April 19, 2024, 1:52 pm

তুমি কিছু করলে বসুন্ধরা গ্রুপ শেষ হয়ে যাবে-মুনিয়াকে শারুন চৌধুরী ব্যাংকার মোরশেদ ও মুনিয়ার আত্মহত্যার নেপথ্য নায়ক কি হুইপপুত্র শারুন চৌধুরী?

চট্টগ্রামের ব্যাংক কর্মকর্তা মোর্শেদ চৌধুরীর আত্মহত্যার প্ররোচনা আর ঢাকার গুলশানের মোসারাত জাহান মুনিয়ার আত্মহত্যা যেন এক সুতোয় গাঁথা। গত কয়েকদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী বিভিন্ন তথ্য প্রমাণ ও ঘটনা সংশ্লিষ্ট অনেকের বক্তব্য এক ব্যক্তিকেই যেন ইঙ্গিত করছে। তার নাম, হুইপপুত্র নাজমুল করিম চৌধুরী শারুন। বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবাহান আনভীরকে ফাঁসাতেই শারুন চৌধুরী মুনিয়াকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিয়েছেন বলে অনেকেই অভিযোগ করছেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন কথোপকথনে মুনিয়াকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেন শারুন চৌধুরী। এমটাই বোঝা যাচ্ছে এগুলো দেখে। এই ঘটনার নেপথ্যের নায়ক শারুন চৌধুরীকে গুলশান থানা পুলিশ ইতিমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। ইতিমধ্যে এ খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। শুধু তাই নয় এই ঘটনার সঙ্গে শারুন চৌধুরীর জড়িত থাকার বিষয়ে আঙ্গুল তুলেছেন মুনিয়ার খুবই ঘনিষ্ট ফারিয়া মাহাবুব পিয়াসা ও শারুন চৌধুরীর সাবেক স্ত্রী সাইফা মীমসহ বেশ কয়েকজন ঘনিষ্টরা। তারা দাবী করছেন, বসুন্ধরা এমডিকে বিপাকে ফেলতে মুনিয়ার সঙ্গে নানা ধরনের কথা বলতো শারুন চৌধুরী। শারুন চৌধুরী নানাভাবে প্ররোচনা দিতো, মুনিয়া তুমি উল্টা পাল্টা কিছু একটা করে ফেললেই বসুন্ধরার এমডিকে তছনছ করে দেয়া যাবে বলেও উস্কানি দেয়া হতো বলেও তারা অভিযোগ করেন।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ম্যাজেঞ্জারের শারুন চৌধুরী ও মোসারাত জাহান মুনিয়ার কথোপকথনের একাধিক কপি এ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। মুনিয়া আত্মহত্যার ঘটনার কিছুদিন আগেই মুনিয়া ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে শারুন চৌধুরী কথোপকথনের এক পর্যায়ে ইনবক্সে লিখেন, আপনি প্লিজ আমাকে দেখবেন, আমি মারা গেলে আমার ফ্যামেলিকে দেইখেন। মুনিয়ার কথার জবাবে শারুন চৌধুরী ইনবক্সে মুনিয়াকে লিখেন, আরে তুমি কিছু করলে বসুন্ধরা গ্রুপ শেষ হয়ে যাবে, কোন দরকার হলে আমাকে টেলিগ্রামে নক দিও। আর আমার নামে নিউজ করে ওরা আমার কি—ছিড়বে? সরকারের উপর মহল আমার বিষয়ে জানে। সো ওদের গনায় ধরার সময় নাই। শারুনের কথার জবাবে মুনিয়ার উত্তর- আমি মারা গেলে আমার ফ্যামেলিকে দেইখেন।

কথোপকথনের মাঝে মুনিয়া ইনবক্সে শারুন চৌধুরীকে লিখেন, গত বছরে আমি খুবি কষ্টে ছিলাম, আপনি তো আমার পাশে না দাঁড়ালে কি করতাম জানি না। জবাবে শারুন চৌধরী লিখেন, আরে ওইটা কোন ব্যাপার না, তুমি আমার সঙ্গে আছো এটাই আমার বড় পাওয়া, আর ৫ লাখ কোন টাকা না আমার জন্য। আমি তো তোমাকে লাইক করি, তুমি তো জানো। শারুন চৌধুরীর লেখার জবাবে মুনিয়া লিখেন- এইটা আমি কোন দিন ভুলবো না, আমার বোন বলছে, আপনি একটা ফেরেস্তা, আপনার জীবনে আপনার ওয়াইফের আগে যদি আমি আসতাম! উত্তরে শারুন চৌধুরী লিখেন, আমি ভালো মানুষ না, জাস্ট মানুষের উপকার করি।

