September 7, 2024, 12:25 pm

চুনারুঘাটে গৃহকর্তার আঘাতে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে দিনমজুর আব্দুল হক

চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি ঃ হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সুন্দরপুর গ্রামের গৃহকর্তা আতর আলী তানজুরের আঘাতে দিনমজুর আঃ হক (৫০) এখন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। টাকার অভাবে উন্নত চিকিৎসাও নিতে পারছেন না এই অসহায় বৃদ্ধ লোকটি। আব্দুল হকের আঘাতস্থলে ইনফেকশন হয়ে বাম চোখটি পচে গলে নষ্ট আর কষ্টের তীব্রতায় কাতরাচ্ছেন তিনি। চোখ নষ্ট হয়ে যাওয়া দিনমজুর আঃ হক এখন মরণব্যাধি ক্যান্সারেও আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন এবং সিলেট এম.এ.জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে নিজ বাড়িতেই বিনা চিকিৎসায় কষ্টের তীব্রতায় ভোগছেন। কেউ এগিয়ে আসছেনা এই দিনমজুর অসহায় লোকটির পাশে। দিনমজুর আব্দুল হক দীর্ঘ ০৮ বছর পেটের তাগিদে সুন্দরপুর গ্রামের গৃহকর্তা আতর আলীর ঘরে ৪ হাজার টাকা মাসিক বেতনে গৃহবিত্তের কাজ করে আসছিলেন। স্ত্রী সন্তানহীন দিনমজুর আঃ হক নিজের উপার্জিত সম্পূর্ণ টাকা গৃহকর্তা আতর আলীর নিকট জমা রাখতেন। সে ওই গৃহকর্তার ঘরে আর কাজ করবে না বলিয়া তার পাওনা টাকাগুলো ফেরত চাহিলে গৃহকর্তা আতর আলী ও তাহার ছেলে তানজুর এ সময় আব্দুল হককে এলোপাথারি মারধর করে এবং ধান কাটার জং ধরা কাস্তে দিয়া আঃ হক এর বাম চোখের নিচে গালে আঘাত করে। পরে গৃহকর্তায় স্থানীয় চিকিৎসা ও উন্নত চিকিৎসায় গাফিলাতির কারণে আহত ব্যক্তি দিন দিন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে এসব গোপন রেখে রোগীর পরিবারকে না জানিয়ে গৃহকর্তারা চুনারুঘাট হাসপাতালে জনৈক ডাক্তারকে দিয়ে ফোড়া বলে কাটাছেড়া করে রোগীকে হাসপাতালে রেখে পালিয়ে যান। খবর পেয়ে তার বোন হাসপাতালে গিয়ে তার অবস্থা করুন দেখে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন এবং এ বিষয়ে চুনারুঘাট থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পরে এ বিষয়টি নিয়ে ৮নং সাটিয়াজুরী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদের সভাপতিত্বে মেম্বার মিজান, রিপন, কালা মিয়া, সুরুজ মিয়া, হামিদ মিয়া, রফিক, আঃ হামিদসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে ৯নং রানীগাঁও ইউপি অফিসে এক সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সালিশ বৈঠকে আঃ হকের চিকিৎসা সংক্রান্তে ৪ লক্ষ টাকা দেওয়ার জন্য রায় সিদ্ধান্ত দেন চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ। তখন বিবাদী গৃহকর্তা আতর আলীরা সালিশ বৈঠক মানিয়া চলিয়া যান পরবর্তীতে মিজান মেম্বারসহ ২/১ জন মুরুব্বী বিষয়টি ১ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা ও বাদীনিসহ আঃ হক ও তার পরিবারের সকল সদস্যরা আপোষনামায় স্বাক্ষর নেওয়ার জন্য চেষ্টা করেন। ৬ এপ্রিল আঃ হককে আরো উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল থেকে ছাড়পত্র প্রদান করিলে, শয্যাশায়ী অবস্থায় আঃ হককে এ্যাম্বুলেন্স যোগে চুনারুঘাট থানায় তাহার জবানবন্দী দেওয়ার জন্য বাদীনি থানায় নিয়ে অফিসার ইনচার্জকে না পেয়ে মামলার আই/ও আশিকুর রহমানের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেন এবং বিষয়টি জানান। এ ব্যাপারে থানায় মামলা জমা দেওয়ার ৩৩ দিন পরেও মামলা রুজু বা আসামীদের গ্রেফতার না করায় তাহেরা খাতুন বাদী হয়ে সুবিচারের জন্য ১৩ এপ্রিল হবিগঞ্জ পুলিশ সুপার বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন এবং এর অনুলিপি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করেন। থানা পুলিশ প্রশাসন সহ মানুষের দ্বারে দ্বারে বিচারের বাণী নিয়ে আইনী সহযোগিতা আর ভাইকে বাঁচাতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে ঘুরছেন আর কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন দিনমজুর আঃ হকের বোন বৃদ্ধা অসহায় ও বিধবা বাদীনি তাহেরা খাতুন। এ সংবাদ পেয়ে গতকাল বুধবার দিনমজুর অসহায় বৃদ্ধ শয্যাশায়ী আঃ হককে সরেজমিন গিয়ে দেখি তার করুন অবস্থা। পচন, পুঁজ ও রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এ কষ্ট যন্ত্রণায় মূমূর্ষ অবস্থায় দিনমজুর আঃ হক শয্যাশায়ী হয়ে কাতরাচ্ছেন, অভিযোগ সূত্রে ও সরেজমিনে এসব তথ্য জানা যায়। ওই সহজ সরল অসহায় দিনমজুর আঃ হককে দেখে চোখের পানি থামাতে পাড়ছেন না এলাকার সাধারণ লোকজনও। তারা ওই দিনমজুর অসহায় আঃ হককে আঘাতকারী গৃহকর্তা আতর আলী ও তানজুরকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান, থানা পুলিশ প্রশাসনের প্রতি এবং ইনফেকশনে চোখ নষ্ট হয়ে যাওয়া ও মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত আঃ হককে বাঁচাতে সকলের সাহায্য ও মানবিক সহযোগিতা কামনা করেন বাদীনি তাহেরা খাতুন ও তার পরিবারসহ এলাকার সচেতন মহল।

এই বিভাগের আরও খবর


ফেসবুকে আমরা