শামীম আখতার, বিভাগীয় প্রধান (খুলনা) যশোর জেলার অভয়নগর থানার ৩নং সুন্দলী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের নব-নির্বাচিত মেম্বার উত্তম সরকার হত্যার রহস্য উদঘাটন করে হত্যা কাজে ব্যবহৃত অস্ত্রগুলি ও বিস্ফোরকদ্রব্য উদ্ধার করা সহ ৫ আসামীকে গ্রেফতার করেছে যশোর জেলা ডিবি পুলিশ।
উল্লেখ্য, গত ১০ জানুয়ারী (সোমবার) সন্ধ্যা রাতে অভয়নগর থানার ৩নং সুন্দলী ইউনিয়ের হরিশংকরপুর গ্রামে হরিশংকরপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে মাঠে সুন্দলী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের নব-নির্বাচিত মেম্বার উত্তম সরকারকে অজ্ঞাতনামা দুস্কৃতকারীরা গুলি করে হত্যা করে ফেলে চলে যায়।
এই ঘটনা সংক্রান্তে নিহতের পরিবার অভয়নগর থানায় ১১জানুয়ারী একটি হত্যা মামলা করেন। যার মামলা নং-০৭।
মামলাটি ক্লুলেস ও চাঞ্চল্যকর হওয়ায় জেলার পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার, বিপিএম (বার) পিপিএম দ্রুত সময়ে রহস্য উদঘাটনের জন্য মামলাটি জেলা গোয়েন্দা শাখাকে তদন্তের জন্য নির্দেশ প্রদান করেন।
জেলা পুলিশ সুপারের দিক-নির্দেশনায় অন্যান্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ডিবি’র অফিসার ইনচার্জ রুপন কুমার সরকার, পিপিএম এর সার্বিক সহযোগীতায় পুলিশ পরিদর্শক শেখ শাহিনুর রহমান এর নেতৃত্বে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শামীম হোসেন ও এসআই মফিজুল ইসলাম, পিপিএমদের সমন্বয়ে একটি চৌকশ টিম তদন্তে নেমে গত ১৫ জানুয়ারী থেকে ১৬ জানুয়ারী ভোর পর্যন্ত খুলনা জেলার ডুমুরিয়া থানার বিভিন্ন এলাকা, যশোর জেলার অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশবপুর থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ঘটনার সাথে জড়িত ৫ জনকে গ্রেফতার করেছেন।
ওই সময় তাদের হেফাজত হতে হত্যার মিশনে ব্যবহৃত অস্ত্রগুলি, বিস্ফোরকদ্রব্য, মোবাইল ফোন ও মটরসাইকেল জব্দ করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীরা হলেন ডুমুরিয়া উপজেলার রুদাঘরা উত্তরপাড়া গ্রামের ইসাহাক গোলদারের ছেলে ইকরামুল গোলদার হরফে ছদ্মনাম জুয়েল (১৯), অভয়নগর উপজেলার সুন্দলী পূর্বপাড়া গ্রামের মৃত- ভদ্দরী বিশ্বাসের ছেলে প্রজিৎ বিশ্বাস হরফে বুলেট (৪৬) মনিরামপুর উপজেলার সুজাতপুর গ্রামের পরিতোষ বিশ্বাসের ছেলে পল্লব বিশ্বাস হরফে ছদ্মনাম সুদিপ্ত (২৪), সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার দক্ষিণ কদমতলা গ্রামের মৃত-শিব মন্ডলের ছেলে প্রশান্ত মন্ডল (৩৮), অস্থায়ী চুগনগর এলাকায় রিফাত অটো রাইচ মিলের পাশে মিল মালিকের বাড়ীর ভাড়াটিয়া। সে পূর্বে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পন করেছিল এবং ডুমুরিয়া উপজেলার দিঘলিয়া গ্রামের মৃত-বিষ্ণুপদ মন্ডলের ছেলে বিজন কুমার মন্ডল হরফে বিনোদ (৪২) তিনিও পূর্বে আত্মসমর্পন করেছিল।
আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেফতারকৃত ও পলাতক আসামীরা একটি সংঘবদ্ধ কথিত “নিউ বিপ্লবী কমিউনিষ্ট” পার্টির সক্রিয় সদস্য। তারা পরস্পর যোগসাজসে তাদের দলীয় ছদ্মনাম ব্যবহার করে দেশের দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলের জেলা সমুহে বিভিন্ন এলাকায় তাদের হেফাজতে থাকা অবৈধ অস্ত্রগুলি, বিস্ফোরকদ্রব্য ইত্যাদি ব্যবহার করে হত্যা, চাঁদাবাজি সংঘটন করে থাকে।
আরো জানা যায়, তাদের মধ্যে অনেকেই ইতিপূর্বে বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশে আত্মসমর্পণ করে পুনরায় তারা সংঘবদ্ধ হয়ে নতুন সদস্য সংগ্রহ করে নতুন দল গঠন করে অত্র জেলার অভয়নগর, মনিরামপুর, কেশবপুরসহ আশপাশ জেলা সমুহে বিভিন্ন মাছের ঘের দখল, চাঁদাবাজি ও হত্যাকান্ড সংঘটন করে থাকে মর্মে তথ্য প্রমান পাওয়া যায়।
এরই ধারাবাহিকতায় ধৃত আসামী ও পলাতক আসামীগণ পরস্পর যোগসাজসে ১০ জানুয়ারী (সোমবার) সন্ধ্যা রাতে অভয়নগর থানার হরিশপুর গ্রামে হরিশপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে ৩নং সুন্দলী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের নব নির্বাচিত ইউপি সদস্য উত্তম সরকারের নিকট চাঁদার টাকা না পেয়ে তাকে গুলি করে হত্যা করে। পরবর্তীতে হত্যাকারীরা মোবাইল ফোনে স্বীকৃতি দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শণ করে বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট চাঁদাদাবী করে বলে জানা যায়। গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত আছে।
অবৈধ অস্ত্রগুলি উদ্ধার সংক্রান্তে এসআই শামীম হোসেন বাদী হয়ে অভয়নগর ও মনিরামপুর থানায় পৃথক ০২টি মামলা দায়ের করেন। অভয়নগর থানার মামলা নং-০৯ এবং মনিরামপুর থানার মামলা নং-০৯।
আসামীদের বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা, চাঁদাবাজি মামলা আছে।
যশোর জেলা পুলিশ এক প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।