স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহ- নির্বাচন আচরণ বিধি লঙ্ঘনের দায়ে ঝিনাইদহ পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আব্দুল খালেকের প্রার্থিতা বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বৃহস্পতিবার ইসি সচিবালয়ের উপসচিব (নির্বাচন প্রশাসন) মোঃ মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন ঘোষিত সময়সূচি অনুসারে আগামী ১৫ জুন অনুষ্ঠিতব্য ঝিনাইদহ পৌরসভার নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী মোঃ আব্দুল খালেক ও তার সমর্থক কর্তৃক মিছিল-শোভাযাত্রা করে ১৮ মে প্রতিদ্বন্দি প্রার্থী মোঃ কাইয়ূম শাহরিয়ার জাহেদীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর করার ঘটনা ঘটেছে, যা ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া এবং বিভিন্ন সামাজিক যােগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। নৌকার প্রার্থী আব্দুল খালেক অপর প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী কাইয়ুম শাহরিয়র জাহেদীর প্রচারাভিযানে বাধা প্রদান করেছেন। তার বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ব্যাখ্যা চাওয়ার পর তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং ভবিষ্যতে নির্বাচন আচরণ বিধিমালা মেনে চলবেন বলে অঙ্গীকার করেন।’ এ ছাড়া একজন নির্বাচন কমিশনার গত ২৯ মে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে উপস্থিত থেকে সব প্রার্থীদের নির্বাচনী আচরণ মেনে চলার বিষয়ে মৌখিক অঙ্গীকার গ্রহণ করেন। এরপরেও আব্দুল খালেকের সমর্থকরা ১ জুন অপর প্রার্থী কাইয়ুম শাহরিয়ার জাহেদী ও তার সমর্থকদের আক্রমণ করে আহত করেন, যা বিভিন্ন পত্রিকা ও সামাজিক মাধ্যমে ভিডিওতে প্রকাশ পায়।’ প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘উল্লেখিত কার্যক্রম পৌরসভা (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০১৫ এর লঙ্ঘন একাধিকবার হয়েছে এবং উল্লিখিত ঘটনাগুলো তদন্তের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী হিসেবে পৌরসভা (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০১৫ এর বিধান লঙ্ঘন করেছেন। পৌরসভা নির্বাচন আচরণ বিধিমালা, ২০১৫ এর বিধি ৩২ অনুসারে নির্বাচন কমিশন ঝিনাইদহ পৌরসভার নির্বাচনের মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দি প্রার্থী আব্দুল খালেকের প্রার্থিতা বাতিল করলেন।’ প্রসঙ্গত, গত ১ জুন রাত সাড়ে ৭টার দিকে জেলা শহরের ধোপাঘাটা নতুন ব্রিজ এলাকায় ঝিনাইদহ পৌরসভা নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী ও আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সর্মথকদের মধ্যে ধাওয়াপালটা-ধাওয়া এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় স্বতন্ত্র প্রার্থীর গাড়িও ভাঙচুর করা হয়েছে। এতে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী কাইয়ুম শাহরিয়ার জাহেদী হিজল ও তার বড় ভাই পিপুলসহ অন্তত ৭ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী ও তার বড় ভাইসহ তিনজনের অবস্থা গুরুতর। তাদের সদর হাসপাতাল থেকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়। এদিকে রিটানিং অফিসার ওলিউল ইসলাম জানান, এ ঘটনার পর নির্বাচন আচরণ বিধি লঙ্ঘন ও প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে বৃহস্পতিবার বিকালে পায়রা চত্বরে নৌকা প্রতিকের প্রার্থী পক্ষে সমাবেশ করে। বিষয়টি কমিশনকে জানানো হয়। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনও সমাবেশ না করতে নিষেধ করে। প্রার্থীতা বাতিল নিয়ে নৌকার প্রতিকের প্রার্থী আব্দুল খালেক বলেন, প্রার্থীতা ফিরে আমি ট্রাইব্যুনালে আপীল করবো। আশা করি সুবিচার প্রতিষ্ঠিত হবে। উল্লেখ্য, ১৫ জুন ঝিনাইদহ পৌরসভার নির্বাচনকে ঘিরে সরব হয়ে ওঠে জেলা শহরের ভোটাররা। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থী হিজলের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, হামদহ এলাকায় নির্বাচনী অফিস ভাংচুর ও সর্বশেষ প্রার্থীর উপর হামলা করার ফলে শান্ত পরিবেশ অশান্ত হয়ে ওঠে। নির্বাচনে মেয়র নৌকার প্রার্থীতা বাতিলের পর টিকে থাকলো স্বতন্ত্র কাইয়ুৃম শাহারিয়ার জাহেদী হিজল, আ’লীগ থেকে বহিস্কৃত মিজানুর রহমান মাসুম এবং ইসলামী অন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মো. সিরাজুল ইসলাম।