September 10, 2024, 2:52 pm

স্ত্রীর সাথে পরকীয়ার জের ধরে এক ইউপি সদস্যের অত্যাচারে ৬ মাস ঘর ছাড়া স্বামী

শামীম আখতার, ব্যুরো প্রধান (খুলনা): কেশবপুরে পরকীয়ার জের ধরে এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীকে পূর্বের স্বামীর ঘরের তালা ভেঙ্গে উঠিয়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এ কাজে সহযোগীতা করেছেন ৪নং বিদ্যানন্দকাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানও। স্বামীর দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে চেয়ারম্যান, মেম্বার ও এলাকার মাতব্বরসহ দলীয় শীর্ষ নেতাদের সমন্বয়ে সালিশ বৈঠক হলেও তার কোন প্রতিকার ঘটেনি। সালিশ-বৈঠকের নামে হয়েছে শুধু আর্থিক দেনদরবার। তাদের এমন কর্মকান্ডে ৬ মাস যাবৎ ঘরছাড়া স্বামী আব্দুস সালাম কোন প্রতিকার না পেয়ে অবশেষে ১৩ এপ্রিল ২০২১ তারিখ যশোর পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। পুলিশ সুপার অভিযোগটি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য কেশবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কে নির্দেশ দিয়েছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বিদ্যানন্দকাটী ইউনিয়নের বাউশলা গ্রামের আব্দুস সালাম আর স্ত্রী খাদিজা খাতুনের বিদ্যানন্দকাটী ইউনিয়ন পরিষদের ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মাহাবুবুর রহমানের সাথে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক থাকায় ২০২০ সালের ২৬ আগস্ট ম্যারেজ রেজিষ্ট্রারের মাধ্যমে তালাক প্রদান করে। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ইউপি সদস্য মাহাবুবুর রহমান স্বামী আব্দুস সালামকে তার নিজ বসত ভিটা থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়ে জোরপূর্বক অবৈধ ভাবে ঘরের তালা ভেঙ্গে তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী খাদিজা খাতুনকে ঘরে তুলে দেয়। এ সময় ইউপি সদস্য মাহাবুবুর রহমান আব্দুস সালাম তার বসত ভিটায় প্রবেশ করলে পা ভেঙ্গে দেওয়াও হুকমী প্রদান করে। এরপর ঘরে তুলে দেওয়া তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী খাদিজা খাতুনকে ইউপি সদস্য মাহাবুবুর রহমান নির্দেশ দেয় আব্দুস সালাম ঘরে প্রবেশ করলেই গাছি দা দিয়ে হত্যা করে দেওয়ার। সেই থেকে স্বামী আব্দুস সালাম জীবনের ভয়ে নিজ পৈত্রিক বসত ভিটা ছেড়ে অন্যত্র মানবেতর জীবন-যাপন করছে। উপজেলা বাউশলা গ্রামের মৃত ওমর আলী গাজী ছেলে আব্দুস সালামের সঙ্গে পাশ্ববর্তী সাতক্ষীরা জেলার পাটকেলঘাটা থানার মানিকহার গ্রামের মৃত আ. হামিদ দালালের মেয়ে মোছা: খাদিজা খাতুনের সঙ্গে ১৯৯৯ সালের ৫ জুলাই উভয় পরিবারের সম্মতিতে ইসলামী শরিয়াত মোতবেক বিবাহ সম্পন্ন হয়। এরপর স্বামী আব্দুস সালাম স্ত্রীকে নিয়ে পরিবারের সকলের সঙ্গে পৈত্রিক ভিটায় মাটির ঘরে বসবাস করত। পৈত্রিক বসত ভিটায় সকলের সংকুলান না হওয়ায় ২০০১ সালে আমি বসত ভিটার সীমাণায় বাগান ঘেসে ইটের গাঁথুনি টালির ছাউনি বিশিষ্ঠ একটি বসত ঘর তৈরি করে বসবাস শুরু করি। ওই বসত ঘর সংলগ্ন আমার বড় চাচার নিকট থেকে বসত ভিটার জন্য আরোও ১ শতক জমি ক্রয় করি। যা পরবর্তীতে আমার স্ত্রীর নামে হাফ শতক ও আমার নামে হাফ শতক রেজিস্ট্রি করি। এরপর আমাদের ঔরসে ২০০২ সালে ১টি পুত্র সন্তান ও ২০০৪ সালে ১টি পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। আমাদের সংসার সুখে-শান্তিতে চলছিল। অভাবের তাড়নায় ২০১৬ সালে ছেলেদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে প্রায় ৪ লক্ষ টাকা ঋণ করে রোজগারের জন্য মালয়েশিয়া যায়। মালয়েশিয়ায় দীর্ঘ ৪ বছরের সকল আয় ৯ লক্ষ টাকা স্ত্রী মোছা: খাদিজা খাতুনের নামে অগ্রণী ব্যাংক, কেশবপুর শাখার ০২০০০১০১১৮৮৫১ হিসাবে পাঠায়। