April 20, 2024, 5:23 am

সাংবাদিক নির্যাতন বনাম সাংবাদিক সুরক্ষা আইন ? সাংবাদিক কেন টার্গেট? ? সাংবাদিকতা পেশায় ঝুঁকি কমানো রাষ্ট্র দয়িত্ব ? সাংবাদিকদের নিরাপত্তা দিন

মীর আব্দুল আলীম :সন্ত্রাসীরা সাংবাদিকদের খুন করে, রাজনীতিবিদ, আইনশৃঙ্খলাবাহিনী সুযোগ
পেলে সাংবাদিকদের নামে মামলা ঠুকে দেয়। আবার রাজপথে সাংবাদিক পেটায়।
এদেশে বরাবরই নানা হামলা মামলার শিকার হচ্ছেন গণমাধ্যমকর্মীরা।
সন্ত্রাসী, আইশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এমনকি রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি
পর্যন্ত সুযোগ পেলে সাংবাদিকদের উপর ঝাল মেটায়। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে
গিয়ে কাউকে ছাড় না দিয়ে সাংবাদিকদের ঘুষ-দুর্নীতি, অনিয়মের বিরুদ্ধে
লিখতে হয়। আর তাতেই ক্ষেপে যান সংশ্লিষ্টরা। কখনো জীবন কেড়ে নেওয়া, কখনো
শরীরে হামলা আবার প্রায়সই মিথ্যা মামলার শিকার হয়ে জেলে যাচ্ছেন
সাংবাদিকরা।
গত ১৬মে সর্বশেষ সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে লালমনিরহাটে। একে-৪৭
টাইপের ভারি মেশিনগান তাক করে তিন বিজিবির জওয়ান দাঁড়ানো। তাদের সামনে
কোমরে দড়ি ও হাতে হাতকড়া দেয়া জেলার একজন বিজ্ঞ সাংবাদিক। সামনে এক বোতল
ফেনসিডিল রাখা। এভাবেই দৈনিক জনকণ্ঠের লালমনিরহাট ও বাসস প্রতিনিধি
জাহাঙ্গীর আলম শাহীনকে গ্রেফতার দেখিয়ে ছবি তুলে তা ভাইরাল করা হয়েছে
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। দেশ ব্যাপী সাংবাদিকরা সোচ্চার হলে ঐদিনই আদালত
থেকে মুক্তি পেন সাংবাদিক জাগাঙ্গীর আলম। বিজিবির হাতে গ্রেফতার হওয়া ঐ
সাংবাদিক দাবী করেন, বিজিবির সদস্যদের সঙ্গে তাঁর তর্ক হয়। এর জের ধরে
তাঁকে কুলাঘাট ক্যাম্পের টহল দলের সদস্যরা বেধড়ক মারপিট করে আহত করে। পরে
তাঁকে হাতকড়া পরিয়ে, কোমরে দড়ি বেঁধে সদর থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।
লালমনিরহাট জেলার বেশ কিছু গণমাধ্যমকর্মী জানান, সীমান্ত পাহাড়াদাররা এখন
সাংবাদিকদের টার্গেট করেছে। শাহীনের মতো করে সাংবাদিকদের একে একে
ফাঁসিয়ে দিতে পারলে সীমান্তে বখরার মাধ্যমে ভারত সীমান্ত দিয়ে দেশে মাদক
প্রবেশে সহজ হয়ে যাবে। সাংবাদিকরা আর সীমান্তে মাদক আসার খবর সংগ্রহে ভয়ে
আসবেনা। এতে পাহাড়াদারদের টেনশন লাগব হবে। আর মাদককারবারিরা দেদারছে
মাদক বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিতে পারবে। এমন অভিযোগ সত্য হলে আমাদের জন্য
দুর্ভাগ্যই বটে!
বিজিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দাবি, লালমনিরহাটের কুলাঘাটে এক বোতল
ফেনসিডিলসহ জাহাঙ্গীর আলম শাহীনকে আটক করা হয়। এমন সংবাদ আজ (১৭ এপ্রিল)
জনকন্ঠসহ বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে সাংবাদিক
জাগাঙ্গীর আলমকে চিনি জানি। বয়সও কম নয়। বছর দশেক আগে লালমনিরহাটে বেড়াতে
গিয়ে পরিচয়। এর আগে টেলিফোনে দু’একবার কথাও হয়েছে। দীর্ষদিন ধরে জনকন্ঠ
এবং বাসস সাথে আছেন। সাংবাদিকতা ছাড়াও শাহীন আদিতমারী মহিষখোঁচা স্কুল
এ্যান্ড কলেজের প্রভাষক। তার এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হলে
সুশীল সমাজে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। সাংবাদিক শাহীন দীর্ঘদিন ধরে
লালমনিরহাটে চোরাচালান, মাদককারবার, যুদ্ধাপরাধী, জঙ্গী, জামায়াত-শিবির
চক্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। এসব বিষয়ে তার অনুসন্ধানী ও ক্ষুরধার
লেখনীর দরুন বিজিবিসহ স্থানীয় প্রশাসন ক্ষুব্ধ ছিল। বিশেষ করে বিজিবির
স্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিউজ সংক্রান্ত কারণে তীব্র বিরোধ ছিল এমন
বিষয়টি পত্রিকার খবরে উঠে এসেছে। তারই প্রতিশোধ হিসেবে তাকে শুধু কোমরে
রশি বেঁধে নির্যাতনই নয়, বেধড়ক মারধরও করা হয়েছে। আসলে এ নির্যাতনে
সীমান্ত এলাকাটির মাদককারবারীদেও অনেক বেপরোয়া হতে কাজ করবে। এ ঘটনার
তীব্র নিন্দা এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন বাংলাদেশ
ক্রাইম রিপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন আরিফ। তিনি
প্রশ্ন রাখেন- বিজিবির এ অভিযোগ কতটা সত্যি। সত্যিই এক বোতল ফেনসিডিল
পাওয়া গেছে তার কাছে? নাকি ফেনসিডিল দিয়ে ফাঁসিয়ে দেয়া হয়েছে। আর পাওয়া
গেলেও তাকে এভাবে কোমরে দড়ি বেঁধে হাতে হাতকড়া পরানো হলো- এর মানে কি?
এখানে কি বিজিবির অতি উৎসাহী ভাব পরিলক্ষিত হয় না? তার পরও করিৎকর্মা
বিজিবিকে ধন্যবাদ না দিয়ে পারলাম না একজন অপরাধীকে আইনের আওতায় আনার
জন্য। এক বোতল ফেনসিডিল আদৌ সাংবাদিক শাহীনের কাছে পাওয়া গেছে কিনা নাকি
তাকে ফাঁসানো হয়েছে আমি ব্যক্তিগতভাবে ঘটনাটির বিচারবিভাগীয় তদন্ত দাবি
করেন ক্যাবের ঐ নেতা।
প্রশ্ন হলো এভাবে সাংবাদিকরা আর কত নির্যাতনের স্বিকার হবেন? হালে দিখছি
মৌলভী, মাওলানারাও সাংবাদিকদেও পিছু নিয়েছে। তাঁরা সাংবাদিকদের প্রকাশ্যে
কতল (জবাই) করার ঘোষণা দিয়েছেন। অবশ্য ঐ ইসলামী বক্ত এরইমধ্যে গ্রেফতারও
হয়েছেন। শুধু আওয়ামীলীগ, বিএনপির সভা-সমাবেশ সংঘর্ষে যেমন টার্গেট
সাংবাদিক আজকাল হেফাজাতের টার্গেটেও সাংবাদিক। সম্প্রতিকালে নোয়াখালীর
কোম্পানীগঞ্জে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে আওয়ামী লীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষে
গুলিবিদ্ধ হয়ে সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মুজাক্কির নিহত হন। তাকে টার্গেট
করেই গুলি করা হয়েছে বলে দাবি ওঠে। অতিত নিকটে নারায়ণগঞ্জে এবং রাজধানীর
বায়তুলমোকাররমের সাংবাদিকরা হামলার শিকার হয়েছেন। হেফাজতে ইসলামের সহিংস
কর্মসূচি ঘিরে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় ঢাকা ও ঢাকার বাইরে অন্তত ২০ জন
গণমাধ্যমকর্মী হামলার শিকার হয়েছেন। অবশ্য বাংলাদেশে সাংবাদিকদের এরকম
নির্যাতনের শিকার হওয়া কোন বিরল ঘটনা নয়, বরং এ প্রবণতা বাড়ছে ।
পরিসংখ্যানটি আঁতকে ওঠার মতো। গত দেড় যুগে ৫১ জন সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের
শিকার হয়েছেন ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এই দেশটিতে। সাংবাদিক দম্পতি
সাগর-রুনি হত্যার ঘটনা থেকে শুরু করে সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের একটি ঘটনার
সঠিক বিচার হয়নি। খবর সংগ্রহকারী সাংবাদিকরা নিজেরাই খবর হচ্ছেন। এক
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৯৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ২২ বছরে বাংলাদেশে
অন্তত ৩৫ জন সাংবাদিক হত্যার শিকার হয়েছেন। বাকি আড়াই বছরে আরও অন্তত ১০
