March 29, 2024, 12:26 am

বঙ্গবন্ধুর মতো নেতা এদেশে আর জন্মায়নি একজনও

মীর আব্দুল আলীম:”বাঘা বাঘা নেতা আছে
ইতিহাসে কত,
বিশ্ব জুড়ে মুজিবের মতো নেতা
খুঁজে পাবেনা আর একটাও..”
সেদিন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে এ গানটি গাইছলেন কন্ঠশিল্পী পলাশ লোহ।
সবার হৃদয় ছুঁয়েছে এ গান। সত্যিই বিশ^ ইতিহাসে আমরা অনেক নেতার কথাই জানি
কিন্তু, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশে^ একজনই। তিনি কেবল
শুণ্য হাতে বাঙ্গালি জাতিকে “বাংলাদেশ” উপহার দেননি; বাঙালিকে করেছেন
অসীম সাহসী। সেই সাহস আজ কাজে লাগিয়ে বাঙ্গালী জাতি তলাবিহীন ঝুড়ির খ্যাত
বাংলাদেশকে উচ্চতায় তুলে এনে সারা বিশ^বাসীকে তাক্ লাগিয়ে দিয়েছে। দেশীয়
এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র, বিশ^ ব্যাংকের ছুঁড়ে ফেলা পদ্মা সেতুকে পদ্মা
নদীর উপর দাঁড় করিয়ে বাঙ্গালী প্রমাণ করেছে বাংলাদেশের সক্ষমতা আছে, অনেক
সাহস আছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দুঃসাহসীকতায়, দেশের মানুষের সহযোগিতা
এবং আংশ গ্রহনে পদ্মা সেতু হয়েই গেছে। বাংলাদেশে শিল্পউন্নয় হয়েছে।
বাংলাদেশের প্রকৌশলী, চিকিৎসক, শ্রমিক ভাইয়েরা বিশে^র বিভিন্ন দেশে
দক্ষাতা দেখিয়ে এদেশের জন্য ডলার উপার্যন করছে, সুনাম বইয়ে আনছে, দেশকে
সমৃদ্ধশালী করছে। ইতোমধ্যে দেশ গার্মেন্স শিল্পে এগিয়ে গেছে বহুদুর।
অস্ত্র আর অর্থহীন জাতিকে বঙ্গবন্ধু যুদ্ধে নামিয়ে দেশ স্বাধীন করেই থেমে
থাকেননি। শুণ্য থেকে দেশকে নানা পরিকল্পনায় এগিয়ে নেয়ার কাজটি যখন তিনি
করছিলেন ঠিক তখনই এ নিষ্ঠুর জাতির কলঙ্কিত কতক কুসন্তান ১৫ আগষ্ট এক রাতে
বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করে বাংলাদেশে অগ্রযাত্রা থমকে দিতে
চেয়েছিল। থমকে গেছেও দেশ। তলাবিহী ঝুড়ির খ্যাতাব পেয়েছে বাংলাদেশ। সেই
জায়গা থেকে সাহসী বাঙ্গালি আর জাতিরজনকের কন্যার দুর্ঃদান্ত সাহয়ে দেশ এক
উচ্চামাত্রায় এগিয়ে যায়।
শতবছর আগে ১৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মগ্রহন
করেন; তেজদীপ্ত এই মানুষটি গর্জে উঠেন ৭ মার্চ; সেই গর্জনেই অর্জন ১৬
ডিসেম্বর। পৃথিবীর বুকে নাম লেখালো স্বাধীন বাংলাদেশ। একজন সাহসী
বঙ্গবন্ধু; একটাই বাংলাদেশ। তাঁর মেধা, প্রঞ্জা, সততা, সাহস সর্ব্বপরি
দেশ প্রেমেই বাংলাদেশের জন্ম হলো। যিনি দেশটা উপহার দিলেন সেই
বঙ্গবন্ধুকে কি করে ভুলে বাঙ্গালী। বাঙ্গালী শ্রদ্ধাভরে স্বরণ করছে
তাঁকে। তিনি ভালোবেসেছিলেন বাঙালি জাতিকে। বীর হতে চাননি যিনি; ভয় পাননি
শহীদ হতে। রক্ত দিয়ে যিনি দেশবাসীর ভালোবাসার ঋণ পরিশোধ করতে প্রস্তুত
ছিলেন সর্বদা, তাঁকে কী করে স্বরণ না করে বাঙ্গালী?
