September 10, 2024, 11:57 am

কেশবপুরে ভাড়ায় মটরসাইকেল চালক রাসেল হত্যার রহস্য উদঘাটন, ২ আসামী গ্রেফতার

শামীম আখতার, বিভাগীয় প্রধান (খুলনা) কেশবপুর ডিগ্রি কলেজের ছাত্র ভাড়ায় মটরসাইকেল চালক রাসেল হত্যার রহস্য উদঘাটন করে ২ আসামীকে গ্রেফতার করাসহ হত্যাকাজে ব্যবহৃত চাকু জব্দ ও নিহতের মোবাইল ফোন উদ্ধার করেছে যশোরের ডিবি পুলিশ। গ্রেফতারকৃত হলেন হাসানপুর গ্রামের আব্দুর রহমান সরদারের ছেলে মোঃ মাসুদ হোসেন (১৯) ও বিষ্ণপুর আব্দুর রউফ মোড়লের ছেলে মোঃ অহিদ হাসান (১৯)।

গত ১৭ আগষ্ট সকালে কেশবপুর থানার সাগরদাঁড়ি ইউনিয়নের চিংড়া গ্রামের পূর্বপাড়া হতে শ্রীপুরগামী (ডেপার মাঠ) কাঁচা রাস্তার পাশে জনৈক আয়সা বেগমের ধানক্ষেত থেকে কেশবপুর পৌর শহরের সাবদিয়া গ্রামের মাজিদ মোড়লের ছেলে রাসেল হোসেন (২৬) নামের এক ভাড়ায় মটরসাইকেল চালকের লাশ উদ্ধার করে কেশবপুর থানা পুলিশ। এই সংক্রান্তে নিহত রাসেলের পিতা মাজিদ মোড়ল বাদী হয়ে কেশবপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-০৩।

ঘটনাটি চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস হওয়ায় জেলার পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার, বিপিএম (বার), পিপিএম মামলাটি জেলা গোয়েন্দা শাখার উপর তদন্তভার ন্যাস্ত করেন। জেলা গোয়েন্দা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ রুপন কুমার সরকার, পিপিএম এর দিক-নির্দেশনায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শামীম হোসেন মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করার পর গোপন তথ্য সংগ্রহ আসামীদের সনাক্তপূর্বক গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রাখেন।

৩০ অক্টোবর (শনিবার) গোপন তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ পরিদর্শক শাহীনুর রহমানের নেতৃত্বে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শামীম হোসেন ও এসআই মফিজুল ইসলাম, পিপিএম এর নেতৃত্বে একটি চৌকশ টিম কেশবপুর থানার হাসানপুর, বিষ্ণপুর, সাগরদাড়ি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে হত্যার সাথে জড়িত সন্ধেহে ২ যুবককে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে তাদের স্বীকারোক্তিতে রাশেল এর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও হত্যাকাজে ব্যবহৃত ১টি চাকু জব্দ করা হয়।

আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, আর্থিকভাবে লাভ হওয়ার কারনে গ্রেফতারকৃত মাসুদ হোসেন ও অহিদ হাসান ছিনতাই করার পরিকল্পনা করেন। এরপর তারা গত ১৬ আগষ্ট ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে চাকু নিয়ে কেশবপুর হতে খুলনায় যায়। সেখানে ছিনতাই করতে না পেরে রাত অনুমান ১১ টার দিকে খুলনা থেকে ট্রাকে করে চুকনগর আসে। তারপর মটরসাইকেল চালক রাসেলকে ৩ শত টাকা ভাড়া চুক্তিতে সাগরদাড়ির উদ্দেশ্যে নিয়ে যায়। পথিমধ্যে চিংড়া টেপার মাঠের মধ্যে নিরিবিলি জনমানব শুন্য এলাকায় নিয়ে রাসেলকে চাকু-ছুরির ভয় দেখিয়ে মটরসাইকেলটি ছিনতাই করতে চায়। রাসেল বাঁধা দিলে একপর্যায়ে চাকু দিয়ে পেটে আঘাত করে। নিহত রাসেল মোবাইল ফোনে বাচ্চার ছবি দেখিয়ে জীবন ভিক্ষা চাইলেও ঘাতক মাসুদ ও অহিদ তাকে জীবনে বাঁচতে না দিয়ে উপর্জুপুরি চাকু-ছুরির আঘাতে রক্তাক্ত জখম করে এবং গলার শ্বাসনালী কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে মটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায়। কিন্তু ঘাতকরা হত্যার কথা চিন্তা করে মটরসাইকেলটি ঘটনাস্থল থেকে ৫-৬ কিলোমিটার দূরে ঘোপসানা রোডে ফেলে দেয় এবং অনুমান ১০ থেকে ১৫ দিন পর রাসেলের মোবাইল ফোনটি হাসানপুর বাজারে মুদি দোকানদার শহিদুলের নিকট ৩ হাজার টাকায় বিক্রি করে মর্মে তথ্য প্রমান পাওয়া যায়।

উল্লেখ্য, সাবদিয়া গ্রামের মাজিদ মোড়লের ছেলে রাশেল হোসেন ভাড়ায় মটরসাইকেল চালানোর জন্য গত আগষ্ট (সোমবার) বিকালে বাড়ী থেকে বের হন। পরিবারের লোকেরা রাত অনুমান ১২ টার দিকে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ পায়। পরের দিন ১৭ আগষ্ট (মঙ্গলবার) সকালে উপজেলার চিংড়া গ্রামের ডেপার মাঠে ধান ক্ষেতের পাশে এলাকাবাসী লাশ দেখতে পেয়ে কেশবপুর থানা পুলিশকে খবর দেয় । খবর পেয়ে থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে। ওই সময় লোক মারফত রাসেলের পরিবার জানতে পারে চিংড়া ডেপার মাঠে একজনের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। সংবাদ পেয়ে পরিবারের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে রাসেলের মৃতদেহ সনাক্ত করেন। পরবর্তীতে থানা পুলিশ নিহতের লাশ ময়না তদন্তের জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। মৃত ব্যক্তির ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি উপজেলার গোপসানা এলাকায় রাস্তার পাশ থেকে ডিউটিকালিন সময়ে চিংড়া ক্যাম্পের পুলিশ পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে।

যশোর জেলা পুলিশ এক প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এই বিভাগের আরও খবর


ফেসবুকে আমরা