January 22, 2025, 4:03 pm

ভিক্ষুকের টাকা আত্মসাৎ করবার অভিযোগ মহিলা মেম্বারের বিরুদ্ধে

রবিউল ইসলাম পুঠিয়া উপজেলা প্রতিনিধি:রাজশাহীর, পুঠিয়া উপজেলার, জিউপাড়া ইউনিয়নে সরকারি সুযোগ সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার নাম করে গরিব-দুঃখী অসহায় মানুষের কাছ থেকে ঘুষ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় একজন মহিলা মেম্বার শারমির (লালভানু) ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে।

গত প্রায় দু বছর আগে, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের গুচ্ছগ্রামের ঘর দেবার নাম করে
পুঠিয়ার জিউপড়া ইউনিয়ন হাড়োখালী গ্রামের একজন ভিক্ষুকের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা ও বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেবার নাম করে আরো ৫ হাজার টাকা, মহিলা মেম্বার শারমিন (লালভানু) ও তার স্বামী হাসিব ঘুষ হিসেবে গ্রহণ করার অভিযোগ তুলেছেন ভিক্ষুকের স্ত্রী সুরজান বেগম।

ভিক্ষুকের স্ত্রী সুরজান বেগম বলেন, তিন সন্তান সহ আমাদের পাঁচ জনের সংসার। কোন জায়গা জমি নেই ভূমিহীন। ভিক্ষা করে সংসার চলে। খুব কষ্টে দিন পার করছি। বর্ষা বাদলে আমাদের খুব কষ্ট হয়। সেই কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া একটি ঘর পাবার আশায় মহিলা মেম্বার শারমিন (লালভানুর) দ্বারস্থ হই। পরে মহিলা মেম্বার ও তার স্বামী হাসির আমাদের একটি ঘর দেবার জন্য ৩০ হাজার টাকা দাবি করে তা আমরা খুব কষ্ট করে সংগ্রহ করে লাল ভানু ও তার স্বামী হাসিবের হাতে তুলে দেই। পরে সরকারি বয়স্ক ভাতা পাইয়ে দেবার জন্য আমাদের কাছ থেকে আরও পাঁচ হাজার টাকা তারা দুজনে নিয়ে যায়। সর্বমোট ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে দু বছর ধরে মেম্বারের পেছনে ঘুরতে ঘুরতে আমি প্রায় পাগল হয়ে গেছি। বর্তমানে আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি টাকার চিন্তায়। একদিন মেম্বারের বাসায় টাকা চাইতে গিয়ে, আমাকে টাকা না দেওয়ার কথা বলে এবং নানান রকম কথা শোনায়, পরে আমি অসুস্থ হয়ে পড়লে মেম্বারের স্বামী ডাক্তার দেখিয়ে গাড়িতে করে আমাকে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছিল। কোন সরকারি অনুদান এবং সরকারি ঘর আমাদেরকে দেয়নি। আমি যেন টাকাগুলো খুব দ্রুত ফেরত পাই সেই ব্যবস্থা আপনারা করুন। এভাবেই বলছিলেন বহু ভুক্তভোগীদের মধ্যে একজন সুরজান বেগম। ফেরত দিব দিব করে টাকাগুলো আর ফেরত দিচ্ছে না এভাবে দুই বছর অতিবাহিত করেছে মহিলা মেম্বার ও তার স্বামী। আমরা পথ-ঘাট কিছুই চিনি না। আমরা মূর্খ মানুষ। আমরা কোথায় যেয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলব। আমি মৌখিকভাবে অভিযোগ জানিয়েছি সেখানকার একজন মেম্বার সহ অনেকের কাছে। কেউ বিষয়টি নিয়ে মাথা ঘামায়নি। আমার টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে কাজও করেনি। আমি যদি জানতে পারি কোথায় গেলে এর বিচার পাবো, তাহলে সেখানে যেয়ে এর বিচার চাইবো।

