April 24, 2024, 1:24 pm

বিহারীদের সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ঘেরাও সংর্ঘষ, গুলি ও টিয়াসেল নিক্ষেপ, আহত-২০, গ্রেফতার-৩২

,সিদ্ধিরগঞ্জ (১৩’জুন ২২’ইং সোমবার) ঃ সিদ্ধিরগঞ্জে পুলিশ-র‌্যাবের সঙ্গে বিহারীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় আহ৩ কমপক্ষে১৫/২০’জান। এসময় পুলিশ লাঠিচার্জ, টিয়ারসেল ও শর্টগানের গুলি করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে। সংঘর্ষ চলাকালে আদমজী এলাকার চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল সোমবার সকালে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কার্যালয়ের সামনে। এ ঘটনায় পুলিশ বিক্ষোভকারিদের ছত্রভংগ করতে প্রায় অর্ধশতাধিক টিয়ারশেল ও কয়েকশ রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষন করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গত শুক্রবার আদমজী জামে মসজিদের ভেতর পুলিশ কর্মকর্তার উপর হামলার ঘটনায় গত রোববার দিবাগত রাত ১’টা থেকে সোমবার ভোররাত ৪’টা পর্যন্ত বিহারী কলোনির ভেতর অভিযান চালায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ। অভিযানে ৩৫’থেকে ৪০’ জনকে গ্রেফতারসহ অনেক নারী-পুরুষকে লাঞ্ছিত করে ঘরের দরজা জানালা ভাংচুরের অভিযোগ আনে বিহারী কলোনির বাসিন্দারা। এই ঘটনার প্রতিবাদে বিহারী কলোনির কয়েকশত নারী-পুরুষ সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছে। এতে নারায়ণগঞ্জ-আদমজী-চিটাগাংরোড সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এ ঘটনায় বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে আদমজী ইপিজেডে প্রবেশ করতে গিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়ে শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তা। পরে পুলিশ ও র‌্যাব যৌথভাবে বিক্ষোভকারীদের লাঠিচার্জ, টিয়ার সেল ও শর্টগানের গুলি ছুড়ে ছত্র-ভঙ্গ করে দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানায়, গতকাল সোমবার সকাল ৬’টা থেকে থানা কার্যালয়ের আশপাশে অবস্থান নেয় বিহারীরা। আদমজী ইপিজেডের তিনটি প্রবেশ পথে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে। শ্রমিকদের ভেতরে ঢুকতে দিলেও কোন গাড়ি ঢুকতে বাধা দিচ্ছিল তারা।
সকাল ৮’টার দিকে বিপুল সংখ্যক নারী-পুরুষ সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কার্যালয় ঘেরাও করে প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে। তারা সড়কের উপর কাঠের টেবিল, চকি ফেলে যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
এ সময় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয় অভিযানে যদি কোন নিরপরাধ মানুষ আটক হয়ে থাকে আলোচনার মাধ্যমে তাকে ছেড়ে দেয়া হবে। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা বলে সবাইকে ছেড়ে দিতে হবে। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে তর্কে জড়ায় তারা।
এদিকে ঘটনাস্থলে সকাল ৯’টায় এসে উপস্থিত হয় নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অপারেশন) মো. আমির খসরু। তিনি বিক্ষোভকারিদের সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে তাদের মধ্য থেকে অতর্কীত পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এসময় পুলিশ বিক্ষোভকারিদের ছত্রভংগ করতে প্রায় অর্ধশতাধিক টিয়ারশেল ও কয়েকশ রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষন করে। এরপরে প্রায় ঘন্টাব্যাপী পুলিশ ও বিহারিদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
পরে সকাল সোয়া ১০’টার দিকে নাসিক ৬ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সিরাজ মন্ডল ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত হন। এসময় তিনি বিক্ষোভ কারিদের সাথে কথা বলেন। এবং তাদের বুঝিয়ে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারিরা সকাল সাড়ে ১০’টায় সড়ে যায়। পরে পৌনে ১১’টায় বিহারিরা আবার আদমজী নতুন বাজারে এসে অবস্থান নেয়। এবং আবারো ইট পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে।
এ সময় নাসিক ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলহাজ্ব মতিউর রহমান ঘটনাস্থলে আসেন। পরে তিনি বিহারিদের বুঝিয়ে আবার ক্যাম্পের ভেতরে নিয়ে যায়। এর আগে আদমজী ইপিজেডের কয়েক কর্মকর্তার ওপর হামলা করে। অপরদিকে ১৫’জন বিহারি আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে তাদের নাম জানা যায়নি।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক কয়েকজন বিহারী জানায়, কলোনির ভোলা মেম্বার হ্যান্ড মাইকিং করে লোকজন জড়ো করে। এবং ইপিজেডের পকেট গেট, রেললাইন গেটে বাধা সৃষ্টি করে। কলোনির লোকজনকে জড়ো করে থানার দিকে পাঠায়। পরে তাকে থানায় ডাকা হলেও সে যায়নি।
তারা আরও জানায়, পুলিশের মামলায় যারা আসামী হয়েছে তাদের নাম দিয়েছে পুলিশ সোর্স কলোনির ভুট্ট ও নাসিম মাস্টারের ভাই তাসলিম। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল না এমন মানুষদের নাম তারা পুলিশকে দিয়েছে।
বিহারী কলোনির চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেন জানান, গত শুক্রবার মসজিদের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। গত রোববার রাত থেকে সোমবার ভোররাত পর্যন্ত বিপুল সংখ্যক পুলিশ কলোনির ভেতর অভিযান চালায়। পুলিশ অনেক নারী-পুরুষকে মারধর করেছে।
আবার ঘটনার সময় মসজিদে যায়নি এবং হামলায় ছিল না তাদেরও গ্রেফতার করেছে। এই ঘটনায় কলোনির অধিবাসীরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। তারা আমার বাসায় এসে দরজা-জানালায় আঘাত করে। পরে আমি সকাল ৬’টার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি সাহেবকে ফোন করি। কিন্তু ফোন রিসিভ না হওয়ায় আমি থানায় ঘিয়ে বিষয়টি ডিউটি অফিসারকে জানিয়ে চলে আসি।