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরে উক্ত টাকার হিসাব চাইলে স্ত্রীর সঙ্গে মনোমানিল্য সৃষ্টি হতে থাকে। স্বামী দিশেহারা হয়ে প্রতিবেশীসহ নিকট আত্মীয়দের কাছে পরামর্শ নিতে গিয়ে টাকার সন্ধান না পেলেও স্ত্রী মোছা: খাদিজা খাতুনের পরোকিয়ার সন্ধান পায়। মালয়েশিয়া থেকে স্ত্রীকে পাঠানো টাকা চাওয়ায় ও পরোকিয়ার প্রতিবাদ করায় স্বামীর কথার অবাধ্য হয়ে চলাফেরা করা, সংসারের ক্ষতি সাধন, কারণে-অকারণে অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজসহ হত্যার চেষ্টায় লিপ্ত হয়ে পড়ে। জীবন রক্ষার্থে ২০২০ সালের ২৬ আগস্ট সকল নিয়ম মেনে ম্যারেজ রেজিষ্ট্রারের মাধ্যমে তালাক প্রদান করে। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে কেশবপুর উপজেলার বিদ্যানন্দকাটী ইউনিয়ন পরিষদের ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার মাহাবুর রহমান স্ত্রীর সঙ্গে পরোকিয়া প্রেমের সম্পর্ক থাকায় নানা ষড়যন্ত্র করতে থাকে। ওই মেম্বার বিদ্যানন্দকাটী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন জোগসাজসে ২০২০ সালের ২৮ আগস্ট জুম্মার দিন বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে স্বামীর বসত ঘরের তালা ভেঙ্গে তালাক দেওয়া স্ত্রীকে ঘরে তুলে দিয়ে যায়। স্বামী বাড়ি ফিরে সকল ঘটনা শুনে মেম্বারের নিকট বিষয়টি জানতে চাইলে সে সাফ জানিয়ে দেয় ওই জমি তোর স্ত্রীর নামে সে কারণে এখন থেকে তোর তালাক দেওয়া স্ত্রী এই ঘরে থাকবে। তুই তোর মত পথ দেখ। ওই সময় মেম্বার তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীকে নির্দেশ দিয়ে যায় বসত ভিটায় উঠলেই ওকে গাছি দা দিয়ে হত্যা করে দিবি। এ বিষয়টি মিমাংসার জন্য বিদ্যানন্দকাটী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেনের নিকট অভিযোগ করেন। তিনি ওই মেম্বারের কথায় সু-বিচার না করে দীর্ঘদিন ঘোরানোর পর একটি প্রহসন মূলক বিচার করে এবং মিমাংসার নামে স্বামীর নিকট ২ লক্ষ টাকা উৎকোচ দাবী করে। উৎকোচের টাকা দিতে না পারায় ওই চেয়ারম্যান, মেম্বর ও প্রতিবেশী মৃত খোদাবক্সের ছেলে সামছুর রহমান তাদের লালিত সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে তাকে বিভিন্ন সময় ভয়ভীতি, মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রাণী করাসহ জীবননাশের হুমকী অব্যাহত রাখে। এরপর ঘটনাটি জটিল হওয়ায় উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি/সম্পাদককে মাধ্যম করে যশোর- ৬ (কেশবপুর) আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য বরাবর লিখিত আবেদন করেন। পরবর্তীতে যশোর- ৬ (কেশবপুর) আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য বিষয়টি উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি/সম্পাদককে বিচারের দায়িত্ব দেন। সে মোতাবেক উভয় পক্ষকে ডেকে সালিশি বৈঠকে তালাক দেওয়া স্ত্রীকে বসত ভিটা থেকে চলে যেতে বল্লেও শুধুমাত্র কেশবপুর উপজেলার বিদ্যানন্দকাটী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন ও ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার মাহাবুর রহমানের ইন্দোনে বসত ভিটার জমি নিজের দাবি করে এখনও বহাল রয়েছে। এমনকি আমাকে মাহাবুর মেম্বারের সহযোগিতায় গলা ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয় এবং আমি আমার বসত ভিটায় গেলে মেম্বার আমার পা ভেঙ্গে দেওয়ার হুমকী দেয়। আর সেই থেকে বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা, প্রতিবেশী