মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার দীঘা ইউনিয়নে অবস্থিত দীঘা ইন্তাজ মোল্যা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতির সাথে প্রধান শিক্ষকের দ্বন্দ চরম আকার ধারণ করেছে। সম্প্রতি বিধি বহিভর্‚তভাবে প্রধান শিক্ষককে সাময়িক বহিষ্কার করায় শিক্ষকরাও এর প্রতিবাদ করতে থাকেন। একারণে এডহক কমিটির সভাপতি তার স্বজনদের দিয়ে স্কুলে ক্লাস ও পরীক্ষা পরিচালনা করাচ্ছেন।
রবিবার সরেজমিনে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ১৫জন শিক্ষকের মধ্যে ১৩জন অনুপস্থিত। প্রধান শিক্ষকের অফিস কক্ষের তালা ভেঙে নতুন করে তালা লাগানো হয়েছে। সভাপতির আত্মীয় স্বজনরা বিভিন্ন শ্রেণির পাঠদান করছেন। কয়েকজন দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের এসএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি পরীক্ষা নিচ্ছেন।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকা সভাপতির ভাই হাসমত আলী চৌধুরী জানান, আমি চলতি বছরের ১৪ মার্চ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব গ্রহন করি। শিক্ষকরা ক্লাস ও পরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় বাধা দিচ্ছে। প্রশ্ন দিচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের বাড়ি চলে যেতে বলছে। স্কুলের পরিবেশ বিঘœ হত যদি আমি ঠিকমত মেইনটেইন না করতে পারতাম। স্যাররা ঝামেলা করে। আাসছে না। শিক্ষা অফিসার বলে গেছে আপনি আপনার মত ক্লাস চালান।
তবে বাইরে থেকে শিক্ষক ভাড়া এনে বা স্বজনদের দিয়ে ক্লাস নিতে বলেননি বলে জানিয়েছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আনোয়ার হোসেন।
জানা যায়, ২০২১ সালের ১০ অক্টোবর মো. মুরাদ চৌধুরী এডহক কমিটির সভাপতি হিসেবে বোর্ডের চিঠি পান। এরপর থেকে তার সাথে প্রধান শিক্ষক মো. ইউনুস আলীর বাদ-বিবাদ হতে থাকে। নানা অভিযোগ এনে গত ১৪ মার্চ প্রধান শিক্ষককে সাময়িক বহিষ্কারের চিঠি পাঠান সভাপতি মুরাদ চৌধুরী। এরপর ওই প্রধান শিক্ষক মাগুরা জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ দাখিল করেন। পরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে এডহক কমিটি বিলুপ্তির জন্য যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
বিদ্যালয়ের নৈশ প্রহরী ছবির হোসেন জানান, সভাপতির সাথে প্রধান শিক্ষকের ঝামেলার কারণে প্রধান শিক্ষকের কক্ষের তালা ভাঙ্গা হয়েছে। কিছু হারায়ে গেলে বা ক্ষতি হলে আমি কোনভাবেই দায়ি থাকব না।
মুরাদ চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, মাগুরা জেলা পরিষদ থেকে বিদ্যালয়ের অনুকূলে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তাতে আমাকে বাদ দিয়ে সাবেক সভাপতিকে কমিটির সভাপতি করেছেন প্রধান শিক্ষক। তিনি আমাকে বাদ দিয়ে বিদ্যালয়ের মার্কেট জামানত অগ্রীম বাবদ ৪০হাজার টাকা গোপন রেখে আদায় করেছেন। শিক্ষার্থীদের থেকে অতিরিক্ত ফি আদায় করেছেন। কারাগারে থাকাকালীন (পারিবারিক কারণে মামলায় কারাভোগ) শিক্ষক হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেছেন। ব্যাংক হিসাব থেকে জালিয়াতি করে চেকের মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ করেছেন। অবৈধভাবে গাছ কেটেছেন।
সাময়িক বরখাস্ত হওয়া প্রধান শিক্ষক ইউনুস আলী সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সব কিছু নিয়মতান্ত্রিকভাবেই করা হয়েছে। কোন অবৈধ বা অনিয়ম করা হয়নি। তবে আমাকে যে প্রক্রিয়ায় বহিষ্কার করা হয়েছে সেটা সঠিক হয়নি। কমিটির অপর দুইজন সদস্য কিছুই জানেননা বলে অঙ্গিকার দিয়েছেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রামানন্দ পাল বলেন, শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে এডহক কমিটি বিলুপ্তির জন্য চিঠি পেয়েছি। বিধি বহিভর্‚তভাবে কোন কিছু করার সুযোগ নেই। কেউ কিছু করতে পারবে না। যদি কেউ স্বেচ্ছাচারিতাভাবে কিছু করে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।