শারুন চৌধুরী এবং মুনিয়ার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কথপোকথনের স্ক্রিন শটের সূত্র ধরে, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। এ প্রসঙ্গে শারুন চৌধুরী বলেন, তার কাছে মঙ্গলবার বিকেলে একটি সূত্র মোসারাতের সঙ্গে কথপোকথনের বিষয়ে জানতে চান। উত্তরে তিনি বলেন, মুনিয়াকে তিনি আগে থেকে চিনতেন। গত বছর ফেসবুকে তার সঙ্গে মুনিয়ার যোগাযোগ শুর’ হয়।

পুলিশের তদন্ত, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মুনিয়া-সারুনের কথপোকথনের স্ক্রিনশট আর বিভিন্ন মাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্য ইঙ্গিত দিচ্ছে, নিজের প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই মুনিয়াকে চাল হিসেবে ব্যবহার করেছে শারুন চৌধুরী। যার মূল উদ্দেশ্য ছিলো, বসুন্ধরা গ্রুপকে ধ্বংস করা। একইভাবে, একই কৌশল অবলম্বন করে শারুন চৌধুরী চট্টগ্রামের ব্যাংক কর্মকর্তা মোরশেদ চৌধুরীকে আত্মহত্যায় বাধ্য করেছিলো। বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, এই দুটি ঘটনা একই সূত্রে গাঁথা। শুধু এই দুটি ঘটনাই শুধু নয়, বহু বছর ধরে, শারুন চৌধুরী, একইভাবে আরো অনেকের জীবন ধ্বংস করে, নিজের স্বার্থ উদ্ধার করে আসছে।

এনটিভির সুপার হিরো, সুপার হিরোইন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শোবিজ জগতে আসা ফারিয়া মাহাবুব পিয়াসা ঘনিষ্ট ছিলেন গুলশানে মারা যাওয়া তরুণী মোশারাত জাহান মুনিয়া। মুনিয়ার আত্মহত্যার পিছনে চট্টগ্রামের পটিয়া থেকে নির্বাচিত এমপি ও সংসদের হুইপ শামসুল হক চৌধুরীর পুত্র নাজমুল করিম চৌধুরী ওরফে শারুন চৌধুরীর ইন্ধন থাকতে পারে বলে তিনি মনে করেন। ফারিয়া মাহাবুব পিয়াসা বলেন, মুনিয়াকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি। মুনিয়া মারা যাওয়ার ঘটনার সঙ্গে শারুনের যোগসাজশ রয়েছ। কারণ এই ঘটনার নেপথ্যে আরও অনেক কাহিনি আছে। এই মেয়ে (মুনিয়া) একটি সাইকো, শারুনের সঙ্গে খুবই ঘনিষ্টতা ছিলো। সায়েম সোবাহান আনভীর সাহেবকে ফাঁসাতেই বেশ কয়েকবার বৈঠক করেছেন এই মুনিয়া। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এই ঘটনার আগে মেয়েটিকে আমরা কুমিল্লায় পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু প্রচন্ড লোভী একটা মেয়ের টাকার জন্য সব কিছুই করতে পারে মেয়েটি। মুনিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্টতা ছিলো এমনই আরো একজন নারী নাম প্রকাশ করার শর্তে বলেন,‘ আনভীর সাহেবকে খুবই বিরক্ত করতো মুনিয়া। মুনিয়ার ডাকে সাড়া না দেয়ায় শারুনের সঙ্গে বেশ কয়েক বার বৈঠক করেছিল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও নিয়মিত কথা হতো। শারুনই নানাভাবে আত্মহত্যায় মুনিয়াকে প্ররোচিত করেন বলে মনে হচ্ছে। কারণ শারন চৌধুরীর সঙ্গে বসুন্ধরা গ্রুপের এমপি আনভীর সাহেবের সঙ্গে বিরোধ ছিলো। আর এই বিরোধের সুযোগ নিয়েছে শারুন চৌধুরী। মুনিয়া মারা যাওয়ায় লাভবান হয়েছে শারুন চৌধুরী, আর এই আত্মহত্যার পিছনে শারুন বড় ধরনের ভুমিকা রেখেছে।

