April 23, 2024, 9:43 am

আব্দুল জলিলের ৮ম মৃত্যু বার্ষিকী পালন

সোহেল রানা,নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি: মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও মার্কেন্টাইল বাংকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান আব্দুল জলিলের ৮ম মৃত্যু বার্ষিকী আজ। মরহুম আব্দুল জলিলের জন্ম ১৯৩৯ সালের ২১ জানুয়ারী এবং ২০১৩ সালের ৬ মার্চ সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যু বরণ করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ছিলেন। এছাড়াও বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ ছিলেন।
মৃত্যুর আগে মরহুম আব্দুল জলিল ১৯৯৬-২০০১ বাংলদেশ আওয়ামী লীগ সরকারের সময় টানা তিন বছর বানিজ্য মন্ত্রণালয়ের বানিজ্য মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ক্রান্তিকালে দলের সফল সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি নওগাঁ-৫ (সদর) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বয়স সন্ধি কালে তিনি নানা রোগে আক্রান্ত ছিলেন। ২০১৩ সালে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিংাপুরের মাউন্ট এলিযাবেদ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। আর ৬ মার্চ সন্ধায় তিনি শেষ নিশ্বাস করেন।
মরহুম আব্দুল জলিল নওগাঁ জেলার সদর উপজেলার চকপ্রান গ্রামের মরহুম ফয়েজ উদ্দিনের পুত্র ছিলেন। মৃত্যুর পর এই নেতাকে পারিবারিক কবরস্থানে মরহুমের পিতা-মাতার কবরের পাশে সমাহিত করা হয়।
মরহুমের বড় পুত্র বর্তমান নওগাঁ-৫ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দিন জলিল জন মরহুম পিতার অসমাপ্ত কাজকে সমপুর্ন করার লক্ষে তৃনমূল নেতাদের সঙ্গে নিয়ে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। মরহুমের ৮ম মৃত্যু বার্ষিকীতে পিতার কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন মরহুমের সুযোগ্য এই পুত্র ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দিন জলিল জন। এছাড়া নওগাঁ জেলা আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে নওগাঁ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল মালেক এবং সহ-সভাপতি নির্মল কৃষ্ণ সহা মরহুমের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এসময় নওগাঁ জেলা যুবলীগ, সেচ্ছাসেবকলীগ, মহিলা লীগ, যুব মহিলা লীগ, শ্রমিক লীগ, ছাত্রলীগ, মুক্তিযোদ্ধা সহ বিভিন্ন সামজিক সংগঠনের নেতা কর্মীরা মরহুমের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন ও দোয়া করেন। দোয়া শেষে মরহুমের নিজ বাসভবনে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়।

