রবিউল হোসাইন সবুজ, কুমিল্লা জেলাঃ সড়ক পথে লাকসামের সাথে চট্টগ্রাম ও ফেনী’র যোগাযোগ ব্যবস্থা কখনোই তেমন জমে ওঠেনি বিশেষ করে লাকসাম থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত বাস সার্ভিস একসময়ে ছিল কিন্তু এখন নেই তাই বিশ্বাস করে লাকসামের ব্যবসায়ীগণ না থাকার কারণে মালামাল সহজভাবে আনতে খুবই কষ্ট হচ্ছে তাই তারা আশা করছে লাকসাম থেকে চট্টগ্রাম বাস সার্ভিসটি আজও কি হবে।
.
মনে পড়ে অনেক আগে একবার ভাইয়া গ্রুপের উদ্যোগে লাকসাম- চৌদ্দগ্রাম আঞ্চলিক সড়ক দিয়ে একটি বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছিলো। কিন্তু টাটা ৯০৯ মিনি বাসগুলো এই দীর্ঘপথের ভ্রমণের জন্য তেমন আরামদায়ক ছিলো না বিধায় সার্ভিসটি জনপ্রিয়তা পায় নি। এছাড়া সড়কটি এতটাই অপ্রশস্ত, সংকীর্ণ এবং ভাঙ্গাচুরা ছিলো যে, এটা কোনক্রমেই একটা আন্তঃজেলা বাস যোগাযোগের জন্য উপযুক্ত ছিলো না।
.
তারও অনেক বছর পরে তিশা এক্সপ্রেস এই রুটে বাস চালু করে। সেগুলোও ইন্ডিয়ান বাস যার গুনগত মান বা আরামব্যবস্থা মোটেও আশাপ্রদ ছিলো না। উক্ত সার্ভিসটি কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক সড়ক ব্যবহার করতো এবং পরবর্তীতে সুযোগ মত লাকসাম থেকে সার্ভিসটি উঠিয়ে নিয়ে বিশ্বরোড টু চট্টগ্রাম সার্ভিস চালু করে – যা এখনো চলছে।
.
এছাড়াও যারা ব্যক্তিগত বাহন যেমনঃ মটর সাইকেল, প্রাইভেট কার, নোহা মাইক্রোবাস ব্যবহার করে লাকসাম-চট্টগ্রাম আসা-যাওয়া করেন তারাও অনিচ্ছা স্বত্ত্বেও এই লাকসাম- চৌদ্দগ্রাম আঞ্চলিক সড়কটি ব্যবহার করেন। কারণ, এই রাস্তাটি ভাঙ্গাচুরা, বিপদজনক, সর্পিলভাবে আঁকা-বাঁকা ও দূর্ঘটনাপ্রবণ। অথচ, এই রাস্তাটি ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারলে লাকসাম থেকে চট্টগ্রামের সড়ক পথের দূরত্ব পাক্কা এক থেকে দেড় ঘন্টা কমে যেতো।
.
চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ সহ বৃহত্তর ফেনী, কক্সবাজার এমন কি মিয়ানমার থেকে পণ্য আমদানী করে এই সড়কটি ব্যবহার করলে সহজেই লাকসামে পৌছানো যায়। এই একটি সড়ক ব্যবহার করে লাকসাম-চৌদ্দগ্রাম ও লাকসাম- নাঙ্গলকোট এই তিনটি উপজেলা একই সুত্রে বাঁধা পড়ে।
.
এই রাস্তাটি ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-নোয়াখালী, চট্টগ্রাম- নোয়াখালী বা কুমিল্লা-নোয়াখালীর বিকল্প রাস্তা হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। এটি জাতীয় নিরাপত্তার জন্যেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্রিটিশ আমলে ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় এবং ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা’র যুদ্ধের সময় এই রাস্তাটি গুরুত্বের সাথে ব্যবহৃত হয়েছিলো।
.
অথচ এই রাস্তাটিতেই আছে চার চারটি অস্থায়ী বেইলী ব্রীজ, সাপের মত আঁকা-বাকা শত খানেক মোড়, হাজার হাজার খানা-খন্দ ও গর্ত। সবচেয়ে বড় কথা রাস্তাটি খুবই অপ্রশস্ত।
.
সময়ের দাবী হিসেবে এই রাস্তাটিকে অবশ্যই প্রশস্ত করা প্রয়োজন। বর্তমান সড়কের দুই পাশে ৬ ফুট- ৬ ফুট করে অন্ততঃ ১২ ফুট পর্যন্ত প্রসস্থ করা দরকার, বাঁকগুলোকে সোজা করা দরকার, বেইলী ব্রীজ নামক মরণফাঁদগুলোকে স্থায়ী কনাক্রীটের সেতু দ্বারা প্রতিস্থাপিত করা দরকার আর সবচেয়ে বেশী দরকার খানা-খন্দগুলো মেরামত করে রাস্তাটিকে যান চলাচলের উপযোগী করে তোলা।
.
সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী এবং বর্তমানের অর্থ মন্ত্রী, বর্তমানের এলজিইডি মন্ত্রী, সাবেক রেলমন্ত্রী সকলের দেশের বাড়ী এই অঞ্চলে। এনারা সকলেই স্বনামধন্য এবং সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রীবর্গ। ফলে, এখনই যদি এই রাস্তাটি নিয়ে উন্নত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও গুনগত বাস্তবায়ন করা না হয় – তবে সেটা এখন না হলে আর কখনও হবে বলে মনে হয়না?