জন সাংবাদিক খুন হয়েছেন। এত খুন হয়েছে কয়টা ঘটনার বিচার হয়েছে? একদিকে
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও নানা রকম ভয়ভীতি-হুমকির কারণে সাংবাদিকতার পরিসর
সংকুচিত হয়ে উঠছে, অন্যদিকে শারীরিকভাবে হামলা ও হেনস্থার শিকার হতে
হচ্ছে সাংবাদিকদের। এসব হামলা-নির্যাতন সাংবাদিকতা পেশাকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ
করে তুলছে এবং তথ্য প্রকাশে বাধা দেওয়ার মধ্য দিয়ে তা সংবাদমাধ্যমের
স্বাধীনতাকেও খর্ব করছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
বিগত কয়েক দশকে বাংলাদেশে সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন, হয়রানি ও আক্রমণের
বেড়ে যাওয়ায় পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এ
পেশার অনেকেই। এমনকি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাংবাদিকদের নানাভাবে
নির্যাতন-নিপীড়ন করা হচ্ছে। নানা অনিয়ম-দুর্নীতির সংবাদ প্রচারের জন্য
দেওয়া হচ্ছে প্রাণনাশের হুমকি। সাংবাদিকদের ওপর হামলা, মামলা, নির্যাতন,
নিপীড়ন এখন শুধু রাজধানী ঢাকায় সীমাবদ্ধ নেই। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও
কারণে-অকারণে সাংবাদিকদের ওপর হামলা করা হচ্ছে, সাংবাদিক খুন হচ্ছে।
সাংবাদিকদের হামলার ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকেও কোনো রকম বক্তব্য বা
সহানুভূতি পর্যন্ত জানানো হয় না। রাজনৈতিক কোনো হাঙ্গামা, আন্দোলন,
উত্তেজনা, সহিংসতার ছবি ধারণ বা সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়া সাংবাদিকরা
নির্বিচারে হামলার শিকার হচ্ছেন। কখনো কখনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সরকারি
কর্মকর্তাসহ খোদ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও সাংবাদিক নির্যাতন করছেন।
অনেক সময় কর্তব্যরত সাংবাদিকদের চাকরি খেয়ে ফেলার হুমকি দেওয়ার মতো ঘটনাও
ঘটছে। সরকারও এ ব্যাপারে প্রতিকারমূলক তেমন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
হামলাকারীরা বরাবরের মতোই থেকে যাচ্ছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। সাংবাদিক
নির্যাতন-নিপীড়নের কোনো ঘটনার সুরাহাও হয় না কখনই। সরকারও এতে আন্তরিক নয়
বলে মনে করেন বিশিষ্ট গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিক নেতারা। এ অবস্থায়
প্রশ্ন, কেন গণমাধ্যম-কর্মীদের এ ধরণের পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে?
এ কথা বলতেই হয় যে, বর্তমানে সাংবাদিক নির্যাতন স্বাধীন সাংবাদিকতার
অন্তরায়। অনেক সময় জনপ্রতিনিধিদের ছত্রচ্ছায়ায়ও সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা
ঘটছে। জেলা উপজেলা পর্যায়ে সেটা বেশি। দেশ জুড়ে প্রেসক্লাব দখল, দলিয়করণ
এবং কুক্ষিগত করার ঘটনাও রয়েছে অনেক। সাংবাদিকদের ইচ্ছা মাফিক নিউজ করতে
বাধ্য করা। কথা না শুনলে নানা ভাবে হয়রানি করা, বিভক্ত করার কাজ করেন
অনেক রাজনৈতিক জনপ্রতিনিধি। অথচ সরকার এসব ঘটনার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা
নিচ্ছে না। এটি খুবই উদ্বেগজনক। সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধে সরকারকে আন্তরিক
হতে হবে। সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু বিচার হতে হবে। দায়ীদের
বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং
স্বাধীন সাংবাদিকতার বিকাশে এসব ‘সাংবাদিক হামলা-নির্যাতন’ বন্ধ করা খুবই
জরুরি।
একটা বিষয় বেশ লক্ষণীয় যে, সাংবাদিকদের ওপর কেন একর পর এক হামলা ঘটনা
ঘটছে কোনো সরকারের হাতেই প্রণীত হয়নি একটি সাংবাদিক সুরক্ষা আইন। এমনকি
দেশে অব্যাহত সাংবাদিক খুনের ঘটনা ঘটলেও কোনো খুনের বিচার প্রক্রিয়াই
সুষ্ঠুভাবে এগোয়নি। প্রকাশ্যই সিরাজগঞ্জে মেয়রের গুলিতে সাংবাদিক হাকিম
খুন হন। যশোরে দ্বায়িত্বপালন কালে নিজ অফিসে সাংবাদিক কেবল হত্যাসহ
অসংখ্য সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতন মামলার ক’টির বিচার হয়েছে এ পর্যন্ত?
