শামীম আখতার, বিভাগীয় প্রধান (খুলনা) মহামারী করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) এর নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন বৃদ্ধি পাওয়ায় আবারও বিপর্যয়ের মুখে পর্যটক শুন্য হয়ে পড়ছে সুন্দরবন এলাকায়। শীত মৌসুম আসলেই প্রতি বছরই লাখো পর্যটক ভিড় জমাতে শুরু করেন সৌর্ন্দযের লীলাভূমি সুন্দরবন দেখতে। কিন্ত গত বছরের মার্চ মাস থেকে একের পর এক করোনা প্রকটের ধাকল, তেল-গ্যাসের মুল্য বৃদ্ধিসহ স্বাস্থ্য সচেতনতার জন্য নানাবিধ পরিবহনের সমস্যা, ফলে ঘুরে দাড়াতে পারছে না সুন্দরবনের এ পর্যটক খাত এমনটাই দাবি করছেন অনেকেই। গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে কিছুটা পরিবর্তন হলেও আবারও ১৩ জানুয়ারী থেকে তৃতীয় ধাকলে শুরু হয়েছে নতুন ভেরিয়েন্ট ওমিক্রন এর বিস্তার রোধকল্পে সরকারী নির্দেশনায় সার্বিক কার্যাবলি/চলাচলে বিধি-নিষেধ আরোপ থাকায় ক্রমন্নয় কমে আসছে সুন্দরবনের পর্যটন স্পটগুলোতে ঘুরতে আসা ভ্রমন পিপাশুদের পদচারনা। ফলে এ খাতে চলতি অর্থ বছরের রাজস্বের টার্গেট নিয়ে শংঙ্কায় রয়েছেন বন বিভাগ।
সুন্দরবন বন বিভাগ সুত্রে ও সরজমিনে গিয়ে যায়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। প্রকৃতির নিজ হাতে গড়া সুন্দরবনের অপরুপ সৌন্দর্য মুগ্ধ করে যে কাউকে, সাথে প্রাকৃতির সৌন্দর্যের হাতছানি। বনের রাজা রয়েল বেঙ্গল টাইগার, কুমির, হরিণ ও নানাবিধ পশু-পাখিসহ বন্যপ্রানী স্থল ও জলজ প্রাণীর আশ্রয়াস্থল এই বন। বনের বাংলাদেশ অংশে ৬ হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটারের সুন্দরবনে জল ভাগের পরিমান ১ হাজার ৮শ’ ৭৪ বর্গ কিলোমিটার। যা সমগ্র সুন্দরবনের ৩১.১৫ ভাগ। এই বিশাল জল ভাগের ছোট-বড় ৪শ’ ৫০টি নদী ও খাল বিস্তার্ণ রয়েছে বন ঝুড়ে। বিশাল আয়তনের এই সুন্দরবনে রয়েছে সুন্দরী, গেওয়া, গরান, বাইন ও পশুরসহ ৩৩৪ প্রজাতির গাছপালা, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রল হরিণসহ ৩৭৫ প্রজাতির বনপ্রাণি। নদ-নদীতে রয়েছে বিলুপ্তপ্রায় তালিকায় থাকা ইরাবতীসহ ৬ প্রজাতির ডলফিন কুমির ও ২১০ প্রজাতির মাছ। তার বিচারন ও সুন্দরবনের সৌন্দার্য দেখার জন্য দেশী-বিদেশী লাখো দর্শোনার্থীরা ভীড় করে থাকে সুন্দরবনে। কিন্ত বিশ্বে নতুন করে ওমিক্রনের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সরকারের নতুন নিষেধাজ্ঞার কারণে পর্যটক শিল্প ও এর উপর নির্ভরশীল পেশাজীবীদের মাঝে উদ্বেগ ও আতংঙ্ক দেখা দিয়েছে। সরকারের এই নিষেজ্ঞার কারণে ক্রমন্নায়ে ধস নামছে সুন্দরবন পর্যটনশিল্পে। আবার জীবন বাঁচাতে নতুন করে লড়াই করতে হবে পরিবার পরিজন নিয়ে নির্ভরশীল এ পেশার কর্মজীবিদের। তবে এ সংঙ্কট মোকাবিলায় সরকার যদি এর সাথে সংশ্লিষ্টদের জন্য প্রণোদনা দেন তাহলে কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিতে পারবে সুন্দরবনের পর্যটক খাতে জড়িত মানুষেরা।