বঙ্গবন্ধু ক্ষমতাকে ভালোবাসেননি, হৃদয় দিয়ে দেশকে ভালো বেসেছেন, দেশের
মানুষকে ভালোবেসেছেন। অর্থ লোভ তাঁকে ছোঁয়নি কখনো। দেশের ভালোবাসার কাছে
তাঁর কাছে অর্থ ছিলো তুচ্ছ। এমন মানুষ কি আর জন্মাবে কখনো এদেশে?
বঙ্গবন্ধু হয়ে আর আসবেন না কখনো কেউ। এক বঙ্গবন্ধ,ু এক বঙ্গবন্ধুর
বাংলাদেশ। তাঁর মতো করে কেউ বাংলাকে আর ভালোবাসবে না; বাঙ্গালিক তাঁর মতো
করে কেউ আর আগলে রাখবে না; সাহস যোগাবে না।
আমরা সত্যি অকৃতজ্ঞ জাতি। যিনি আমাদের দেশমাতৃকাকে উপহার দিলেন, এই তাকেই
কত না নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। জাতির জনকের বাসভবনে রক্তের বন্যা বইয়ে
দেয়া হলো সেদিন। শিশু রাসেলের কান্না আর আকুতিও ওদের হূদয় স্পর্শ করলো
না। শুধু তই নয়, হত্যাকারীরা তার কবর তিন মাস পর্যন্ত পাহারা দিয়েছে।
সেখানে কাউকে আসতে দেয়া হয়নি। এমনকি দীর্ঘদিন বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের
ছবি এদেশে নিষিদ্ধ ছিল। বঙ্গবন্ধুর কবর দেখতে না দেয়া, তার হত্যার ছবি
প্রকাশের নিষেধাজ্ঞার মূল কারণ ঘৃণ্য হন্তারক ওই সামরিক শাসকরা তাতে ভয়
পেত। তাদের ভয়টা ছিল এখানেই যে, তারা নিশ্চিত জানে জীবিত বঙ্গবন্ধুর চেয়ে
মৃত বঙ্গবন্ধু অনেক বেশি শক্তিশালী। তারা আরো জনে সে সময় এসব ছবি প্রকাশ
পেলে কোনো কিছুতেই বাঙালিকে দাবিয়ে রাখা যাবে না।
সেই ১৫ আগস্ট। সিঁড়িতে পড়ে আছে বাঙালি জাতির প্রাণপ্রিয় বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমানের রক্তমাখা নিথর লাশ। সিঁড়ি গড়িয়ে রক্ত চলে এসেছে বাহির
আঙ্গিনায়। মহান সেই নেুার রক্ত সোঁদা মাটিতে মিশে গেছে। তিনি তো শুধু এ
দেশের প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি ছিলেন না, ছিলেন না দলবিশেষের প্রধান।
দীর্ঘ দিবস, দীর্ঘ রজনী ঝড়-মেঘ ইতিহাসের পথে আমাদের যাত্রায় তিনি ছিলেন
সঙ্গী ও পথপ্রদর্শক। তাকে ভুলব কেমন করে? তাকে কি ভোলা যায় কখনো? তাই তো
ইতিহাসের এই মহানায়কের উদ্দেশে কবি লিখেছিলেন, “যতদিন রবে পদ্মা,
যমুনা/গৌরী, মেঘনা বহমান/ ততদিন রবে কীর্তি তোমার/ শেখ মুজিবুর রহমান”।
অবিসংবাদিত এই মানুষটির জীবন চলার পথ ছিল কণ্টকাকীর্ণ। পাকিস্তানের
সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তুলে ’৬০-এর দশক থেকেই
তিনি বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদের অগ্রনায়কে পরিণত হন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ লাখো
মানুষের উপস্থিতিতে ঢাকার তৎকালীন ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু
বজ্রদৃপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম।
এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনুার সংগ্রাম’। তারই বজ্র নির্ঘোষ ঘোষণায়
উদ্দীপ্ত, উজ্জীবিু জাতি স্বাধীনুার মূলমন্ত্র ধারণ করে ১৯৭১ সালের
