November 6, 2024, 2:22 pm

৭ই মার্চের গর্জন থেকেই ১৬ডিসেম্বরের অর্জন ? ৭ই মার্চের গর্জন থেকেই অর্জন ? হে মহান নেতা স্বর্গীয়সুখে থাক

মীর আব্দুল আলীম :শতবছর আগে ১৭ই মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মগ্রহণ
করেন। তেজোদীপ্ত এই মানুষটি গর্জে উঠেন ৭ই মার্চ; সেই গর্জনেই অর্জন ১৬
ডিসেম্বর। পৃথিবীর বুকে নাম লেখালো স্বাধীন বাংলাদেশ। একজন বঙ্গবন্ধু;
একটাই বাংলাদেশ। তাঁর মেধা, প্রজ্ঞা, সততা, সাহস সর্বোপরি দেশপ্রেমেই
বাংলাদেশের জন্ম হলো।
১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান) ১৯
মিনিটের এক জাদুকরি ভাষণে বাঙালি জাতিকে স্বপ্নে বিভোর করেছিলেন
বঙ্গবন্ধু। ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম
স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ ‘ভাইয়েরা আমার, আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না।’
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভরাট কণ্ঠের এই আওয়াজে সারা দেশ
মুখর হয়। এরপরই সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ, ৯ মাসের লড়াই এবং স্বাধীনতা অর্জিত
হয়। পরে ভয়াল ১৫ আগস্ট। দিন গড়িয়েছে অনেক। আজ বঙ্গবন্ধু নেই। আছে তাঁর
স্মৃতি। ‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে
ছাড়ব, ইনশা আল্লাহ।’ বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ আজও বাংলার প্রতিটি মানুষের
হৃদয়ে গাঁথা আছে।
‘বন্দিদশা থেকে মুক্তিলাভ করে দেশে প্রত্যাবর্তন করেই তিনি বলেছিলেন,
‘যদি দেশবাসী খাবার না পায়, যুবকরা চাকরি বা কাজ না পায়, তাহলে স্বাধীনতা
ব্যর্থ হয়ে যাবে, স্বাধীনতা পূর্ণ হবে না’। এই ছিল তার স্বপ্নেরই অংশ।
সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের আগেই তাকে সপরিবারে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়া হলো।
বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে অসহায় হয়ে পরে স্বপ্ন দেখা মানুষ গুলো। তিনি চলে
গেলেন। আর ফির এলেন না। আফসোস, এমন একটা নেতা এদেশের আর জন্মায়নি একটিও।
তাঁর মতো করে বাংলাকে আর ভালোবাসবেনি কেউ, দেশের মানুষকে আগলে রাখেনি
কেউ। হে মহান নেতা ভালো থাকো, স্বর্গীয়সুখে থাক। হাজারো সালাম তোমায়।’
বঙ্গবন্ধুকে কি করে ভুলে বাঙালি। বাঙালি শ্রদ্ধাভরে স্বরণ করছে তাঁকে।
এবার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালন করছে
বাংলাদেশ। এ উপলক্ষে ২০২০ সালের ১৭ই মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ
পর্যন্ত সময়কে ‘মুজিববর্ষ’ ঘোষণা করা হয়েছে। শতবছর আগে ১৭ই মার্চ প্রিয় এ
মানুষটির জন্ম। তিনি ভালোবেসেছিলেন বাঙালি জাতিকে। বীর হতে চাননি যিনি;
ভয় পাননি শহীদ হতে। রক্ত দিয়ে যিনি দেশবাসীর ভালোবাসার ঋণ পরিশোধ করতে
প্রস্তুত ছিলেন সর্বদা- তাঁকে কী করে স্মরণ না করে বাঙালি?
বঙ্গবন্ধু ক্ষমতাকে ভালোবাসেননি, হৃদয় দিয়ে দেশকে ভালো বেসেছেন, দেশের
মানুষকে ভালোবেসেছেন। অর্থ লোভ তাঁকে স্পর্শ করেনি কখনো। দেশের ভালোবাসার
কাছে তাঁর কাছে অর্থ ছিলো তুচ্ছ। এমন নেতা কি আর জন্মাবে কখনো এদেশে? যা
দেখছি তাতে বোধ করি কখনই না। বঙ্গবন্ধু হয়ে আর আসবেন না কখনো কেউ। এক
বঙ্গবন্ধু এক বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। বাংলাকে ভালোবাসার এমন মানুষ আর কখনোই
আসবে না এদেশে। তাঁর মতো করে কেউ বাংলাকে আর ভালোবাসবে না; বাঙালিকে তাঁর
মতো করে কেউ আর কেউ আগলে রাখবে না।
আমরা সত্যি অকৃতজ্ঞ জাতি। যিনি আমাদের দেশমাতৃকাকে উপহার দিলেন, এই তাকেই
কত না নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। জাতির জনকের বাসভবনে রক্তের বন্যা বইয়ে
দেয়া হলো সেদিন। শিশু রাসেলের কান্না আর আকুতিও ওদের হৃদয় স্পর্শ করলো
না। শুধু তাই নয়, হত্যাকারীরা তার কবর তিন মাস পর্যন্ত পাহারা দিয়েছে।
