সাতক্ষীরা জেলায় ৭ টি উপজেলা, চারটি সংসদীয় এলাকায় ভাগ করে সংসদীয় গনতন্ত্রের নামে শাসন করা হচ্ছে। এখানে ক্ষমতায়ন ও গণতন্ত্রের চর্চা নিয়ে মানুষের মধ্যে যত কথাই থাকে না কেন প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সংস্কৃতিও গণতন্ত্রের চর্চা আমরা খুব বেশি দেখি না। এদেশের সব জেলারন্যয়এই জেলায় স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা মসজিদ-মন্দির মক্তব পরিচালনায় স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। এলাকায় প্রভাব প্রতিপর্তী ও ক্ষমতাসীন দেরছত্র ছায়ায় প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালিত হলেও স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতার সংস্কৃতির অভিজ্ঞতা এখনও একেবারেই সেকেলে। সচেতন জনগন অনেকটা লোকলজ্জার ও মানসম্মানের ভয়ে হাতগুটিয়ে অনেকটা সেই মান্ধাত্বার আমলেরমতসময় পার করছেন। শিক্ষা সংস্কৃতি ও মনুষ্যত্ব ও মূল্যবোধ চর্চার জন্য প্রগতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করা এখন হতাশাব্যাঞ্জক ও সুদুর পরাহত। এখন আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির যুগে অবাধ তথ্য প্রবাহ ও আমাদের সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলে, সামনে অগ্রসর হতে হলে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ নির্মানের জন্য লাগাতার উদ্যোগ ও সংগ্রাম করা প্রয়োজন।
শিক্ষায় গবেষণা, উৎপাদনে আধুনিকতার প্রভাব ও বিশ্বমানের একটি সামাজিক পরিমন্ডল সৃষ্টি এখন সময়ের দাবী। কিন্তু সেই ধরনের রাজনীতি ও সাংস্কৃতির অভাব সমাজে দেখা যাচ্ছে। এখন আমরা সমৃদ্ধ সাতক্ষীরা যদি গড়ে তুলতে চাই তবে পাশ্ববর্তী জেলাগুলোর সাথে একটা তুলনামুলক উন্নয়ন, শিক্ষা, সংস্কৃতি, যোগাযোগে চিত্র তুলে ধরা দরকার।
আামাদের সাতক্ষীরা জেলায় কলারেয়া উপজেলার ১২ টি ইউনিয়ন, তালা উপজেলায় ১২ টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা কলারোয়া নিয়ে একটি সংসদীয় এলাকা গড়ে উঠেছে।যেখানে উল্লেখযোগ্য কর্মক্ষেত্র নেই এবং এখানে তরুণ প্রজন্মকে আধুনিক বিশ্বের সাথে তুলনাকরে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করা যাচ্ছেনা। দুই উপজেলা এবং একটি পৌরসভায় বসবাসরত জনগণকে যোগাযোগ, উৎপাদন, আবাসন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বড়ই অভাব মনে হচ্ছে প্রায় ছয় লক্ষ জনগণ অধ্যুষিতএলাকায় কুটির শিল্প জোন গড়ে ওঠেনি বলেই যোগাযোগ ও জীবন মানের অধোগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এই সংসদীয় এলাকার জনসংখ্যা ও সামাজিক অবস্থার বিবেচনায় কমপক্ষে ৩ হাজার কোটি টাকা বর্তমানবাজেট থেকেবরাদ্দর্দিলে এবং গবেষণা ও উদ্ভাবনী পরিবেশ তৈরি হলে সংসদীয় এলাকা অনেক অগ্রসর হবে বলে আমার বিশ্বাস। সংসদীয় আসন তালা-কলারোয়া ১। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়ন একটি পৌরসভা নিয়ে সংসদীয় এলাকা আসন ২ একটি উল্লেখযোগ্য সংসদীয় আসন। এখানে উপজেলা চেয়ারম্যান পৌর মেয়র ও ১৪ জন ইউপি চেয়ারম্যানের সমন্বয়ে সংসদীয় এলাকা। এখানেএকটি আন্ত সংলাপ ও প্রগতি নিয়ে মাঝে মাঝে সংসদ সদস্যসহ আলোচনা করে তরুণ প্রজন্মের জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে কৃষিভিত্তিক শিল্প জোন গড়ে তুললে যুগোপযোগী সাহসী কর্মপরিকল্পনা হাতে