মুক্তিযুদ্ধে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। অদম্য সাহস ও
অকুক্ত আত্মত্যাগ, সাংগঠনিক শক্তি নিজের বাঙালীসত্তার গভীর অনুরণন
উপলব্ধি করেছিলেন তিনি। কখনো স্বভাবের প্রেরণায়, কখনো সযতœ উৎসাহে তার
উন্মোচন ঘটিয়েছিলেন। দেশবাসীকেও তেমনি অনুপ্রাণিত করেছিলেন সেই সত্তার
জাগরণ ঘটাতে। দেশ ও মানুষের প্রতি ভালোবাসা থেকে এক মোহনীয় স্বপ্ন রচনা
করেছিলেন তিনি ধীরে ধীরে, সেই স্বপ্ন সফল করার আহবান জানিয়েছিলেন সকলের
প্রতি। কী বিপুল সাড়া তিনি পেয়েছিলেন, তার পরিচয় তো আমরা স্বচক্ষে
দেখেছি। ১৯৭১ সালে যেভাবে তিনি অসহযোগ আন্দোলন সংগঠিত করেছিলেন, তাতে
বিম্মিত হয়েছিল সারা বিশ্ব। ক্ষাত্র শক্তির সঙ্গে নৈতিক শক্তির দ্বন্দ্ব
পৃথিবীতে এই প্রথম সংঘটিত হয়নি। কিন্তুু বাংলাদেশের এই আন্দোলনের
মধ্যদিয়ে যে-ঐক্য যে-শৃঙ্খলা যে-দুর্জয় সংকল্পের পরিচয় পাওয়া গিয়েছিল তার
তুলনা হয় না। তারপর সেই ৭ই মাচের্র ভাষণ, এবারের সংগ্রাম মুক্তির
সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনুার সংগ্রাম। যে শুনেছে সে ভাষণ তারই
শরীরে বয়ে গেছে বিদ্যুৎপ্রবাহ। কী ছিল সে ভাষণে? কোনো অজ্ঞাত তথ্য নয়,
কোনো অপ্রত্যাশিত ঘোষণা নয়, ভাষার কোনো কারুকার্য নয়, বলবার কোনো
পরিশীলিত ভঙ্গি নয়। তাতে ছিল এ দেশের সর্বশ্রেণীর মানুষের অকথিত বাণীর
প্রকাশ, তাদের চেতনার নির্যাস, বক্তব্যের অবিসংবাদিত আন্তরিকতা।
বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে এই আন্তরিকতার বন্ধন গড়ে উঠেছিল বলেই তো
শত্রুদেশে বন্দী থাকা সত্ত্বেও মুক্তিযুদ্ধে তাঁর প্রেরণা ছিল সক্রিয়।
স্বাধীনুা লাভের জন্য যেমন দৃঢ় সংকল্পবব্ধ ছিল সকলে তেমনি প্রবল আকাঙক্ষা
ছিল তার নেুৃত্বে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ গড়ে তোলার। বন্দীদশা থেকে
মুক্তিলাভ করে দেশে প্রত্যার্বুন করেই তিনি বলেছিলেন যদি দেশবাসী খাবার
না পায়, যুবকরা চাকরি বা কাজ না পায়, তাহলে স্বাধীনুা ব্যর্থ হয়ে যাবে;
পূর্ণ হবে না। এই ছিল তাঁর স্বপ্নেরই অংশ। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের আগেই
তাকে স্বপরিবারে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়া হলো।
বঙ্গবন্ধু ছিলেন এই মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাা সংগ্রামের এক বিশাল প্রতীক
এবং নিরন্তর প্রেরণার উৎস। এইসব উপাদানের সমন্বয়েই বাংলাদেশের স্বাধীনতার
ইতিহাস এবং এই ইতিহাসে সবচেয়ে উজ্জ্বল এবং সর্বোচ্চ স্থানটি যে
বঙ্গবন্ধুর যুক্তিবাদী, বিচারশীল এবং ইতিহাসবোধসম্পন্ন সকল মানুষই এটা
স্বীকার করবেন। এ ব্যাপারে বিতর্কের কোনো অবকাশ নেই। কিন্তু তবুও কিছু
লোক অহেতুক বিকর্ক তুলেছেন। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা মহানায়ক