ও আত্মীয়ের বাড়িতে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন স্বামী আব্দুস সালাম। তাদের স্বামী-স্ত্রীর দির্ঘদিনের গলযোগের বিষয়টি মিমাংশার জন্য বারবার সালিশ-বৈঠক হলেও কোন প্রতিকার হয়নি বরং উক্ত চেয়ারম্যান, মেম্বার, রফিকুলসহ অনেকই বিচারের নামে করে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। উপজেলার বিদ্যানন্দকাটী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন ও ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মাহাবুবুর রহমান ক্ষিপ্ত হয়ে অভিযোগকারীকে বিভিন্ন প্রকারের হুমকী ধামকী প্রদানের কারণে জীবনের নিরাপত্তাহীনতার রয়েছে বলে ওই গৃহছাড়া স্বামী জানান।
পরোকিয়া ও স্বামীর ঘরের তালা ভেঙ্গে ঘরে তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীকে তুলে দেওয়ার ঘটনার বিষয়টি স্থানীয় ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মাহাবুবুর রহমান কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জামালের স্ত্রীর সাথে আমার কোন পেরোকিয়া প্রেমের সম্পর্ক নেই, তার স্ত্রী আমার বাড়িতে শুধুমাত্র কাজের সুবাদে যাতায়াত করে থাকে। আমি তার স্বামীর বসত ঘরের তালা ভেঙ্গে স্ত্রীকে ঘরে তুলে দেয়নি, কাউকে হত্যার হুমকি-ধামকি দিয়ে গলা ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয়নি তবে তার স্ত্রী তালাকের বিষয়টি আমাকে জানালে পরিবারের কথা চিন্তা করে তার স্ত্রীকে সাহায্য করেছি।
এ বিষয়ে তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী খাদিজা খাতুন বলেন, আমার স্বামী দীর্ঘদিন বিদেশে থাকতেন। আশপাশের মানুষের কথা শুনে সন্দেহের বশবর্তী হয়ে আমাকে তালাক দিয়েছে। বাপের বাড়ি থেকে ফিরে এসে তালা ভেঙ্গে ঘরে প্রবেশ করি। তার সাথে সংসার করার লক্ষে অদ্যবধি সেই ঘরেই রয়েছি। আমার স্বামী একটি কুচক্রী মহলের ইন্দনে পড়ে সেই থেকে বাড়ির বাইরে থেকে বিভিন্ন দপ্তরে মনগড়া অভিযোগ দিচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে মিমাংশার জন্যে একাধিকবার স্থানীয় মেম্বরের বাড়িতে যাওয়া হয়েছে। এর বাইরে ওই মেম্বরের সাথে কোন খারাপ সম্পর্ক নেই।
ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের যুগ্ম আহবায়ক রফিকুল ইসলাম বলেন, তালাক দেয়া স্ত্রীকে বাড়ি থেকে বের করার জন্য সালাম সহযোগিতা চেয়েছিল। আমার সাথে টাকা পয়সার কোন লেনদেন হয়নি তবে বিষয়টি মিমাংশার লক্ষে কিছু টাকা নিয়ে একটি মহলকে দেয়া হয়েছে।
এবিষয়ে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের আহবায়ক ইব্রাহিম হোসেন বলেন, আব্দুস সালামের সাথে তার স্ত্রীর মনোমালিন্যের বিষয়টি মিমাংশার জন্য অনেকেই অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। বিষয়টি মিমাংশার জন্য আমি কোন টাকা নেইনি বলেও দাবি করেন তিনি।
এব্যাপারে ৪নম্বর বিদ্যানন্দকাঠি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন বলেন, তাদের স্বামী-স্ত্রীর মনোমানিল্যর বিষয়টি নিয়ে আমি শালিশ বৈঠক করেছি । শালিশের নাম করে আমি কারো কাছ থেকে টাকা-পয়সা নেয়নি। যদি কেউ আমার নাম করে টাকা নেয় সেক্ষেত্রে টাকাতো আমার নেওয়া হলো না। তবে বিষয়টি মিমাংশার লক্ষে তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীকে দেওয়ার জন্য দুই লক্ষ টাকা স্বামী সালামের কাছে চাওয়া হয়েছিল।
এব্যাপারে কেশবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ বোরহান উদ্দীন বলেন, অভিযোগটি পেয়ে তদন্ত করা হচ্ছে, সঠিক তদন্ত শেষে দোষীদের বিরূদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর


ফেসবুকে আমরা