প্রেস বিগপ্তি:নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় সংঘটিত চাঞ্চল্যকর, ক্লু-লেস ও নৃশংস “”সুজন ফকির” হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী মোঃ আব্দুল মজিদ এবং হত্যাকান্ডে সরাসরি অংশগ্রহণকারী মোঃ মজজেম হোসেনকে ৩৬ ঘন্টার মধ্যে নাটোরের বাগাতিপাড়া থেকে র্যাব কর্তৃক গ্রেফতার।
র্যাব প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সমাজের বিভিন্ন অপরাধের উৎস উদ্ঘাটন, অপরাধীদের গ্রেফতার, অপরাধ দমন ও আইন শৃঙ্খলার সামগ্রিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তাছাড়া ও কোন চাঞ্চল্যকর মামলার রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য র্যাব ছায়া তদন্ত করে আসছে।
গত ১৬ অক্টোবর ২০২১ তারিখে সকাল আনুমানিক ০৭৩০ ঘটিকায় নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানাধীন নয়াবাজার এলাকায় প্রকাশ্য দিবালোকে একটি নৃশংস হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়। উক্ত ঘটনার খবর পাওয়ার পরই একই তারিখে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সজিব ফকির (২২) নামক এক ব্যক্তি গলাকাটা ও রক্তাক্ত লাশটি দেখে লাশটি তার বাবা সুজন ফকির (৪৫) বলে শনাক্ত করেন। উক্ত ঘটনার অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে নিহতের ছেলে বাদী হযে ফতুল্লা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন, যার মামলা নং ৩৭ তারিখ ১৬/১০/২০২১। এই ঘটনা স্থানীয় সকল গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় ও ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। হত্যাকান্ডের একটি সিসিটিভি ফুটেজ এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়, যা জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি করে।
উল্লেখিত বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সংগ্রহসহ ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদ্্ঘাটন ও ঘটনায় জড়িত অজ্ঞাতনামা আসামীদের গ্রেফতারের উদ্দেশ্যে র্যাব-১১ এর একটি গোয়েন্দা দল ছায়া তদন্ত শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৮ অক্টোবর ২০২১ তারিখে র্যাব-১১ ও র্যাব-৫ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল নাটোরের বাগাতিপাড়ায় যৌথ অভিযান চালিয়ে সুজিন ফকির হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী মোঃ আব্দুল মজিদ (৩৭), পিতাঃ মোঃ আফাজ, গ্রামঃ ডুমরাই সরকার পাড়া, থানাঃ বাগাতিপাড়া, জেলাঃ নাটোর এবং হত্যাকান্ডে সরাসরি অংশগ্রহণকারী মোঃ মজজেম হোসেন (২৮), পিতাঃ মোঃ মহাকাত, গ্রামঃ ডুমরাই সরকার পাড়া, থানাঃ বাগাতিপাড়া, জেলাঃ নাটোর কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
প্রাথমিক অনুসন্ধান ও গ্রেফতারকৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী মোঃ আব্দুল মজিদের স্ত্রীর সাথে নিহত সুজন ফকিররের বিবাহ বর্হিভুত সম্পর্ক ছিল। এর কারণে সমসাময়িককালে মজিদ ও তার স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ০৫ অক্টোবর ২০২১ তারিখে আব্দুল মজিদের স্ত্রী কাউকে কিছু না বলে বাড়ী থেকে বের হয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুজির পর স্ত্রীকে না পেয়ে আব্দুল মজিদের মনে সন্দেহ হয় যে, তার স্ত্রী সুজন ফকিরের হেফাজতে রয়েছে। তখন থেকেই সে তার ভাতিজা মোঃ মজজেম হোসেনকে নিয়ে সুজন ফকিরকে হত্যার পরিকল্পনা করে। হত্যাকান্ডের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আব্দুল মজিদ তার ভাতিজা মোঃ মজজেম হোসেনকে নারায়ণগঞ্জ যাওয়ার কথা বলে। মজজেম নাটোর থেকে নারায়ণগঞ্জ যাওয়ার সময় তার খালাতো ভাই মোঃ হাসান (২২), পিতাঃ মোঃ হাবিবুর রহমান, গ্রামঃ রামাগড়ি, থানাঃ বাগাতিপাড়া, জেলাঃ নাটোর কে সঙ্গে নিয়ে হত্যাকান্ডের আগের রাতে নারায়গঞ্জে আসে। আব্দুল মজিদের পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা ঘটনার দিন সকালে সুজন ফকিরের বর্তমান ঠিকানায় যায়। ঘটনার দিন সকালে আব্দুল মজিদ মোবাইল ফোনে ভিকটিম সুজনকে মোঃ মজজেম এর সাথে দেখা করতে বলে। ভিকটিম সুজন ফকির মোঃ মজজেম এর সাথে দেখা করতে আসলে মোঃ মজজেম কথা আছে বলে অটোরিক্সা যোগে অন্যত্র রওনা দেয়।
যাওয়ার পথে সকাল অনুমান ০৭৩০ ঘটিকার সময় নয়াবাজার এলাকায় চলন্ত অটোরিক্সার পিছনের সীটে বসা মজজেম সামনে বসা সুজন ফকিরের গলায় পিছন থেকে উপর্যপুরি ছুরিকাঘাত করে গুরুতর রক্তাক্ত কাটা জখম করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে র্যাব-১১ ও র্যাব-৫ এর একটি যৌথ আভিযানিক দল গত ১৮ অক্টোবর ২০২১ তারিখ নাটোরের বাগাতিপাড়ায় অভিযান চালিয়ে মূল পরিকল্পনাকারী মোঃ আব্দুল মজিদ (৩৭) এবং হত্যাকান্ডে সরাসরি অংশগ্রহণকারী মোঃ মজজেম (২৮) কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
উক্ত হত্যাকান্ডে অংশগ্রহণকারী অপর সদস্য মোঃ হাসান (২২) গ্রেফতার এড়ানোর জন্য দেশের বিভিন্ন এলাকায় আতœগোপন করে আছে। তাকে গ্রেফতার করার জন্য র্যাব-১১ এর অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয়কে সংশ্লিষ্ট মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট হস্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।