করোনা ভাইরাসের প্রকটে কয়েকমাস বন্ধ থাকার পর পর্যটন কেন্দ্রেগুলো খুললেও ৪ থেকে ৫ মাস পর আবারও ওমিক্রনের তৃতীয় ধাকল শুরু হয়েছে। চলতি মাসের প্রথম দিকে সরকারের পক্ষ থেকে আসে নতুন ঘোষনা। ১৩ জানুয়ারী থেকে পুনরায় করোনা নতুন ধরণ ওমিক্রনের জন্য যাতায়াত ও গাড়ীতে চলাচল সীমিত করা হয়েছে। যার ফলে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে শুক্র ও শনিবার দেশী-বিদেশী দর্শনার্থী চারের এক অংশে নেমে পড়েছে গোটা সুন্দরবনের পর্যটক স্পটে। করোনা মহামারীর পুর্বে শীত মৌশুমে শুধু মাত্র করমজল বন্যপ্রানী প্রজনন ও পর্যটন কেন্দ্র থেকে ৪০ থেকে ৪৫ লক্ষ টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে। আর সেখানে এ বছর গত সাড়ে ৪ মাসে রাজস্ব আয় হয়েছে মাত্র ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা।
করমজল পর্যটন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও বন্যপ্রানী বিশেষজ্ঞ ফরেষ্টার হাওলাদার আজাদ কবির জানান, সরকারের বর্তমানে নতুন যে নির্দেশনা আছে সেটি বন বিভাগের সরকারী কর্মজীবিরা মানতে গিয়ে পড়তে হচ্ছে বিড়ম্বনায়, তারপরেও এ নিয়ম মানতে হবে। বনরক্ষীরাও চেষ্টা করে যাচ্ছে যাতে সুন্দরবনের ভ্রমনে আসা পর্যটকরা স্বাস্থ্য সচেতন ভাবে মাক্স পরিধান করে সুন্দরবনের সৌন্দার্য উপভোগ করতে পারে। সে জন্য মাইকিং করা হচ্ছে এবং সকলকে সচেতন ভাবে চলাচলের জন্য পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এছাড়া, পর পর তিনটি ধকল পড়ছে পর্যটক খাতের উপর, তাই এ অর্থ বছরের রাজস্বের টার্গেট নিয়ে শংঙ্কায় রয়েছে বন বিভাগ।
সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম জানান, বিশ্বের মহামারীর ফলে এর প্রভাব বাংলাদেশের উপর চরম আঘাত এনেছে করোনা ভাইরাসের নতুন ধরণ ওমিক্রন। তাই সরকারের দেওয়া নিদের্শনা মানতে গিয়ে সুন্দবনের উপর নির্ভরশীল ব্যক্তিরা যাতে বেকার হয়ে না যায় তার জন্য তাদের প্রণোদনা বা সহায়তা দেওয়া উচিত। দীর্ঘদিন এভাবে চলতে থাকলে অভাব অনাটনে এই পেশার লোকজন বেকার হয়ে গেলে পর্যটন শিল্পের উপর প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বেশী বলে মনে করেন তিনি।
সুন্দরবনে প্রতি বছর শীত মৌশুমে গড়ে প্রায় এক থেকে দেড় লাখ পর্যটক ভ্রমন করেন। বারবার করোনা মহামারীতে সরকারের এই নিষেধাজ্ঞার কারণে ধস নামতে পারে সুন্দরবন পর্যটন শিল্পে এমনটাই মনে করছেন বিশেষাজ্ঞরা।