April 16, 2024, 4:11 pm

ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু পাড়ি দিতে টোল দিতে হয় চার জায়গায়! পদ্মা ছাড়া বাকি সেতুর টোল মওকুফ পের দাবি পরিবহন মালিক ও যাত্রীদের।

ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু পাড়ি দিতে পৃথক চার জায়গায় যানবাহনকে টোল দিতে হচ্ছে। মেয়র মোহাম্মদ হানিফ উড়ালসড়ক, বুড়িগঙ্গা প্রথম সেতু, ধলেশ্বরী সেতু ও পদ্মা সেতুতে এই টোল দিতে হচ্ছে। এর মধ্যে পদ্মা সেতুতে টোলের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি।

মেয়র মোহাম্মদ হানিফ উড়ালসড়কের ধোলাইপাড় থেকে মুন্সিগঞ্জের মাওয়ার দূরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার। এই পথে চারটি পৃথক স্থানে টোল দেওয়া নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন চালক এবং যাত্রীরা। তাদের অভিযোগ, ঢাকা থেকে বাবুবাজার হয়ে বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতু দিয়ে আসতে টোল লাগে না। কিন্তু পোস্তগোলায় বুড়িগঙ্গা প্রথম সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচলে টোল দিতে হচ্ছে। ১৫ কিলোমিটার দূরেই আবার ধলেশ্বরীতে টোল লাগে। এই টোলের চাপ যাত্রীদের ওপর গিয়ে পড়ে। তাই বুড়িগঙ্গা প্রথম সেতু এবং ধলেশ্বরী সেতুর টোল বাতিলের দাবি জানান এই রুটে চলাচলকারীরা।

মেয়র মোহাম্মদ হানিফ উড়ালসড়ক ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নিজস্ব সম্পত্তি বা আওতাধীন। এই উড়ালসড়ক থেকে টোল আদায় করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ওরিয়ন গ্রুপ। আর সেতু বিভাগ বুড়িগঙ্গা প্রথম সেতু, ধলেশ্বরী সেতু ও পদ্মা সেতু থেকে ইজারাদারের মাধ্যমে টোল আদায় করে।

সেতু বিভাগ সংশ্লিষ্টরা জানান, বুড়িগঙ্গা প্রথম সেতুর টোল বাতিল করার কাজ চলছে। ধলেশ্বরী সেতুর টোল আদায়ে যে ইজারাদার প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তাদের মেয়াদ শেষ পর্যায়ে। কিছুদিনের মধ্যে এই সেতুর টোল নেওয়া বন্ধ হবে। তখন ধলেশ্বরী টোলপ্লাজায় এক্সপ্রেসওয়ের টোল নেওয়া হবে।

ঢাকা থেকে যাত্রার প্রথমেই মেয়র হানিফ উড়ালসড়কে ৮৫ টাকা টোল দিতে হয়। এ ছাড়া এই উড়ালসড়কে মোটরসাইকেল ১০ টাকা, সিএনজি ১৮ টাকা, ব্যক্তিগত গাড়ি ৭০ টাকা, মাইক্রোবাস ৮৫ টাকা, পিকআপ ১৩০ টাকা, মিনিবাস ১৭৩ টাকা, বাস ২৬০ টাকা, ট্রাক (চার চাকা) ১৭৩ টাকা, ট্রাক (ছয় চাকা) ২৬০ টাকা এবং ট্রেইলারের জন্য ৩৪৫ টাকা টোল দিতে হয়।

এই উড়ালসড়ক থেকে নেমে দুই মিনিটের দূরত্বে বুড়িগঙ্গা প্রথম সেতু। এখানে মাইক্রোবাসের টোল ৭৫ টাকা। সরেজমিনে দেখা যায়, এই সেতুতে যাতায়াত করা প্রতিটি যানবাহন থেকে টোল আদায় করছেন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা। তাদের প্রায় প্রত্যেকের হাতেই লাঠিসোঁটা রয়েছে। কোনো যানবাহন টোল না দিয়ে যেতে চাইলে গাড়িতে লাঠি দিয়ে আঘাত করা হচ্ছে। এতে সেতুতে গাড়ির জটলা তৈরি হচ্ছে। সেতুতে মাত্র একটি কাউন্টার রয়েছে। এই কাউন্টারের পাশে টানানো বোর্ডে লেখা- ট্রেইলার ৭৫০ টাকা, হেভি ট্রাক ২৪০, মিডিয়াম ট্রাক ১৬০, মিনি ট্রাক ১০০, বড় বাস ৩৫, কৃষি কাজে ব্যবহৃত পাওয়ার টিলার ২০, মিনিবাস কোস্টার ২৫, মাইক্রোবাস ৭৫, পিকআপ ৭৫, সিএনজি ২৫ এবং মোটরসাইকেল ১৫ টাকা।

ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মাহিন এন্টারপ্রাইজের তত্ত্বাবধায়ক আমিনুল গাজী জানান, আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত তাদের টোল আদায় করার অনুমতি আছে। এরপর এখান থেকে আর টোল নেওয়া হবে কি না, সে সিদ্ধান্ত নেবে সেতু বিভাগ।

বুড়িগঙ্গা প্রথম সেতু থেকে ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার এগিয়ে গেলেই ধলেশ্বরী টোলপ্লাজা। এখানে মাইক্রোবাসের টোল ৭৫ টাকা। টোল প্লাজায় টোলের তালিকায় দেখা যায়, এই সেতু পার হতে ভারী ট্রাক ২৪০ টাকা, বড় বাস ১৬০, মিনিবাস ৯৫, মাইক্রোবাস ৭৫, ব্যক্তিগত গাড়ি ৪০, সিএনজি ২৫, দশ চাকার ট্রেইলার ৫৬৫, মিডিয়াম ট্রাক ২২৫ এবং ছোট ট্রাক ১৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

ধলেশ্বরীতে টোল আদায় করে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ইউডিসি কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। এই প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প ব্যবস্থাপক নূর হোসেন জানান, কার্যাদেশ অনুযায়ী আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত টোল আদায়ের সময়সীমা রয়েছে। এরপর এখান থেকে কোরিয়ান একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে টোল আদায় করা হবে।

এখান থেকে আবার প্রায় ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণে নবনির্মিত পদ্মা সেতুর টোল প্লাজা। এখানে মাইক্রোবাসের টোল দিতে হয় এক হাজার ৩০০ টাকা। একইভাবে টোল দিয়ে অন্যান্য যানবাহনকে চলাচল করতে দেখা গেছে।

এই টোল প্লাজা সূত্র জানায়, পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেলে ১০০ টাকা, কার বা জিপে ৭৫০ টাকা, পিকআপ ভ্যানে এক হাজার ২০০ টাকা, মাইক্রোবাসে এক হাজার ৩০০ টাকা, ছোট বাসে (৩১ আসন বা এর কম) এক হাজার ৪০০ টাকা, মাঝারি বাসে (৩২ আসন বা এর বেশি) দুই হাজার টাকা, বড় বাসে (৩ এক্সেল) দুই হাজার ৪০০ টাকা টোল নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ ছাড়া ছোট ট্রাকে (৫ টন পর্যন্ত) এক হাজার ৬০০ টাকা, মাঝারি ট্রাকে (৫ টনের বেশি থেকে ৮ টন) দুই হাজার ১০০ টাকা, মাঝারি ট্রাক (৮ টনের বেশি থেকে ১১ টন পর্যন্ত) দুই হাজার ৮০০ টাকা, ট্রাক (৩ এক্সেল পর্যন্ত) পাঁচ হাজার ৫০০ টাকা, ট্রেইলার (৪ এক্সেল পর্যন্ত) ছয় হাজার টাকা এবং ট্রেইলার (৪ এক্সেলের বেশি) ছয় হাজারের সঙ্গে প্রতি এক্সেলে এক হাজার ৫০০ টাকা করে যোগ করে টোল দিতে হচ্ছে।

ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে ঢাকা থেকে শরীয়তপুরের জাজিরা যাচ্ছিলেন মোক্তার হোসেন। পদ্মা সেতু টোল প্লাজা এলাকায় তিনি বলেন, অল্প দূরত্বে পথে পৃথক চারটি জায়গায় টোল দেওয়া নিয়ে আমি বিরক্ত। পদ্মা সেতু ছাড়া বাকি সব টোল বাতিল করার দাবি জানান তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর


ফেসবুকে আমরা