April 16, 2024, 11:16 pm

মরণব্যাধী ক্যানসরের সঙ্গে যুদ্ধ করে হারালেন স্ত্রী সহ পরিবারের ৬ সদস্য!

স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহ-মরণব্যাধি ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে হাফিয়ে উঠেছেন বৃদ্ধ আব্দুর রশিদ। পরিবারের একাধিক সদস্যের চিকিৎসা ব্যায় নির্বাহ করতে সর্বশান্ত তিনি। একে একে মারা গেছেন স্ত্রী, দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। বংশ রক্ষার জন্য ছিল একমাত্র নাতি আল আমিন (১০)। সর্বশেষ মরণব্যাধী ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে সেও চলে গেলো পরোপারে। এখন বেঁচে আছেন শুধু আল-আমিনের পিতা মঙ্গল আলী (৪০)। বৃদ্ধ বয়সে মৃত্যুর মিছিল দেখতে দেখতে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন বৃদ্ধ আব্দুর রশিদ। এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কয়ারগাছি গ্রামের ৭৫ বছর বয়সি আব্দুর রশিদ বিয়ে করেন কোটচাঁদপুর উপজেলার ইকড়া গ্রামের আকবার আলীর মেয়ে সাহিদা বেগমকে। বিয়ের পর তিন ছেলে এবং দুই মেয়ের জনক হয় এই দম্পত্তি। ছেলে আর পুত্রবধূদের নিয়ে চলছিল তার জীবন। ২০ বছর আগে স্ত্রী সাহিদা স্তন ক্যানসারে মারা যান। স্ত্রীর মৃত্যুর ছয় বছর পর বড় ছেলে রবিউল ইসলামের (৩০) মাথায় টিউমার ধরা পড়ে। মাত্র এক মাসের মধ্যে তিনিও মারা যান। ১৪ বছর পর স্তন ক্যানসার ধরা পড়ে বড় মেয়ে খালেদা খাতুনের। তখন তার বয়স ২৮ বছর। এক বছর চিকিৎসাধীন থেকে খালেদাও মারা যান। বড় মেয়ের মৃত্যুর এক বছর পর স্তন ক্যানসার ধরা পড়ে ছোট মেয়ে সেলিনা খাতুনের (২৪)। পাঁচ মাসের চিকিৎসা শেষে সেলিনাও মারা যান। চার বছর আগে ছোট ছেলে সফি উদ্দিন (২০) লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ক্যানসারে আক্রান্ত স্ত্রী, ছেলে ও মেয়েদের চিকিৎসা করাতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে পথে বসেন বৃদ্ধ আব্দুর রশিদ। এখন তার শুধু এক ছেলে মঙ্গল আলী বেঁচে আছেন, তারও হাঁটুতে টিউমার দেখা দিয়েছে। তার জীবন নিয়েও শংকায় রয়েছে পরিবারটি। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ খুরশিদ আলম জানান, ক্যানসার চিকিৎসা করাতে গিয়ে আব্দুর রশিদ এখন নিঃস্ব। সম্পদ বলতে আর কিছুই নেই। সব কিছু বিক্রি করতে করতে পরিবারটি এখন ভিটে মাটি হারিয়ে খাস জমিতে বসবাস করছেন। চেয়ারম্যান আরো জানান, বৃদ্ধ আব্দুর রশিদের নাতি আল-আমিনের মাথায় টিউমার ধরা পড়ে চার মাস আগে। ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স ও হাসপাতালে থেকে দীর্ঘ চার মাসের চিকিৎসা শেষে বৃহস্পতিবার তাদের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাড়িতে ফেরত পাঠায়। গত শুক্রবার আল-আমিনের মৃত্যু হয়। বৃদ্ধ আব্দুর রশিদ জানান, ক্যানসারে স্ত্রী, ছেলে-মেয়ের পর বংশের শেষ বাতিটিও নিভে গেল। নাতি খড়িখালী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত। হরিণাকুন্ডুর হোমিও চিকিৎসক ডাঃ নজরুল ইসলাম জানান, বংশ পরস্পরায় পরিবারটি ক্যানসারের জীবানু বহন করছে। এটা একমাত্র হোমিও চিকিৎসায় নিরাময় সম্ভব ছিল। ঝিনাইদহের সিভিল সার্জন ডা. সেলিনা বেগম বলেন, এই পরিবারটির বিষয়ে শুনেছি। একই পরিবারে ক্যানসারের ঘটনা বংশগতভাবে হতে পারে। মায়ের পর পর ছেলে-মেয়েদের হয়েছে। আগে থেকে এই রোগের চিকিৎসা নিলে ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে একই পরিবারে এতগুলো মানুষের জীবনে এমন মর্মান্তিক ঘটনা আগে কখনো শোনা যায়নি।

এই বিভাগের আরও খবর


ফেসবুকে আমরা