বিষয়টির সত্যতা জানতে সরে জমিনে গেলে সুরজান এর প্রতিবেশী, আমজাদ হোসেন তিনি বলেন, আমি বেশ কিছুদিন আগে জানতে পারি সুরজান বেগম, মহিলা মেম্বার এর কাছে টাকা দিয়েছে একটা বয়স্ক ভাতার কার্ড আর একটা ঘর পাওয়ার জন্য। তবে আমি বর্তমানে তাদের কাছ থেকে শুনছি যে মেম্বার তাদেরকে বয়স্ক ভাতা বা সরকারের গুচ্ছগ্রামের ঘর কিছুই দেয়নি এমনকি টাকাও ফেরত দিচ্ছে না। এবং যেদিন সে টাকা চাইতে গিয়ে অসুস্থ হয়েছিল সেই দৃশ্যটা দেখে আমার খুব কষ্ট লেগেছে।

সুরজান বেগম ও তার স্বামী ভিক্ষুক সওদাগরের আরো একজন প্রতিবেশী আলহাজ্ব দিদার মন্ডল বলেন, সুরজান বেগমের স্বামী সওদাগ র ভিক্ষা করে সংসার চালায়। তাদের কোন থাকার জায়গা নেই সরকারি নদীর ধারে রাস্তার পাশে টিন দিয়ে একটি ঘর করে সেখানেই থাকে। আজকে আমি শুনলাম সুরজান বেগম মেম্বার ও মেম্বার এর স্বামীকে এতগুলো টাকা দিয়েছে যদি আগে জানতাম তাহলে আমিও ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিভিন্ন জায়গায় অনুরোধ করতাম। তারা খুবই গরীব মানুষ। তারা সরকারি কোন ধরনের অনুদান পায় না। আমরা প্রতিবেশীরা তাদেরকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের জিনিসপাতি দিয়ে সাহায্য সহায়তা করে আসছি। এমনকি ভিক্ষুক এই সওদাগরের বাসায় পানি খাওয়ার টিউবওয়েল ছিল না আমরা গ্রামবাসীরা টাকা তুলে তাদেরকে একটি টিউবয়েলের ব্যবস্থা করে দিয়েছি।

সুরজানের স্বামী সওদাগরের সাথে ভিক্ষা করেন এমন একজন মহিলা ব্যক্তি রওশনারা তিনি বলেন, সওদাগর আমি দুজনে মিলে মাঝে মাঝে একসাথে গ্রামে ভিক্ষা করতে বের হই। মাঝেমধ্যে সওদাগর নিজে একাও ভিক্ষা করতে যায়। সে অচল মানুষ কাজ কাম করতে না পারায় আমি তাকে ভিক্ষা করতে সাহায্য করি। তারা খুব কষ্টে আছে। আমি শুনেছি সওদাগরের কাছ থেকে নেওয়া টাকা ফেরত দিতে চাচ্ছে না মহিলা মেম্বার ও তার স্বামী।

এই বিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে মেম্বার শারমিন (লালভানু) অস্বীকার করে বলেন, আমি কারো কাছ থেকে কোনো টাকা পয়সা নেইনি। আমি সরকারি গুচ্ছগ্রামের ঘর দেবার কেউ নই। আপনি সরাসরি আমার সাথে দেখা করে কথা বলেন।

এ বিষয়ে ৬ নং জিউপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোসা: হোসনেয়ারা বেগমের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এবার নতুন করে টাকা নিয়েছে এই বিষয়টি আমি জানিনা। তবে এর আগের ঘটনায় একটি মামলা হয়েছিল। বর্তমানে ওই মামলায় জামিনে রয়েছে। এরচেয়ে আর বেশি কিছু জানিনা।

উল্লেখ্য যে, এর আগেও বহু মানুষের কাছ থেকে নানান রকম সরকারি সুযোগ-সুবিধা দেবার নাম করে মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন। সে বিষয়ে মামলাও হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর


ফেসবুকে আমরা