শামীম আখতার, বিভাগীয় প্রধান (খুলনা) যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামে নকিম উদ্দিন (৬০) নামের এক বৃদ্ধাকে খুন করে চির যৌবনপ্রাপ্ত হওয়ার নেশায় পুরুষাঙ্গ, অন্ডকোষ ও চোখ তুলে নিয়ে যাওয়া বিকৃত মনের খুনি লিটনকে (৪০) ও হুকুমদাতা কবিরাজ আঃ বারেক (৬০) কে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ। তারই পাশাপাশি নিহতের পুরুষাঙ্গ, অন্ডকোষ ও চোখের মনি এবং হত্যা কাজে ব্যবহৃত চাকু, রশি উদ্ধার করেছে। গত ১জুন দুপুরে মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর থানার চরঘিওর মাঠে পুলিশ কৃষান সেজে খুনিকে এবং রাতে চুয়াডাঙ্গা জেলার লোকনাথপুর গ্রাম থেকে হুকুমদাতা ও তান্ত্রিক কবিরাজকে গ্রেফতার করে। তারা হলেন চুয়াডাঙ্গা থানার মোহাম্মদ জামা গ্রামের হানিফ আলী মালিতার ছেলে খুনি লিটন মালিতা এবং একই চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা থানার লোকনাথপুর গ্রামের মৃত মোজাম্মেল হকের ছেলে আঃ বারেক কবিরাজ।
উল্লেখ্য, গত ৩০মে (সোমবার) সকালে বাঘারপাড়া থানার পশ্চিম পাইকপাড়া গ্রামের জনৈক গৃহস্থ বেনজির আহম্মেদ এর বসতবাড়ী থেকে ধুপখালী গ্রামের মৃত দলিল উদ্দিন এর ছেলে নকিম উদ্দিন (৬০) এর মৃতদেহ উদ্ধার করে বাঘারপাড়া থানা পুলিশ।
জানা যায়, চলতি বছরের গত ২৬মে (বৃহস্পতিবার) নিহত নকিম উদ্দিন তার নিজ বাড়ীতে কাউকে কিছু না বলে বাঘারপাড়া ছাতিয়ানতলা বাজারে কৃষান দেওয়ার জন্য যায়। সেখান থেকেই নকিম উদ্দিনসহ ৩ জন কৃষানকে গৃহস্থ বেনজির আহম্মেদ তার বাড়ীতে নিয়ে যায়। এর মধ্যে ২দিন পর ১জন কৃষান চলে যায়। পরে ৩০মে (সোমবার) সকাল অনুমান ০৬:০০ ঘটিকার সময় বাড়ীওয়ালা বেনজির আহম্মেদ কৃষানদের ডাকতে গেলে সাড়াশব্দ না পেয়ে ঘরের দরজা খুলে দেখে কৃষান নকিম উদ্দিনের মরদেহ খাটে পড়ে আছে। পাশে থাকা অজ্ঞাত কৃষানকে ঘরে নেই। খবর পেয়ে পুলিশ নিহত কৃষান নকিম উদ্দিনের সুরতহাল করতে গিয়ে দেখে তার ১টি চোখ ও পুরুষাঙ্গ নেই। আশপাশে তল্লাশী করেও নিহত নকিম উদ্দিনের ডান চোখের মনি ও পুরুষাঙ্গ খুজে পাওয়া যায় না।
এই ঘটনা সংক্রান্তে নিহত নকিম উদ্দিনের ছেলে মোঃ মাজহারুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাত লোকের বিরুদ্ধে ৩১মে (মঙ্গলবার) বাঘারপাড়া থানায় একটি মামলা করেন। থানার মামলা নং-১৮।
ঘটনাটি চাঞ্চল্যকর ও মর্মান্তিক হওয়ায় জেলার পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার,বিপিএম (বার), পিপিএম ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারের জন্য মামলাটি জেলা গোয়েন্দা শাখাকে তদন্তভার প্রদান করেন।