নেওয়া জরুরী। আমার মনে হয় এই সংসদের মাননীয় সংসদ সদস্য এর উদ্যোগ নিয়ে সদর উপজেলায় বছর বছর আন্ত সংলাপের ব্যবস্থা করতে পারেন, সেটা করার জন্য উদার মানসিকতাই যথেষ্ট। সদরে বিশ্ববিদ্যালয় কৃষি ভিত্তিক শিল্প জোন ও গ্রামে গ্রামে কুটির শিল্পের প্রচার ও প্রসার দরকার সদরে বর্তমান বাজেট থেকে কমপক্ষে দুই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া প্রয়োজন। শিক্ষা, সংস্কৃতি, যোগাযোগ ও জীবনমুখী গবেষণাকে প্রাধান্য দিয়ে এই বাজেট হওয়া উচিৎ বলে আমি মনে করি।
দেবহাটা, কালীগঞ্জ, শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলাগুলো, এই চারটি উপজেলায় ইউনিয়ন আছে চল্লিশটি। চারজন উপজেলায় চেয়ারম্যান, ৪০ জন চেয়ারম্যান ও ২জন সংসদ সদস্য মিলে যে উন্নয়ন ও প্রগতির সম্ভাবনা বিরাজ করছে সেটার সমন্বয় হলে একদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা ও জীবন জীবীকায় আধুনিকায়নের ছোয়া লাগা এখন সময়ের ব্যাপার। দেবহাটা উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন ও আশাশুনির ১১টি ইউনিয়নএবংকালীগন্ঞউপজেলাথেকে৪ টিইউনিয়ন মোট ২০টি ইউনিয়ন নিয়ে সংসদীয় এলাকা ৩।এই এলাকায় যোগাযোগ ব্যাবসথার উন্নয়ন এবং ঘেরবাড়ি কেন্দ্রীক কৃষি ভিত্তিক শিল্পজোন গড়ে গুলতে হলে ইউনিয়নের ও উপজেলার চেয়ারম্যানদের সাথে।সংসদীয় এলাকার সংসদ সদস্যের আন্ত সংলাপের ব্যবস্থা থাকলে তরুণদের কর্মসংস্থানের জন্য কৃষিভিত্তিক ভিত্তিক শিল্প জোন গড়ে তোলা সম্ভব। এখানে কমপক্ষে তিন হাজার কোটি টাকা বাজেট থেকে বরাদ্দ হলে উন্নয়ন অগ্রগতির মহাসড়কে এই অঞ্চলে প্রবেশ করতে পারবে। এই সংসদীয় অঞ্চলে প্রায় ৫লাখ লোকের বাস। প্রকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা, স্থায়ী ভেড়িবাধ নির্মাণ ও সুন্দরবন কাছাকাছি আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুললে এই সংসদীয় এলাকা আধুনিকতার মহাসড়কে প্রবেশ করবে। একেবারে নাভারণ থেকে মুন্সিগঞ্জ পর্যন্ত রেললাইন চালু করার জন্য একটি বিকল্প বাজেট বরাদ্দ দিলে যশোর, খুলনা অঞ্চল সুন্দরবন পর্যটন কেন্দ্রে যোগাযোগ হলে এই সাতক্ষীরা জেলা অনেক উন্নত হবে। সুন্দরবনের মধু ভোমরা স্থলবন্দর রেললাইনের বিকল্প নেই। এই জেলায় একেবারে শেষ প্রান্তে শ্যামনগর কালীগঞ্জ সংসদীয় এলাকা ৪এ কমপক্ষে ৪হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিলে এবং এই অঞ্চলে রাস্তাঘাটের সংস্কার ও যোগাযোগ ব্যাবস্থা উন্নত হলে আধুনিক জেলার অংশ হিসেবে এই সংসদীয় এলাকা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। কৃষিভিত্তিক শিল্পজোন, যেখানে ইউনিয়নের প্রতি ওয়ার্ডে থাকবে কৃষি সমাবয় খামার, হাস মুরগী গরু ছাগলের খামার বিভিন্ন ধরনের ফলফলাদী শাকসবজীর চাষ, প্রতিটি উপজেলায় হিমাগারের নির্মাণ বিভিন্ন ধরনের খাদ্য প্রতিক্রিয়া জাত করণ প্রকল্প ও স্থানীয় মার্কেট, জাতীয় মার্কেটে পণ্য ক্রয়-বিক্রয় ব্যাবস্থার উদ্যোগ নিয়ে এই সাতক্ষীরা জেলায় কমপক্ষে ৩লক্ষ তরুণ তরুণীর কর্মসংস্থান সম্ভব। সাতক্ষীরা জেলায় প্রায় পঁচিশ লক্ষ লোকের বাস এগুলোকে উন্নয়নের মহাসড়কে সংযুক্ত করতে হলে আমি মনে করি জেলা ভিত্তিক বাজেট দরকার।
লেখকঃ অধ্যাপক ইদ্রিস আলী
শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক বাংলাদেশ জাসদ
email: mdidrisali5148@gmail. Com