সেখানে কাউকে আসতে দেয়া হয়নি। এমনকি দীর্ঘদিন বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের
ছবি এদেশে নিষিদ্ধ ছিল। বঙ্গবন্ধুর কবর দেখতে না দেয়া, তার হত্যার ছবি
প্রকাশের নিষেধাজ্ঞার মূল কারণ ঘৃণ্য হন্তারক ওই সামরিক শাসকরা তাকে ভয়
পেত। তাদের ভয়টা ছিল এখানেই যে, তারা নিশ্চিত জানত জীবিত বঙ্গবন্ধুর চেয়ে
মৃত বঙ্গবন্ধু অনেক বেশি শক্তিশালী। তারা আরো জানত সে সময় এসব ছবি প্রকাশ
পেলে কোনো কিছুতেই বাঙালিকে দাবিয়ে রাখা যাবে না।
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট। সিঁড়িতে পড়ে আছে বাঙালি জাতির প্রাণপ্রিয়
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্তমাখা নিথর লাশ। সিঁড়ি গড়িয়ে রক্ত চলে
এসেছে বাহির আঙ্গিনায়। মহান সেই নেতার রক্ত সোঁদা মাটিতে মিশে গেছে।
তিনি তো শুধু এ দেশের প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি ছিলেন না, ছিলেন না
দলবিশেষের প্রধান। দীর্ঘ দিবস, দীর্ঘ রজনী ঝড়-মেঘ ইতিহাসের পথে আমাদের
যাত্রায় তিনি ছিলেন সঙ্গী ও পথপ্রদর্শক। তাকে ভুলব কেমন করে? তাকে কি
ভোলা যায় কখনো? তাই তো ইতিহাসের এই মহানায়কের উদ্দেশে কবি লিখেছিলেন,
“যতদিন রবে পদ্মা, যমুনা/গৌরী, মেঘনা বহমান/ ততদিন রবে কীর্তি তোমার/ শেখ
মুজিবুর রহমান”।
অবিসংবাদিত এই নেতার জীবন চলার পথ ছিল কণ্টকাকীর্ণ। পাকিস্তানের সামরিক
জান্তার বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তুলে ’৬০-এর দশক থেকেই তিনি
বাঙালি জাতীয়তাবাদের অগ্রনায়কে পরিণত হন। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ লাখো
মানুষের উপস্থিতিতে ঢাকার তৎকালীন ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু
বজ্রদৃপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম।
এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম’। তারই বজ্র নির্ঘোষ ঘোষণায়
উদ্দীপ্ত, উজ্জীবিত জাতি স্বাধীনতার মূলমন্ত্র ধারণ করে ১৯৭১ সালের
মুক্তিযুদ্ধে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। অদম্য সাহস ও
অকুক্ত আত্মত্যাগ, সাংগঠনিক শক্তি নিজের বাঙালিসত্তার গভীর অনুরণন
উপলব্ধি করেছিলেন তিনি। কখনো স্বভাবের প্রেরণায়, কখনো সযত্ন উৎসাহে তার
উন্মোচন ঘটিয়েছিলেন। দেশবাসীকেও তেমনি অনুপ্রাণিত করেছিলেন সেই সত্তার
জাগরণ ঘটাতে। দেশ ও মানুষের প্রতি ভালোবাসা থেকে এক মোহনীয় স্বপ্ন রচনা
করেছিলেন তিনি ধীরে ধীরে, সেই স্বপ্ন সফল করার আহ্বান জানিয়েছিলেন সকলের
প্রতি। কী বিপুল সাড়া তিনি পেয়েছিলেন, তার পরিচয় তো আমরা সচক্ষে দেখেছি।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের সেই মর্মান্তিক ঘটনার পর উন্নয়নের ধারা বাধাগ্রস্ত
হয়। তবে বঙ্গবন্ধু আমৃত্যু যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখিয়ে গেছেন জাতিকে,
তা সফলতা পেতে শুরু করেছে তারই সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ
নেতৃত্বে। তাঁর যোগ্য ও দক্ষ নেতৃত্ব এবং দূরদর্শী পরিকল্পনা, সময়োপযোগী
পদক্ষেপেই বাংলাদেশ বিশ্বের বিস্ময় হয়ে দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশ। উন্নয়নের রোল মডেল। বন্দিদশা থেকে
মুক্তিলাভ করে দেশে প্রত্যাবর্তন করেই তিনি বলেছিলেন, ‘যদি দেশবাসী খাবার
না পায়, যুবকরা চাকরি বা কাজ না পায়, তাহলে স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যাবে,
স্বাধীনতা পূর্ণ হবে না’। এই ছিল তার স্বপ্নেরই অংশ। সেই স্বপ্ন
বাস্তবায়নের আগেই তাকে সপরিবারে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়া হলো। বঙ্গবন্ধুকে
হারিয়ে অসহায় হয়ে পরে স্বপ্ন দেখা মানুষ গুলো। তিনি চলে গেলেন। আর ফির
এলেন না। আফসোস, এমন একটা নেতা এদেশের আর জন্মায়নি একটিও। তাঁর মতো করে
বাংলাকে আর ভালোবাসবেনি কেউ, দেশের মানুষকে আগলে রাখেনি কেউ। হে মহান
নেতা ভালো থাকো, স্বর্গীয়সুখে থাক। হাজারো সালাম তোমায়।

এই বিভাগের আরও খবর


ফেসবুকে আমরা