April 24, 2024, 11:09 am

মাদ্রাসা শিক্ষকের মারপিটে শিক্ষার্থী আহত; ধামাচাপার চেষ্টায় প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি

শামীম আখতার, বিভাগীয় প্রধান (খুলনা) কেশবপুরে মায়ের সাথে দেখা করে হাফিজিয়া মাদ্রাসায় ফিরতে দেরি হওয়ায় হাবিবুর রহমান (১২) নামের এক শিক্ষার্থীকে বেধড়ক মারপিট করে আহত করেছে শিক্ষক। সোমবার (৩০মে) বিকেলে রামচন্দ্রপুর হাফিজিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষক কামরুজ্জামান ঘটনাটি ঘটিয়েছে। আহত
শিক্ষার্থীর পিতা কন্দপপুর গ্রামের ভ্যানচালক আজহারুল ইসলাম তার ছেলের উপর বর্বরোচিত নির্যাতনের সুষ্ঠু বিচারের দাবীতে সন্ধারাতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট হাজির হন। তার ছেলের অবস্থা দেখে দ্রুত চিকিৎসার জন্য এবং ছবিসহ লিখিত অভিযোগ করতে বলেন। কিন্তু অভিযোগ লিখে অনেক রাত হয়ে যাওয়ায় জমা না দিয়ে বাড়ি ফিরে যান। সেই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনাটি ধামাচাপা দাওয়ার জন্য শিক্ষক ও এক প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি মরিয়া হয়ে উঠে।

আহত শিক্ষার্থীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মাদ্রাসার শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান এঁর নানার রামচন্দ্রপুর গ্রামে। সেই সুবাদে ওই হাফিজিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি করে পরিবার। ওই ছাত্রের মা (৩০ম) সোমবার বিকালে তার বাপের বাড়ি বেড়াতে রামচন্দ্রপুর গ্রামে যান। ওই সময় তার ছেলে মায়ের সাথে দেখা করতে যায়। মাদ্রাসায় ফিরতে কিছুটা দেরি হলে তার মা ছেলেকে সাথে করে মাদ্রাসায় নিয়ে গেলে শিক্ষক রাগান্বিত হয়ে মায়ের হাত থেকে সন্তানকে ছিনিয়ে নিয়ে মারধর করতে থাকে। ওই সময় মা বাধানিষেধ করলেও কোন কর্ণপাত না করে শিক্ষক মাদ্রাসার ভিতরে নিয়ে পুনরায় মারপিট করায় হাবিবুরের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় নিলাফুলা ও চোখে রক্ত জমে যায়। ওই সময় শিক্ষাথীর কান্নাকাটি ও ডাক-চিৎকারে তার মা মাদ্রাসার ভিতরে প্রবেশ করে ছেলেকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য কেশবপুরে নিয়ে আসার প্রতিমধ্যে বকুলতলা নামকস্থানে পৌঁছালে পিছু ধাওয়া করা ওই শিক্ষক হুমকিধামকি প্রদান করে চলে যায়। পরবর্তীতে চিকিৎসা শেষে ছেলেকে নিয়ে বাড়িতে ফিরে যান। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে মরিয়া হয়ে ওইদিন রাতেই শিক্ষক কামরুজ্জামান কমলাপুর গ্রামের মেম্বার হালিমকে সাথে নিয়ে আহত শিক্ষার্থীর বাড়ীতে হাজির হন। বিভিন্ন ধরণের কথাবার্তা শুনিয়ে ভ্যানচালক পিতাকে ২০’হাজার টাকার প্রলোভন দেখিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন বলে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে আহত শিক্ষার্থীর পিতা আজহারুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার ছেলেকে মারপিটে আহত করায় ন্যায় বিচারের দাবিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট নিয়ে হাজির হলে তিনি আমার ছেলেকে দেখে চিকিৎসার জন্য বলেন এবং আগামীকাল লিখিত অভিযোগ জমা দিতে বলেন। এই কথা শুনে ছেলেকে ডাক্তার দেখিয়ে আমরা ছেলেকে নিয়ে বাড়ীতে ফিরে আসি। এরপর রাতেই শিক্ষক মনিরুজ্জামান ও কমলাপুর গ্রামের হালিম মেম্বার আমার বাড়িতে এসে বিভিন্ন কথাবার্তা বলে ছেলের চিকিৎসা খরচের জন্য ২০’হাজার টাকা দিতে চাই। কিন্তু আমি এখনো পর্যন্ত কোন টাকা দেয়নি। বর্তমানে ছেলের চোখের মনির উপর রক্ত জমে আছে, কাল খুলনায় ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে বলেও জানান তিনি।

টাকার বিষয়ে ইউপি সদস্য হালিম এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শিক্ষক কামরুজ্জামান
আমাকে সাথে করে নিয়ে ওই শিক্ষার্থীর বাড়িতে গিয়েছিল। ওরা খুবই গরীর মানুষ হওয়ায় চিকিৎসা খরচের জন্য ২০’হাজার টাকা দেওয়ার কথা বলে কামরুজ্জামান। তবে ছেলেটা বেয়াদব আছে। সে এই বয়সে বিড়ি সিগারেট খাওয়া শিখেছে। শিক্ষক তাকে শাসন করতে গিয়ে চোখে আঙ্গুলের গুতা লেগেছে। সে ইচ্ছা করে মারেনি। আমি যা বলছি সবই সত্যি।

মারপিট করার বিষয়ে শিক্ষক কামরুজ্জামান এর মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে অহেতুক মিথ্যা বানোয়াট অভিযোগ করছে। ছেলে বিড়ি সিগারেট খায় বলে ওর মা আমার কাছে রেখে যায়। ওই কথা শুনে আমি ছেলেটার শাসন করার চেষ্টা করি। কিন্তু কখন কিভাবে তার চোখে লেগেছে তা আমি জানিনা। ওইসময় ডাক চিৎকারে তার মা ছুটে এসে ছেলেকে চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের কাছে নিয়ে আসে। আমি সেখানেই গেলে ওর মা আমার উপর রেগে চড়াও হন। সেখানকার লোকজন পরিবেশ দেখে চলে আসতে বললে আমি চলে আসি। পরবর্তীতে রাতেই ওদের বাড়িতে দেখতে যাই এবং চিকিৎসার জন্য ২০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বলে আসি। জনপ্রতিনিধিরা থেকে মিমাংসা করার চেষ্টা করেছেন বলেও জানান তিনি।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম এম আরাফাত হোসেন বলেন, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীকে মারপিটে আহত করায় ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আহতের পরিবারও যদি টাকা নিয়ে মিমাংসা করে সেক্ষেত্রে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে। কোন প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না।

এই বিভাগের আরও খবর


ফেসবুকে আমরা