September 13, 2024, 3:51 pm

র‌্যাব-৩ এর অভিযানে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর এলাকা হতে মানবপাচার চক্রের ০৫ জন গ্রেফতার।

প্রেস বিজ্ঞপ্তি ঃভুক্তভোগী কতিপয় ভিক্টিমরা র‌্যাব-৩ এ অভিযোগ করেন যে, একটি চক্র পার্শ্ববর্তী দেশে উচ্চ বেতনে চাকুরীর প্রলোভন দেখিয়ে অবৈধভাবে পাসপোর্ট ব্যতীত নারী ভিকটিমদের পার্শ্ববর্তী দেশে দীর্ঘদিন যাবৎ পাচার করে আসছে। উক্ত চক্র গত ২০/০৫/২০২০ তারিখে অভিযোগকারীর কন্যাকে চাকুরীর প্রলোভন দেখিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে নিয়ে যায়। কিন্তু অদ্যবধি ভিকটিমের কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। উক্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে র‌্যাব-৩ অনুসন্ধান শুরু করে। অতঃপর ভিক্টিমের দেয়া অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাব-৩ এর আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কামরাঙ্গীরচর ডিএমপি ঢাকা এলাকায় ১০/১১/২০২১ খ্রিঃ রাতে অভিযান পরিচালনা করে সংঘবদ্ধ মানবপাচারকারীর চক্রের মূলহোতা ১। মোঃ ফয়সাল (৩৪), সাং-নয়ন মাদবরের কান্দি, থানা-নড়িয়া, জেলা-শরীয়তপুর, ২। মোঃ সোহেল হোসেন (৩০), সাং-চর খলিফা, থানা-দৌলতখান, জেলা-ভোলা, ৩। মোছাঃ রুবি @ ডলির মা (৫০), সাং-মালখা নগর, থানা-সিরাজদিখান, জেলা-মুন্সিগঞ্জ, ৪। মোছাঃ সেলিনা (৪০), সাং-তেলিগাতি, থানা-গোপালগঞ্জ সদর, জেলা-গোপালগঞ্জ এবং ৫। মোছাঃ কল্পনা (৪৫), সাং-বাড়ী নং-১৮৫/১, পশ্চিম জুরাইন, থানা-শ্যামপুর, ডিএমপি, ঢাকাদেরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় এবং ধৃত সোহেলের নিকট হতে পার্শ্ববর্তী দেশের জাল আধারকার্ড জব্দ করা হয়।

ধৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে ও অনুসন্ধানে জানা যায় যে, উক্ত চক্রের মূলহোতা দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ পার্শ্ববর্তী দেশে নারী ভিকটিম পাচার করে আসছে। সে সোহেল, রুবি, সেলিনা ও কল্পনাসহ বিভিন্ন স্থানীয় দালালের মাধ্যমে ভিকটিমদের জোগাড় করে থাকে। এছাড়াও সে এবং তার সহযোগী নারী সদস্যরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উচ্চ বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে ভিকটিমদের পার্শ্ববর্তী দেশে যাওয়ার জন্য প্রলুব্ধ করে থাকে। তারপর ভিকটিমের পারিবারিক ও ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে তার অসহায়ত্বের জায়গা চিহ্নিত করে ভিক্টিমের অসহায়ত্ব ও দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাকে পার্শ্ববর্তী দেশে যাওয়ার জন্য রাজি করানোর চেষ্টা করে। ভিকটিম রাজি হলে তার পরিবারের সদস্যদের না জানিয়ে কৌশলে ভিকটিমকে ডলির মার কাছে নিয়ে রাখে। ডলির মা ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়ে মন ভোলানো কথা বার্তার মাধ্যমে ভিকটিমদের সাথে সুসর্ম্পক গড়ে তোলে। ভিকটিম তাকে তার মাতৃস্থানীয় ভাবতে থাকে। এরপর ধৃত সোহেল ভিকটিমকে বাসযোগে সীমান্তবর্তী এলাকায় নিয়ে বাংলাদেশি দালালদের নিকট হস্তান্তর করে। বাংলাদেশি দালাল সীমান্তবর্তী এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে ভিকটিমদের আশ্রয় দিয়ে থাকে। এরপর সুযোগমত পার্শ্ববর্তী দেশের দালাল মোটরসাইকেল যোগে/নদী পথে/জঙ্গল পথে পায়ে হেটে সীমান্ত পার করে দেয়। এরপর ভিকটিমদের ট্রেনযোগে পার্শ্ববর্তী দেশের একটি এলাকায় ধৃত ফয়সালের ভাড়া বাসায় নিয়ে রাখা হয়। অতঃপর ভিকটিমদের পার্শ্ববর্তী দেশের বিভিন্ন মধ্যম ও নি¤œমানের হোটেল মালিকদের নিকট হস্তান্তর করা হয়। এরপর ভিকটিমদের জোরপূর্বক অসামাজিক কাজ করতে বাধ্য করা হয়। কোন ভিকটিম অসামাজিক কাজে অস্বীকৃতি জানালে তাকে শারীরিক মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়। যেহেতু ভিকটিমদের পাসপোর্ট ছাড়া অবৈধভাবে পাচার করা হয়, তাই পার্শ্ববর্তী দেশে যাওয়ার পর তারা দালালদের নিকট জিম্মি হয়ে পড়ে। ভিকটিম উক্ত স্থান হতে পালানোর সুযোগ পেলেও বৈধভাবে বাংলাদেশে আসার কোন সুযোগ থাকে না। তখন বাধ্য হয়ে দালালদের নির্দেশ পালন করা ছাড়া তাদের কোন উপায় থাকে না।

ধৃত ফয়সাল জানায়, এভাবে অবৈধ পথে একজন ভিকটিমকে পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার করতে তার ৩৫,০০০-৪৫,০০০ টাকা খরচ হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশী স্থানীয় দালালকে ১৫,০০০-২০,০০০ টাকা, যাতায়াত খরচ ৫,০০০ টাকা এবং অবৈধভাবে সীমান্ত পার করার জন্য পার্শ্ববর্তী দেশের দালালকে ১৫,০০০-২০,০০০ টাকা দিয়ে থাকে। একজন ভিকটিমকে দিয়ে অসামাজিক কার্যক্রমের মাধ্যমে ফয়সাল মাসে এক লক্ষ হতে দেড় লক্ষ টাকা ইনকাম করে থাকে। ভিক্টিম তার আদেশ নির্দেশ অমান্য করলে সে ভিক্টিমকে পতিতালয়ে বিক্রি করে দেয়। ধৃত ফয়সাল এর নেতৃত্বে চক্রটি এ পর্যন্ত চার শতাধিক ভিক্টিমকে পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার করেছে মর্মে স্বীকারোক্তি দেয়।

ধৃত ফয়সালের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে লালবাগ থানায় ০১ টি মানবপাচার মামলা রয়েছে। এছাড়াও অবৈধ অনুপ্রবেশের জন্য পার্শ্ববর্তী দেশে ধৃত ফয়সাল দুইবার ছয় মাস করে মোট এক বছর জেল খেটেছে এবং ধৃত সোহেল ছয় মাস জেল খেটেছে।

ধৃত আসামীদের বিরুদ্ধে শ্যামপুর ডিএমপি থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর


ফেসবুকে আমরা