পুলিশ সুপারের দিক-নির্দেশনায় জেলা গোয়েন্দা শাখার অফিসার ইনচার্জ রুপন কুমার সরকার এর তত্ত্বাবধানে ডিবি’র এসআই মফিজুল ইসলাম ঘটনায় জড়িতদের সনাক্তপূর্বক মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মোঃ শহিদুল ইসলাম এর নেতৃত্বে একটি চৌকশ টিম গত ৩১মে (মঙ্গলবার) থেকে যশোর, মাগুরা, ফরিদপুর জেলার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা শেষে ১জুন (বুধবার) দুপুরে মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর থানার চর ঘিওর মাঠে কৃষান সেজে ঘটনার প্রধান আসামী হত্যাকারী পালিয়ে যাওয়া কৃষান লিটনকে গ্রেফতার করে। তার স্বীকারোক্তিতে নিহত কৃষান নকিম উদ্দিনের চোখের মনি, অন্ডকোষ ও পুরুষাঙ্গ একটি খড়ের পাল্লা (বিছালী) এর মধ্য থেকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত আসামী লিটনের স্বীকারোক্তিতে ওইদিন রাতেই চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা থানার লোকনাথপুর গ্রাম থেকে হুকুম দাতা তান্ত্রিক কবিরাজ আঃ বারেককে গ্রেফতার করে। ওইসময় তার বসতঘর থেকে তান্ত্রিক কবিরাজীর বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার পূর্বক জব্দ করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীদেরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তান্ত্রিক কবিরাজ আঃ বারেক এর নির্দেশে বিকৃত মানসিকতার অধিকারী লিটন যৌন শক্তি বৃদ্ধি ও চির যৌবন প্রাপ্ত হওয়ার নেশায় দীর্ঘদিন যাবৎ নর-হত্যা পূর্বক পুরুষাঙ্গ, অন্ডকোষ ও চোখের মনি সংগ্রহ করার চেষ্টা করে। দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করে কৃষানের কাজ, রিক্সা চালিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে টার্গেট করে। হত্যার চেষ্টা ও পুরুষাঙ্গ, অন্ডকোষ ও চোখের মনি সংগ্রহের চেষ্টার একপর্যায়ে গত ২৬মে (বৃহস্পতিবার) বাঘারপাড়া সাতিয়ানতলা বাজারে এসে কৃষান হিসেবে নিয়োজিত হওয়ার আগে নিহত কৃষান নকিম উদ্দিনের সাথে তার পরিচয় হয়। নকিম উদ্দিনকে টার্গেট করে তার সাথে গৃহস্থ বেনজির আহম্মেদ এর বাড়ীতে কৃষানের কাজে নিয়োজিত হন। পরবর্তীতে গত ২৯ মে (রবিবার) দিবাগত রাতে কবিরাজ বারেকের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করে তার নির্দেশে রশি দিয়ে নকিম উদ্দিনের গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করে বিকৃত মানসিকতার অধিকারী আসামী লিটন। হত্যা পরবর্তী পরিকল্পনা মোতাবেক লিটন নিহত কৃষান নকিম উদ্দিনের পুরুষাঙ্গ ও অন্ডকোষ কর্তন ও ডান চোখের মনি নিয়ে পালিয়ে যায়।
আসামী লিটন আরো জানায়, ইতোপূর্বে তান্ত্রিক কবিরাজ আঃ বারেক তাকে যৌন শক্তি বৃদ্ধির প্রলোভন দেখিয়ে লিটনের সাথে একাধিকবার সম-কামি যৌন সঙ্গম করে বিকৃত মানসিকতা সৃষ্টি করেন। এরপর থেকে কবিরাজ বারেকের নির্দেশে লিটন বিভিন্ন পুরুষের সাথে সম্পর্ক করে প্রকৃতির নিয়মের বাহিরে যৌন সঙ্গম করে এবং পরিকল্পনা মোতাবেক পুরুষাঙ্গ, অন্ডকোষ ও চোখের মনি সংগ্রহের নিমিত্তে নর-হত্যার চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে।
যশোর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলন এর মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।