দেশে সাংবাদিক হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়নি একটিরও। একইভাবে দিনের
পর দিন সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটলেও তাদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো
প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে সাংবাদিকতা পেশা ক্রমাগতই ঝুঁকিপূর্ণ
হয়ে উঠেছে। প্রতিটি ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে প্রথাগত দুঃখ প্রকাশ ও
হামলাকারীদের শাস্তির আশ্বাস দিলেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। একটি
গণতান্ত্রিক দেশে এমন ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। বিশ্বের যেসব
দেশে সাংবাদিক হত্যার বিচার হয় না, সে দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।
সাংবাদিক খুন হয় আর তার বিচার হবে না তা কী করে হয়? রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে
গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে হলে সাংবাদিকদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার
বিকল্প নেই। এই নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সরকারকে এসব
হত্যাকাণ্ডের বিচারে অবশ্যই আন্তরিক ও কঠোর হতে হবে।
দেশে গণমাধ্যমের ভুমিকায় সারা দেশের হাজার হাজার সাংবাদিকের ঘাম-শ্রম ও
জীবনঝুঁকি জড়িত। কিন্তু সাংবাদিকদেও নিয়ে রাষ্ট্র ভাবছে কম! গভীর রাত
পর্যন্ত ঘুমহীন কাজ করতে হয় অনেক সংবাদকর্মীর। অনেকটা নিশাচরের ভূমিকা
তাঁদের। সাংবাদিকদের পারিবারিক জীবন বলতে কিছু নেই। কিন্তু সাংবাদিকদের
মূল্যায়ন সমাজে নেই বললেই চলে। পাশাপাশি নিরাপত্তা ঝুঁকিতো রয়েছেই।
সমাজের অনেক সাংবাদিক ত্যাগী, নির্লোভী ও সৎ। তারা মানবকল্যাণে,
সমাজকল্যাণে নিয়োজিত রয়েছেন। এই দিকটিও সরকারকে আমলে নিতে হবে।
সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও হত্যা বন্ধ করা না গেলে সৎ, মেধাবী, যোগ্য,
তথ্যপ্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ উচ্চশিক্ষিত তরুণ-তরুণীরা এখন যে সংবাদপত্রে
ঢুকছেন, তারা নিরুৎসাহিত হবেন। এমনিতেই সাংবাদিকদের পেশাগত নিশ্চয়তা ও
নিরাপত্তা নেই, তার ওপর যদি কর্তব্য পালন করতে গিয়ে তাদের জীবনঝুঁকি বেড়ে
যায় কিংবা তারা হামলা-হত্যার শিকার হন তাহলে কিভাবে সাংবাদিকতা পেশা
বিকশিত ও প্রতিষ্ঠিত হবে?
আমরা মনে করি, সাংবাদিকদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের
দায়িত্ব। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের বাংলাদেশে আজো পর্যন্ত
সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা তো দূরের কথা, কোনো সাংবাদিক
হত্যাকান্ডেরই বিচার হয়নি বলে অভিযোগ উঠে। পথে ঘাটে যদি পুলিশ
সাংবাদিকদের পেটায়, সাংবাদিক যদি জনপ্রতিনিধি, সন্ত্রাসীর রোষানলে পওে,
আর বিজিবি যদি একটি ফেনসিডিলসহ খ্যাতিমান কোন সাংবাদিককে পিটিয়ে আহত করে
জেলে পাঠায় তাহলে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা বলে আর কিছু থাকে না। বিষয়টি
সরকারকে এখনই ভাবতে হবে। আমলে নিতে হবে সাংবাদিকদেও নিরাপত্তার বিষয়টি।
– লেখক- মীর আব্দুল আলীম, সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

এই বিভাগের আরও খবর


ফেসবুকে আমরা