বঙ্গবন্ধুর হত্যা দিবসকে ‘জাতীয় শোক দিবস’ হিসেবে পালনের সরকারি
সিদ্ধান্তকে ক্ষমতার জোরে অন্যায়ভাবে বাতিলও করে দিয়েছেন। তাদের এই
সিদ্ধান্ত ছিল অদূরদর্শী, জাতীয় ঐকমত প্রতিষ্ঠার বিরোধী এবং ইতিহাসকে
অস্বীকার করার নামান্তর।
১৯৭১ সালে যেভাবে তিনি অসহযোগ আন্দোলন সংগঠিত করেছিলেন, তাতে বিস্মিত
হয়েছিল সারা বিশ্ব। ক্ষাত্রশক্তির সঙ্গে নৈতিক শক্তির দ্বন্দ্ব পৃথিবীতে
এই প্রথম সংঘটিত হয়নি। কিন্তু বাংলাদেশের এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যে
ঐক্য, যে শৃঙ্খলা, যে দুর্জয় সঙ্কল্পের পরিচয় পাওয়া গিয়েছিল তার তুলনা হয়
না। তারপর সেই ৭ মার্চের ভাষণ, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম। এবারের
সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। যে শুনেছে সে ভাষণে তারই শরীরে বয়ে গেছে
বিদ্যুৎপ্রবাহ। কী ছিল সে ভাষণে? কোনো অজ্ঞাত তথ্য নয়, কোনো অপ্রত্যাশিত
ঘোষণা নয়, ভাষার কোনো কারুকার্য নয়, বলবার কোনো পরিশীলিত ভঙ্গি নয়। তাতে
ছিল এ দেশের সর্বশ্রেণির মানুষের অকথিত বাণীর প্রকাশ, তাদের চেতনার
নির্যাস, বক্তব্যের অবিসংবাদিত আন্তরিকতা। বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে এই
আন্তরিকতার বন্ধন গড়ে উঠেছিল বলেই তো শত্রুদেশে বন্দি থাকা সত্ত্বেও
মুক্তিযুদ্ধে তার প্রেরণা ছিল সক্রিয়। স্বাধীনতা লাভের জন্য যেমন দৃঢ়
সঙ্কল্পবব্ধ ছিল সকলে, তেমনি প্রবল আকাক্সক্ষা ছিল তার নেতৃত্বে স্বাধীন
ও সার্বভৌম বাংলাদেশ গড়ে তোলার।
বিজয় এসেছে। বাঙালি জাতি পেয়েছে একটি স্বাধীন দেশ। বিশ্ব মানচিত্রে
বাংলাদেশ নামের একটি দেশ সগর্বে স্থান করে নিয়েছে। কিন্তু এই অর্জনের
নেপথ্যে যে মহান ব্যক্তিটির নিরঙ্কুশ অবদান তাকে ছাড়া কী এটি অর্থবহ হয়,
নাকি হতে পারে? তাই গোটা জাতি অধীর অপেক্ষায় ছিলেন কবে ফিরবেন অবিসংবাদিত
নেতা। কবে পূর্ণতা পাবে বাংলাদেশ নামের দেশটি স্বাধীনতার অর্জন। সব
অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে তিনি ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলার মাটিতে
পা রাখলেন। পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর
রহমান লন্ডন-দিল্লি হয়ে আজন্ম লালিত স্বপ্নের স্বাধীন বাংলাদেশের মাটি
স্পর্শ করেন পরম মমতায়। সেদিন স্বজনহারানো সর্বস্বান্ত মানুষ হৃদয় উজাড়
করে তাদের প্রাণপ্রিয় নেতাকে বরণ করে নিয়েছিল। নেতা ও জনতার আনন্দাশ্রু
মিলেমিশে এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা হয় যা স্মৃতির আকাশ থেকে কখনো
মুছবার নয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি নাম, একটি ইতিহাস। বাঙালির ইতিহাসে
শ্রেষ্ঠ সন্তান তিনি। তার জীবন ছিল সংগ্রামমুখর। সংগ্রামের মধ্যেই তিনি
বড় হয়েছিলেন। তার জন্ম তৎকালীন বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার
