April 25, 2024, 1:01 pm

এই দামে তো গরুর মাংস আমার বাপ-দাদারাও কিনে নাই !

নিজস্ব প্রতিবেদক :এক কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকায়! সাথে বিনামূল্যে পাওয়া যাচ্ছে এক কেজি পোলাও চাউল ও মাংসের মসলা। ইদের দিন এমনি এক বাজারের দেখা মিলে মুন্সিগঞ্জের টংগিবাড়ী উপজেলায়। ইদের আনন্দকে ভাগ করে নিতে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিক্রমপুর মানব সেবা ফাউন্ডেশনের আয়োজনে ‘গরীবের কসাইখানা’ নামের ব্যতিক্রমী এই ইদ বাজারের আয়োজন করা হয়।

মঙ্গলবার সকাল ১০টায় উপজেলার কামারখাড়া স্কুল মাঠে ১০টাকার বিনিময়ে নি¤œ আয়ের তিন শতাধিক পরিবার ১ কেজি গরুর মাংস, ১কেজি পোলাও চাউল ও মাংসের মসলা কিনে নেন। এমনি আয়োজনে হাসি ফুটে অসহায় নি¤œ আয়ের মানুষের মুখে। এরআগে রমজানের শুরুতে ১০ টাকায় ইফতার বাজার আয়োজন করে সংগঠনটি। এ নিয়ে ১০ টাকার বাজার থেকে ৫১৩টি পরিবার বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী ক্রয় করেন।

জেলার টংগিবাড়ী উপজেলার হাইয়ারপাড় গ্রামের সেফালি বেগম (৩৫) বলেন, ‘বাজারে অনেকগুলো গরুর জবাই করছে। তা দেখে ছোট পোলায় বায়না ধরছে ইদে গরুর মাংস খাবে। তিনদিন ধরে পোলারে বুঝাইতাছি আজ না কাল, কিন্তু গরুর মাংস তো সাড়ে ছয়’শ টাকা কেজি কেমনে আনবো। ইদের দিন পোলায় মন খারাপ করবো। সেই চিন্তায় ঘুম আসে না। কিন্তু আল্লাহ ছোট বাচ্চাটার মনের ইচ্ছে পূরণ করছে। তাই তো হঠাৎ করে এতো কম টাকা দিয়ে গরুর মাংস কিনলাম। এই দামে তো আমার বাপ-দাদারাও কিনে নাই।’

কামারখাড়া এলাকার জয়মালা বেগম (৬৫) বলেন, ‘কুরবানির ইদ ছাড়া গরুর মাংস দেখি না। কুরবানি আইলে মানুষ গরুর মাংস দেয়। বছরের ওই ইদেই শুধু গরুর মাংস খাই। রোজার ইদে গরুর মাংস আর পোলাও চাল খাইতে পারমু তা কখনই ভাবতে পারি নাই। এরআগেও এখান থেকে ১০টাকায় ইফতারির তেল-খেজুরসহ ৭-৮ প্রকার খাওন কিনে নিছি।’

শিলই গ্রামে মারফত আলী (৬০) বলেন, ‘বুড়ো বয়সে বাজারে পাহাড়াদারের কাজ করি। মাস শেষে ৫ হাজার টাকা পাই। তা দিয়ে কোন মতে সংসার চলে। ইদে যে বাজার করবো দিন শেষে সেই টাকাও নাই। অভাবের সংসারে বাজার থেকে গরুর মাংস কিনবো যা ভাবতেও ভয় লাগে। গতকাল বাজারে দাড়িয়ে দাড়িয়ে গরু জবাই করা দেখলাম। মনে চায় একটু মাংস দিয়ে ভাত খাই কিন্তু সাহসে কুলায় না। রাতে যখন জানতে পারি এখানে ১০ টাকায় গরুর মাংস দিবো, তখনই নিয়ত করছি যেভাবেই হোক মাংস কিনবো। তাই ইদের নামাজ পড়ে দেরি করি নাই সাথে সাথে চলে আসছি এখানে। এখন মাংস পেয়ে ইদের আনন্দ ডাবল হয়ে গেছে আমার।’

সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য রিয়াদ হোসাইন বলেন, ‘ইদের দিন তিনশতাধিক পরিবারের আনন্দকে দ্বিগুণ করতে পেরে আমরা আনন্দিত। সংগঠনের সদস্যদের মাসিক চাঁদা ও অনুদান দিয়ে আমাদের এই ছোট আয়োজন। তবে আমাদের পরিকল্পনা আরও বড় ছিল। আর্থিক সংকটের কারণে যা পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। আমরা প্রত্যাশা করি আগামীতে সকলের সহযোগিতায় আরও বেশি সংখ্যক পরিবারের পাশে থাকতে পারবো।’

সংগঠনের সভাপতি আবু বকর সিদ্দিক হিরা বলেন, ‘বাজারে মাংসের দাম ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি বিক্রি হয়। যা সমাজের নি¤œ আয়ের মানুষের পক্ষে কেনা সম্ভব নয়। তাই আমরা তাদের সাথে ইদ আনন্দ ভাগ করে নিতে এমন ব্যতিক্রমী আয়োজন করেছি। ইদের দিন আয়োজন করার মূল লক্ষ্য ছিল, বিত্তবানদের মতো তারা যেন ইদের দিন বাজার থেকে মাংস কেনার অনুভূতি লাভ করেন। তাদের মুখে তৃপ্তির হাসি দেখে এরকম আয়োজন করতে আমাদের আরও উৎসাহ যোগায়।’

এই বিভাগের আরও খবর


ফেসবুকে আমরা