একইভাবে শারুন চৌধুরীর সাবেক স্ত্রী সাইফা মীম অভিযোগ করে বলেন,‘ শারুন চৌধুরীর সঙ্গে মুনিয়ার ঘনিষ্ট যোগাযোগ ছিলো, সেই মুনিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্টতার কারণেই আমার উপর চালাতো ভয়ংকর নির্যাতন। সেই নির্যাতনের কোন সীমা ছিলো না। আমার মনে হচ্ছে এই ঘটনার সঙ্গে শারুনের জড়িত থাকতে পারেন বলে তিনি মনে করেন।

মুনিয়র মতোই শারুন চৌধুরীর লোভ আর রোষানলের শিকার হয়েছেন চট্টগ্রামের ব্যাংকার মোরশেদ চৌধুরী। যা সম্প্রতি গোটা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে। এই শারুন সিন্ডিকেটের চাপেই গত ৭ এপ্রিল চট্টগ্রামের নিজ বাসায় আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন তিনি। এ নিয়ে গত, ২৪ এপ্রিল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে মৃত ব্যাংক কর্মকর্তা মোরশেদ চৌধুরীর স্ত্রী ইশরাত জাহান চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১২ আসনের সংসদ সদস্য ও হুইপ সামসুল হক চৌধুরীর ছেলে শারুন চৌধুরীসহ অন্যন্য অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। তিনি বলেন, এই আত্মহত্যার ঘটনায় প্ররোচনাকারী হিসেবে ছিলেন শারুন চৌধুরী। ইসরাত জানান, হুইপপুত্র শারুন চৌধুরী আর সাবেক ছাত্রনেতা আরশাদুল আলম বাচ্চুর অব্যাহত চাপ, হুমকি ও হামলার কারণে নিরুপায় হয়ে ব্যাংকার মোরশেদ চৌধুরী আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।

২০১০ সাল থেকে মোরশেদ তার আপন ফুফাতো ভাইদের সঙ্গে ব্যবসা করছিলেন। কোনো নথিপত্র ছাড়া তাঁরা মোরশেদকে ২৫ কোটি টাকা ঋণ দেন। তিনিও তাঁদের ৩৫ কোটি টাকা শোধ করেন। ২০১৮ সালের দিকে এসে তিনি ওই ব্যবসার কথা পরিবারের অন্যদের জানিয়ে ব্যবসাটা সেখানেই বন্ধ করে দিতে চান। তবে, এই ঘটনার মধ্যে, ২০১৯ সালের মে মাসে আবির্ভাব হয় শারুন চৌধুরীর-এমন তথ্য জানান, ইশরাত জাহান। মে মাসে একদিন শারুন চৌধুরী মোরশেদকে ফোন করে, চট্টগ্রামের রেডিসন হোটেলে আসতে বলে। মোরশেদ আপত্তি জানালে শারুন বলেন, লেনদেন তার সঙ্গেই করতে হবে। পাশাপাশি তাকে বিভিন্ন কথা বলে ভয়-ভীতিও দেখায়।

ইশরাত জাহান চৌধুরী জানান, এর কিছুক্ষণ পরেই ১০-১২ জন যুবককে সাথে নিয়ে শারুন চৌধুরী মোরশেদের বাসায় যায়। সিসিটিভি ফুটেজে শারুনকে দেখা না গেলেও তিনি গাড়ীতেই ছিলেন বলে, প্রত্যক্ষদর্শী এবং মোরশেদের স্ত্রী’র দাবি। এভাবেই দিনের পর দিন টাকার জন্য চাপ দেয়া এবং ভয়-ভীতি দেখানোর ফলাফল, এক কন্যার জনক ব্যাংকার মোর্শেদ চৌধুরীর আত্মহত্যা।

ইশরাত চৌধুরী আরো জানান, মামলার ৪ আসামী চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক জাবেদ ইকবাল, তার ভাই পারভেজ ইকবাল, নাঈম উদ্দিন সাবিক এবং যুবলীগ নেতা শহীদুল হক চৌধুরী রাসেল, প্রত্যক্ষভাবে সারুন চৌধুরীর সহযোগী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন ছবি এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাদের একসাথে চলা ফেরা। এই প্রসঙ্গে, প্রয়াত মোরশেদ চৌধুরীর স্ত্রী’র দাবি, এরা সবাই শারুন চৌধুরীর চেলাপেলা। তাদের সামনে রেখে পেছন থেকে এই আত্মহত্যা প্ররোচনার পুরো কলকাঠি নেড়েছে হুইপপুত্র শারুন চৌধুরী। সূত্র: দেশ রূপান্তর

এই বিভাগের আরও খবর


ফেসবুকে আমরা