১৯৩৯ সালে মোঃ আব্দুল জলিল নওগাঁ শহরের চকপ্রাণ মহল্লায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ ছিলেন নওগাঁ শহরের একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। জলিল ছিল তাঁর পিতার একমাত্র পুত্র সন্তান। ১৯৫৭ সালে নওগাঁ কে.ডি স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন, ১৯৬০ সালে বগুড়া আজিজুল হক কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট, ১৯৬৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থকে বি.এ. অনার্স (রাষ্ট্র বিজ্ঞান) ও ১৯৬৪ সালে এম.এ. ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৬৫ সালে ব্যারিষ্টারী (বার এট ল) পড়ার জন্য তিনি বিলেত(লন্ডন) যান। ১৯৬৯ সাল। তখন দেশে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন চলছে। এ সময় বঙ্গবন্ধু বিলেত যান এবং অধ্যয়নরত প্রাক্তন ছাত্র নেতাদের নিয়ে এক বৈঠক করেন। জলিলের পরিচয় হয় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তখন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে ৬৯ সালেই দেশে ফিরে আসেন এবং ঝাঁপিয়ে পড়েন স্বাধীনতা আন্দোলনে। সেই সাথে শেষ হয় তাঁর ব্যারিষ্টারী পড়ার সকল আয়োজন। ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে নওগাঁ মহকুমার নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব অর্পিত হয় আব্দুল জলিলের উপর। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামীলীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করলেও পাক সামরিকজান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে বিভিন্ন তালবাহানা ও কালক্ষেপন শুরু করে। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ যা স্বাধীনতার ভাষণে সারাদেশবাসী আন্দোলিত ও উজ্জিবিত হয়ে উঠে, যা স্বাধীনতার দলিল হিসাবে পরিচিত। ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য সমগ্র বাঙ্গালী জাতি প্রতিবাদ, প্রতিরোধের দূর্গ গড়ে তোলে। পাক সামরিকজান্তা পূর্ব পরিকল্পিত নীল নকশার প্রতিফলন ঘটায়। গ্রেপ্তার করেন, বাঙ্গালী জাতির অবিসংবাদিত নেতা সর্ব্বকালের সর্ব্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। ফুঁসে উঠে সমগ্র বাঙ্গালী জাতি। শুরু হয় স্বাধীনতা যুদ্ধ। আব্দুল জলিল নওগাঁ মহকুমার আপামর জনসাধারণ, কর্মরত ই.পি.আর. পুলিশ আনছার বাহিনীকে সংগঠিত করে জীবন বাজী রেখে স্বাধীনতা যুদ্ধে অবতীর্ণ হন এবং ১৯৭১ মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে এতদ্ব অঞ্চলের প্রধান সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর দিকে আব্দুল জলিল নওগাঁ থেকে যাওয়ার সময় ৭৪ জন ছেলে ও তাঁর দলবল নিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে চলে যান এবং বালুরঘাটে আত্রাই নদীর পূর্বতীরে শ্মশানকালী মন্দিরের পার্শ্বে একটি গৃহে অবস্থান গ্রহণ করেন। সেখান থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ভর্ত্তি ও বাঙ্গালীপুর, মধুপুর, কামাড়পাড়া, প্যারিলাসহ ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকায় বেশ কয়েকটি ট্রেনিং ক্যাম্প পরিচালনা করেন। ঐসব ক্যাম্প থেকে হায়ার ট্রেনিং এর জন্য শিলিগুড়ির পানিঘাটায় পাঠিয়ে দেওয়ার বিশাল দায়িত্ব গ্রহণ করেন আব্দুল জলিল। আব্দুল জলিল শুধু মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠকই ছিলেন না, ‘বঙ্গবাণী’ নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার মালিকও ছিলেন। আব্দুল জলিলের সাহায্য, সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতায় বালুরঘাট নিউমার্কেট এলাকার সুনীতি প্রিন্টিং ওয়ার্কস থেকে উক্ত ‘বঙ্গবাণী’ পত্রিকাটি প্রকাশিত ও প্রচারিত হতো। উক্ত পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন অধ্যাপক খন্দকার মকবুল হোসেন ও সহ সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন খন্দকার আবু বককর সিদ্দিকী। ১৯৭১ সালে তিনি সর্ব্ব প্রথম বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ থেকে নওগাঁ সদর আসনে এম.পি. নির্বাচতি হন। দেশ পুনর্গঠনের কাজে পুরো মাত্রায় আত্মনিয়োগ করেন। কিন্তু স্বাধীনতার বিপক্ষের শত্রুরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। মানবতা বিরোধীরা, যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনী ও দেশী বিদেশী শত্রুরা ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট অতর্কিত হামলা চালিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তাঁর গোটা পরিবারকে হত্যা করে। জনগণের মৌলিক অধিকার হরণ করে জারি করা হয় সামরিক শাসন। গণতন্ত্রের মুখ থুবড়ে পড়ে যায়। গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয় গলা টিপে। অনেক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে আব্দুল জলিলকেও গ্রেপ্তার করা হয়। দীর্ঘ ৪ বছর কারাভোগের পর ১৯৭৯ সালে তিনি মুক্তিলাভ করেন। ১৯৮২ সালে পুনরায় সামরিক শাসন জারি করার পর গ্রেপ্তার কর

এই বিভাগের আরও খবর


ফেসবুকে আমরা