,গাজীপুরের বোর্ডবাজার, ডেমরায়, তার জায়গা আসলো কোথা থেকে আর যদি জায়গা কিনে থাকেন টাকা পেল কোথায়? বর্তমানে সে ডেমরায় ৬ তলা বাড়িতে থাকছেন সেটি করতে জায়গা ও বাড়ি করতে আনুমানিক ৫ কোটি টাকার দরকার এতেই বুঝাজায় অবৈধ পথে আয় করে তিনি বিলাসবহুল বাড়ি করেছেন।
রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষার্থে মোস্তাফিজুর রহমানের মত দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে এখনই ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। দেশের সম্পদ রক্ষা ও সরকারকে সহযোগিতা করতে এদের মত দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিলে দেশ আরো এগিয়ে যাবে বলে মনে করেন সচেতন মহল।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের টেকনিশিয়ান রফিক, সাহায্যকারী শরিফ সহ আরও ১ জনের বিরুদ্ধে গত ২৭ সেপ্টেম্বর ও ২৭ অগাস্ট সহ কয়েক বার পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে, ওই তিন কর্মচারির বিরুদ্ধে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌ. মো. হারুনুর রশীদ মোল্লাহ্ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন সচেতন মহল।