এরমধ্যে সকাল সোয়া ৬’টার দিকে আদমজী ইপিজেডের জেনারেল ম্যানেজার আমাকে ফোন দিয়ে জানায় তাদের গাড়ি ভেতরে যেতে পারছে না। তখন আমি ঘটনাটি তাকে অবহিত করি। তিনি হয়তো সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি সাহেবকে ঘটনা জানিয়েছেন। পরে ওসি সাহেব আমাকে ফোন দিয়ে থানায় আসতে বলে।
সকাল ৭’টার একটু আগে আমি থানায় যাই। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখি আমার কলোনির অনেক মানুষ থানার সামনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। থানার ওসি তখন বলে রাতে অভিযানে কোন নিরপরাধ লোক আটক হয়ে থাকলে আলোচনার মাধ্যমে ছেড়ে দেয়া হবে।
কিন্তু কলোনির লোকজনের দাবি সবাইকে ছেড়ে দিতে হবে। এসময় আমি কলোনির লোকজনকে অনুরোধ করে বলি আইনের বিষয় আছে যারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদেরও তো ছাড়বে না। যারা নিরপরাধ তাদের ছেড়ে দিবে বলছে। কিন্তু তারা আমার কথা শুনে নাই।
এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মশিউর রহমান, পিপিএম-বার জানান, বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে প্রায় অর্ধশতাধিক টিয়ারশেল ও শতাধিক রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষন করা হয়েছে। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে। গতকাল রাতে অভিযান পরিচালনা করে এ ঘটনায় জড়িত ৩১’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদেরকে সকালে নারায়ণগঞ্জ আদালতে পাঠানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত: গত শুক্রবার জুমআর নামাজের সময় খুদবার আগে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক সৈয়দ আজিজুল হক মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বলেন, ভারতে মহানবীকে নিয়ে কটুক্তি করা হয়েছে। প্রতিবাদ হচ্ছে। ভারতের বিষয় ভারতে থাক। ভারতে বিষয়ে এখানে আমরা না আনি। প্রতিবাদ করবো কিন্তু যেন বিশৃংখলা না হয়। তার এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে তার উপর দফায় দফায় হামলা করে তাকে রক্তাক্ত করা হয়। এ ঘটনায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক মির্জা শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে ৫০’জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত ১২০/১২৫ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করে।######

এই বিভাগের আরও খবর


ফেসবুকে আমরা