টুঙ্গীপাড়ায়। ছাত্র অবস্থায় তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। বায়ান্নর ভাষা
আন্দোলন, ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্টের সরকার গঠন, কপ, পিডিপির আন্দোলনে
বঙ্গবন্ধু সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনুা
সংগ্রামে মহানায়ক হিসেবে ’৭০-এর নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনি আওয়ামী লীগকে
এদেশের গণমানুষের আশা-আকাঙ্খার প্রতীকে পরিণত করেন। অবিসংবাদিত এই নেতার
জীবন চলার পথ ছিল কণ্টকাকীর্ণ। পাকিস্তানের সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে
গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তুলে ’৬০-এর দশক থেকেই তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদের
অগ্রনায়কে পরিণত হন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ লাখো মানুষের উপস্থিতিতে ঢাকার
তৎকালীন ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু বজ কণ্ঠে ঘোষণা করেছিলেন,
‘এবারের সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনুার সংগ্রাম’।
তারই ঘোষণায় উদ্দীপ্ত, উজ্জীবিত জাঁতি স্বাধীনতার মূলমন্ত্র ধারণ করে
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। অদম্য
সাহস ও অকুতোভয় আত্মত্যাগ, সাংগঠনিক শক্তি নিজের বাঙালি সত্তার গভীর
অনুরণন উপলব্ধি করেছিলেন তিনি। দেশবাসীকেও তেমনি অনুপ্রাণিত করেছিলেন সেই
সত্তার জাগরণ ঘটাতে। দেশ ও মানুষের প্রতি ভালোবাসা থেকে এক মোহনীয় স্বপ্ন
রচনা করেছিলেন তিনি ধীরে ধীরে, সেই স্বপ্ন সফল করার আহ্বান জানিয়েছিলেন
সকলের প্রতি। কী বিপুল সাড়া তিনি পেয়েছিলেন, তার পরিচয় তো আমরা স্বচক্ষে
দেখেছি। এই বাংলাদেশ; বিশ^বাসীর সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো আজকের
বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশ। উন্নয়নের রোল মডেল। বন্দিদশা থেকে
মুক্তিলাভ করে দেশে প্রত্যার্বুন করেই তিনি বলেছিলেন, ‘যদি দেশবাসী খাবার
না পায়, যুবকরা চাকরি বা কাজ না পায়, তাহলে স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যাবে,
স্বাধীনতা পূর্ণ হবে না’। এই ছিল তার স্বপ্নেরই অংশ। সেই স্বপ্ন
বাস্তবায়নের আগেই তাকে সপরিবারে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়া হলো। বঙ্গবন্ধুকে
হারিয়ে অসহায় হয়ে পরে স্বপ্ন দেখা বাংলার মানুষ গুলো। তিনি চলে গেলেন। আর
ফির এলেন না। আফসোস, এমন একটা নেতা এদেশে আর জন্মায়নি একটিও। তাঁর মতো
করে বাংলাকে আর ভালোবাসবেনি কেউ, দেশের মানুষকে আগলে রাখেনি কেউ। হে মহান
নেতা ভালো থাকুন, স্বর্গীয়সুখে থাকুন। হাজারো সালাম আপনাকে।
৥ লেখক- মীর আব্দুল আলীম, সাংবাদিক, সমাজ গবেষক ও কলামিস্ট।

এই বিভাগের আরও খবর


ফেসবুকে আমরা